কনট্রাসেপশন আর বার্থ কন্ট্রোল নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দীপান্বিতা হাজারি
প্রথমে ওরাল পিল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন-উত্তর
পিল খেলে শোনা যায় ক্যানসার হবার সম্ভাবনা বাড়ে? সত্যি?
পিল খাওয়ার সঙ্গে জরায়ু বা স্তনের
ক্যানসারের প্রত্যক্ষ কোনও সম্বন্ধ নেই | প্রোজেস্তেরোন হরমোন আসলে
ক্যানসার রোধ কর্তেই সাহায্য করে | এ পর্যন্ত গর্ভনিরোধক পিলের হরমোন মানুষ
বা অন্য কোনও প্রাণীর ক্যানসার সৃষ্টি করে এমন প্রমাণ মেলেনি |
পিল খেলে লিভারের নাকি দফারফা?
হাজারে একটি ক্ষেত্রে লিভারের বিভিন্ন
এনজাইমের পরিবর্তন হয়ে পিত্ত নিঃসরণ ব্যাহত হলেও হতে পারে | প্রায়
ক্ষেত্রেই এই ঝুঁকি নেই, আর ডাক্তারকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিলে আর কোনও
অসুবিধা নেই |
ডায়াবিটিস থাকলে পিল নেওয়া যায়?
সাধারণভাবে ডায়াবিটিস যদি মহিলার থাকে তাহলে পিল বাদে অন্য উপায় অবলম্বন করতে বলা হয় |
পিল খেলে কি সন্তানসম্ভাবনা হ্রাস পায়?
না | পিল বন্ধ করার কয়েক মাসের মধ্যেই আবার গর্ভসঞ্চার হয় |
পিল খেলে কি পিরিয়ডের গণ্ডগোল হতে পারে?
পিল খেতে ভুল হয়ে গেলে ঋতুচক্রের মাঝখানে
আবার ব্লিডিং শুরু হয়ে যেতে পারে | সেরকম হলে পিলের ডোজ বাড়িয়ে যেদিন ভুল
হয়ে গেছে তার পরের দিন একসঙ্গে দু”টি বড়ি খাবার নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয় | আর
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অবশ্য কর্তব্য |
অন্যান্য জিজ্ঞাস্য
কপার-টি পরলে কি ব্লিডিং বেশি হয়?
খুব কম ক্ষেত্রে হতে পারে, সেক্ষেত্রে ডাক্তার দেখিয়ে নিলেই সমাধান হয়ে যাবে |
লাইগেশান করানোর পর অনেক মহিলা নাকে মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েন? সত্যি?
দম্পতির শারীরিক ও মানসিক অবস্থা যাচাই
করে তাঁদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তবেই অপারেশন করা হয় — কাজেই
অপারেশনের পর মনের রোগের প্রশ্নই ওঠে না | তবে হ্যাঁ, দু”টি সন্তানই যদি
অসুস্থ হয়ে পড়ে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি সাংঘাতিক অশান্তি হয়, বিধবা বা
ডিভোর্সি মহিলার পুনর্বার বিবাহের সম্ভাবনা হলে তবেই মনের ওপর চাপ পড়তে
পারে |
বিয়ের পরে পরেই যদি প্রেগন্যান্সি হয়ে যায়, প্রথম বাচ্চা কি নষ্ট করা উচিত?
সাধারণভাবে প্রথম বাচ্চা নষ্ট না করার
পরামর্শ ডাক্তারমাত্রেই দিয়ে থাকেন | প্রথম গর্ভাবস্থায় ইউটেরাস বা জরায়ুর
মুখ এত নরম ও সরু থাকে যে, যন্ত্রপাতি দিয়ে তা প্রসারিত করার সময় জরায়ু মুখ
বা জরায়ুর পশি ছিঁড়ে গিয়ে রক্তস্রাব, প্রদাহ হতে পারে | স্বামী বললেও
মেয়েদের বাবা মা বা অন্য সিনিয়র অভিভাবকদের না জানিয়ে কখনই এই সময়ে
গর্ভমোচনে রাজি হওয়া উচিত নয় | এছাড়া কোনওভাবে ফ্যালোপাইন টিউবে সংক্রমণ
হলে পরে টিউব ব্লক হয়ে ভবিষ্যতে সন্তান নাও হতে পারে |
তবে অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে সবদিক
বিবেচনা করে গর্ভমোচন করতেই হবে | আর তা অবশ্যই উপযুক্ত শিক্ষিত ডাক্তারের
কাছে | হাতুড়ে বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয় এমন ডাক্তারের কাছে গেলে ফুল বা
ভ্রূণের অংশ জরায়ুর মধ্যে থেকে যেতে পারে, জরায়ুর মুখ ছিঁড়ে যেতে
পারে, জীবাণুর আক্রমণ বা সেপটিক হয়ে পেরিটোনাইটিস হতে পারে,আভ্যন্তরীণ
রক্তস্রাবের কারণে মায়ের কোলাপস ও শক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে | দেশ
পাড়াগাঁয়ে আজ এই অত্যাধুনিক যুগেও অনেক মেয়ে গুণিন বা ওই জাতীয় পেশার
লোকেদের কাছে (জরায়ুতে শিকড় বা কাঠি ঢুকিয়ে গর্ভমোচনের চেষ্টা) গিয়ে শেষে
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে |
স্থায়ী গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা পুরুষের নির্বীজন বা ভাসেকটমি কাকে বলে ভাসেকটমি?
ভাসডেফারেন্স বা শুক্রনালি কেটে দিয়ে শুক্রাণুর বহির্গমনের পথ বন্ধ করাকে ভাসেকটমি অপারেশন বলে |
এই অপারেশনে কি কাজের ক্ষমতা বা দৈহিক ক্ষমতা হ্রাস পায়?
না, একেবারেই না |
হাসপাতালে কতদিন থাকতে হবে? এতে কি পুরো অজ্ঞান করতে হয়?
লোকাল অ্যানাসথেসিয়াতেই করা যায়্ | এটি আউটডোর বা ডে পদ্ধতি | রোগী সেদিনই বাড়ি যেতে পারে |
কতদিন পর থেকে স্বাভাবিক জীবন শুরু করা যায়?
৫-৭ দিন অল্প ব্যথা, তারপর স্বাভাবিক জীবন
শুরু করতে কোনও বাধা নেই | আর স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনও এক সপ্তাহ পরেই
সম্ভব, কেবলমাত্র প্রথম তিনমাস কন্ডোম ব্যবহার করতে বলা হয়, তারপর সিমেন
পরীক্ষায় যখন আর একটি স্পার্মাটোজোয়া বা শুক্রাণু থাকবে না, তখন থেকে
একেবারে মুক্ত জীবন |
কেন পুরুষরা এগিয়ে আসে না, মেয়েরাই শুধু হয় বলির পাঁঠা?
আমাদের সমাজ এখনও পুরুষশাসিত | এখানে
নারীর ইচ্ছার চেয়ে পুরুষের ইচ্ছার দাম অনেক বেশি | আর আছে কিছু ভ্রান্ত
মান্ধাতা আমলের ধারণা — ভাসেকটমি করালে পৌরুষ হানি, কাজের ক্ষমতা
হ্রাস!!!সেইজন্য ডাক্তারদের প্র্যাক্টিসে দেখা যায় মেয়েদের লাইগেশানের হার
পুরুষদের ভাসেকটমির থেকে এতগুণ বেশি যে কোনও তুলনাতেই আসে না |
কোনটা বেশি সহজ, লাইগেশন না ভাসেকটমি?
অবশ্যই ভাসেকটমি | জটিলতার আশঙ্কা
ভাসেকটমিতে অনেক কম, খরচ অনেক কম, রোগী অনেক তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যা | আসল
দরকার সচেতনতা, motivation | আমাদের দেশের তথাকথিত আলোকপ্রাপ্ত লোকেদেরও
অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর হতে কতদিন যে লাগবে!! বিদেশের কথা বলতে গেলে বলতে হয়
সেখানে ভাসেকটমির সংখ্যা লাইগেশানের থেকে বেশি, সেখানেও নারীর ইচ্ছার
মর্যাদা আছে |
ডাঃ দীপান্বিতা হাজারি
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
সুপারিনটেনডেন্ট, কলকাতা পুরসভা হাসপাতাল
ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট – ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া
মুখ্য উপদেষ্টা — দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি (সোনাগাছি)
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
সুপারিনটেনডেন্ট, কলকাতা পুরসভা হাসপাতাল
ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট – ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া
মুখ্য উপদেষ্টা — দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি (সোনাগাছি)
0 comments:
Post a Comment