মাত্র দুই বছরে ২৩ স্বামীর শয্য সঙ্গী!

পরহেজগারদের জন্য বোরকা পরা উদারপন্থি যুবকের জন্য স্কিন টাইট তরুণী ও বয়স্ক পাত্রের জন্য ডিভোর্সি মহিলা। সব বয়সী ও সব পেশার লোকজনের জন্যই কনে আছে তাদের কাছে। আরও আছে লন্ডন, আমেরিকা, কানাডা ও সুইডেন প্রবাসী অপূর্ব সব সুন্দরী। তাদের যেমনি রূপ, তেমনি যোগ্যতা। অভাব নেই চাকরি, গাড়ি ও বাড়ির। চাইলে বিদেশ পাড়ি দিতে পারেন সহজেই। জয় করতে পারেন রাজ্যসহ রাজকন্যা। 
এমন লোভনীয় ও চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে যারাই গেছেন তাদের আস্তানায়, তারা ফিরেছেন নিঃস্ব হয়ে। সমপ্রতি প্রতারিত এক যুবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব এ প্রতারক চক্র শনাক্তে তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে র‌্যাব-১ এর একটি টিম রাজধানীর উত্তরা (পশ্চিম) থানাধীন ৫ নম্বর সেক্টরের ৫/এ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভুয়া ম্যারেজ মিডিয়া সিন্ডিকেটের চার ভুয়া পাত্রীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। 

প্রতারক পাত্রীরা হচ্ছে- পারুল আক্তার (৩০), শামসুন্নাহার (২৫), নাজমা বেগম (৩৬) ও হেনা আক্তার (৩৩)। সহযোগীরা হচ্ছে হাফিজুর রহমান (৪০), মহিউদ্দিন খান ওরফে মাসুদ (৫০), মানিক মিয়া (৩২) ও কিবরিয়া (৪২)। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে হেনা জানায়, সে প্রতি মাসেই নতুন নতুন ক্লায়েন্টের বউ সাজে। পাত্র ধনাঢ্য হলে স্ত্রী হিসেবে রাত কাটায়। চাহিদামাফিক নগদ টাকা হাতে আসলেই হারিয়ে যায়।

 এভাবে গত দুই বছরে ২৩ জনের বউ হয়েছে। প্রত্যেক স্বামীর কাছ থেকেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার আসল স্বামীর নাম খোকন মিয়া। বাড়ি পটুয়াখালী জেলার সদর থানার কাঠপট্টি গ্রামে। র‌্যাবের তদন্ত সূত্রমতে, বিজ্ঞাপন দেখে কোন পাত্র যোগাযোগ করলে প্রথমেই জেনে নেয়, তার পেশা। বেকার হলে চাকরি খুঁজছে কিনা। প্রবাসী পাত্রী বিয়ে করে বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে কিনা। এমন প্রস্তাবে পাত্র দিশাহারা হয়ে পড়েন। বিয়ে করে বাইরে যেতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে রাজি হন। 

প্রতারক চক্র তার পছন্দ মতো কনে সাজায়। বিয়ের খরচ, শাড়ি, স্বর্ণালঙ্কার, পাসপোর্ট, ভিসা ও এয়ার টিকিট বাবদ ৪-৫ লাখ টাকা নগদ নিয়ে নেয়। এরপর আয়োজন করে ভুয়া বিয়ের। কেউ মেয়ের চাচা, কেউ মেয়ের পিতা সাজে। আবার কেউ কাজী সেজে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। কিন্তু এক বা দুই দিনের মাথায় লাপাত্তা হয়ে যায় প্রবাসী স্ত্রী। স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কল করে বন্ধ পান স্বামী। বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। 

র‌্যাব জানায়, ৩০ বছর বয়সী পারুল আক্তার। তার আসল স্বামী রুমি মিয়া। বাড়ি মাদারীপুর জেলার সদর থানার নতুন বাজারে। স্বামীকে ছেড়ে ভুয়া পাত্রী সেজে বসে থাকে। কখনও ডেইজি, কখনও পরী ছদ্মনামে পাত্রের বিয়ের আসরে বউ সাজে। একইভাবে নরসিংদী জেলার রায়পুর থানার আবদুল্লাহপুর গ্রামের বিবাহিত শামসুন্নাহার (২৫) কুমারীর ছদ্মবেশে তরুণ পাত্রের মনোযোগ আকর্ষণ করে। পাত্রের কাছ থেকে বিয়ের খরচ নিয়ে রাত যাপনের আগেই সটকে পড়ে। গত চার মাসে অন্ততপক্ষে তিন পাত্রকে ঠকিয়েছে সে। তার আসল স্বামীর নাম মানিক মিয়া। 

দাড়িওয়ালা হুজুরদের জন্য বোরকা পরে বসে থাকে পর্দানশীল নাজমা বেগম। কোরআন-হাদিসের দোহাই দিয়ে বারণ করেন রূপ দর্শন। হুজুর পাত্র পটে গেলে বিয়ে পড়ান কাজী। রাত যাপনের আগেই মোহরানা পরিশোধের তাগিদ দিয়ে হাতিয়ে নেয় নগদ টাকা। এরপর কৌশলে লাপাত্তা হয় নাজমা। সূত্র জানায়, তার আসল স্বামী কিবরিয়া। বাড়ি নওগাঁ জেলার পত্নীতলা এলাকায়। র‌্যাব-১ এর এএসপি মোর্শেদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে আমেরিকান পাসপোর্টের ফটোকপি, ৩টি ভ্যানিটি ব্যাগ (যার ভিতরে বউ সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ), ১৩টি মোবাইল ফোন সেট ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব আরও জানায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও মানুষের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। দেশে আইনের শাসন বজায় রাখা, অপরাধী ও প্রতারকদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত তিন বছরে অন্ততপক্ষে ১০টি ‘ম্যারেজ মিডিয়া’ নামধারী প্রতারক সিন্ডিকেট শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। পাকড়াও করেছে শতাধিক প্রতারক নারী ও পুরুষ সদস্যদের। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের ব্যবসাকে পুঁজি করে বিভিন্ন পত্রিকায় পাত্র-পাত্রী চাই- মর্মে চটকদারী বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তারা। তাদের এ প্রতারণার ফাঁদে পড়ে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা আর্থিক ও সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ‘বিবাহ’র মতো পবিত্র সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধনকে পুঁজি করে রাজধানীতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসংখ্য প্রতারক চক্র।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!