ভাড়ায় প্রেম চলছে
রাজধানীতে। ক্যাটরিনা, মল্লিকা, বিপাশারা অপেক্ষায় থাকে ভাড়াটে প্রেমিকদের
জন্য। ঘণ্টা চুক্তিতে চলে তাদের প্রেম। ৫০ টাকায় গল্প করা, ১০০ টাকায় হাত
ধরা ও চুমুতে ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। টাকার পরিমাণ বাড়লে মিলবে
অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগও।
রাজধানীর রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জুড়ে
এমন প্রেমিকারা অপেক্ষায় থাকে প্রেমিকের জন্য। মিলে গেলেই কোন গাছের
ফাঁকে, কিংবা আড়ালে প্রেমিক-জুটির চলে আড্ডা। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে
পুলিশ, নিরাপত্তাকর্মী। ভাড়াটে প্রেমিক যুগল পার্কের প্রতিটি সিট দখল করে
বসে থাকে। তারা আশপাশের লোকজনকেও তোয়াক্কা করে না। ঠিক থাকে না তাদের পোশাক
পরিচ্ছদ। পার্কগুলো আরও বিব্রত কর হয়ে ওঠে। উদ্যানের ঘাস তখন তাদের
বিছানায় রূপ নেয়।
তাদের দেখাদেখি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়
পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও মেতে ওঠে উদ্দামতায়। ভাড়াটে প্রেমিকারা চলার পথে এক
পলকেই যুবকদের টার্গেট করে। কাছে এসে নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করে। পরক্ষণেই বলে
ওঠে, বসবেন নাকি ? কতক্ষণ ? টার্গেট করা যুবকের সম্মতি পেলে কম দামেই তারা
বসে পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে রেট বাড়াতে থাকে। সূত্র জানায়, এরা সকাল থেকে রাত
পর্যন্ত শিফট হিসেবে সময় দেয় উদ্যানে। যারা সকালে বা দিনে থাকে তারা রাতে
আসে না। বৃহস্পাতবার দুপুর ১২টা। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন গেটের
ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে সারি সারি প্রেমিক যুগল বসে আছে। এদের মধ্যে স্কুলের
ইউনিফর্ম পরা কমপক্ষে ৩০টি জুটি দেখা গেছে। এদের বেশির ভাগই স্কুল ফাঁকি
দিয়ে এসেছে।
আর অন্যরা বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও
ভাড়াটে বিনোদিনী। ভাড়াটে প্রেমিকা ক্যাটরিনা কাইফ বলেন, একজন ব্যবসায়ীর
সঙ্গে দেড় ঘণ্টা উষ্ণ প্রেম নিবেদন করে তার ১৮০ টাকা কামাই হয়েছে।
ক্যাটরিনা জানায়, তার মতো আরও অনেক সুন্দরী এ পেশার সঙ্গে জড়িত।
এমন একজনের নাম মল্লিকা। তিনি বলেন, আমরা
প্রেম ভাড়া দিই। অন্যের দুঃখকে আনন্দে ভরিয়ে দিই। এ কাজ এত্ত সহজ নয়। তাই
কাজ বুঝে ভাড়াও নির্ধারণ করা আছে আমাদের। তপু নামের একজন মেডিকেল
রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় এ রাস্তায় বাসায় ফিরি।
প্রতিদিনই দেখি এদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পার্কে
বিনোদিনীদের নিরাপত্তায় সহায়তা করে নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ। এজন্য তারা
নির্ধারিত কমিশন পায়। এমন বিনোদন দানকারীদের কাছ থেকে রমনা ও শাহবাগ থানা
পুলিশ নিয়মিত মাসোহারা নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিনোদিনীরাই বলেছে, মাসোহারা নেয়ার সময়
অনেক পুলিশ সদস্যরাও উষ্ণ বিনোদনও গ্রহণ করে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে
থাকা রমনা কালীমন্দির সংলগ্ন পুকুরের দক্ষিণপাড় ঘেঁষে বৃহস্পতিবার দুপুর
১২টা থেকে বসেছিল এক জুটি। পার্কে থেকেই চকলেট বিক্রি করেন এমন একজন
মধ্যবয়সী মহিলা বলেন, ওই মাইয়াডা প্রায় দিনই এদিকে আইয়া বন্ধুর লগে আড্ডা
দেয়।
মেয়েডা বালো না। একেক দিন একেক পোলা লইয়া
আইয়ে। দ্যাকতে সুন্দরী। ওর নাম কইছে বিপাশা। যেয় যেইডা খোঁজে হেয় হেইডা
পায়। তয় দিনে কম, রাইতে বেশি। রমনা পার্কে সবসময় পানি বিক্রি করে রতন। তার
কাছে জানতে চাইলে বলে, ইডা আর নতুন কি। যার ডারলিং নাই, হে ডারলিং ভাড়া
নেয়। ভাড়াটে বিনোদিনী ও ইউনিফর্ম পরা স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের
ঘোরাঘুরির নামে আপত্তিকর আচরণে চরম বিব্রত হন পার্কে আসা স্বাস্থ্যসচেতন
ব্যক্তিরা।
সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
তায়েজুল হাসান সস্ত্রীক পার্কে এসেছেন ভ্রমণে। তিনি বলেন, পার্কের ভেতরের
যা অবস্থা তাতে এখানে আসাই বিপদ। এমন কোন রাস্তা নেই যেখানে আপত্তিকর
অবস্থায় কোন যুবক যুবতী বসে নেই। লজ্জায় ১০ হাত জায়গার মধ্যেই হাঁটাহাঁটি
করে ঘরে ফিরতে হয়।
প্রশাসন এসব বিষয় মাথায়ই আনে না। রমনা
পার্কের উত্তর গেটে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী হানিফ মিয়া জানান, বাইরে থেকে
কেউ কাউকে নিয়ে এসে ঘোরাঘুরি করলে তো আমাদের করার কিছু নেই। এটা তো ঘুরে
বেড়ানোরই জায়গা।
রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
রফিকুল ইসলাম বলেন, এমন বিষয় সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। পার্কের ২৪ ঘণ্টার
নিরাপত্তায় ২০ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। ভাড়াটে প্রেমিক কিংবা
বিনোদিনীদের থাকার সুযোগ নেই। আর পুলিশ মসোহারা নেয় এমন অভিযোগও ঠিক নয়।
0 comments:
Post a Comment