চুম্বনের অন্তরালে রয়েছে যে ৩টি তত্ত্ব!




সকল সংস্কৃতির মানুষের মাঝেই রয়েছে চুম্বনের প্রচলন। কোথাও তা প্রকাশ্য আর কোথাও গোপন। গবেষণায় দেখা যায় এর রয়েছে হরেক রকম স্বাস্থ্য উপকারিতা। কিন্তু মোটামুটি সার্বজনীন এই প্রথার পেছনে কি কোনও কারণ রয়েছে? বিবর্তনের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, যে কর্মকাণ্ড বা অভ্যাস আমাদের কোনও উপকারে আসে না সেটা এক সময় হারিয়ে যায়। কিন্তু চুম্বনের প্রথা ঠিকই টিকে আছে! তার মানে কী এই যে চুম্বনের পেছনে এমন কোনও কারণ আছে যা পৃথিবীতে মানব জাতিকে টিকে থাকতে সাহায্য করে?

মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীদের মাঝে চুম্বনের ঘটনা বিরল। তাই এটা বোঝাই যায় যে এর পেছনে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক কোনও কারণ রয়েছে। নতুন এক গবেষণা বলছে, শুধু ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে বা নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে সেই সঙ্গীটি কতটা উপযুক্ত তা জানার জন্যেই মূলত চুম্বনের ব্যবহার করে মানুষ। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রাফায়েল ওয়ালোডারস্কির গবেষণার ফলাফল এটি এবং তা প্রকাশিত হয় Archives of Sexual Behavior জার্নালে।

নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সম্পর্কের প্রথম ধাপে চুম্বনের ব্যবহার করে অনুপযুক্ত পুরুষ সঙ্গীকে বাদ দিয়ে দেন। এ ছাড়াও দেখা যায়, শারীরবৃত্তীয় চক্রের উর্বর সময়টাতে চুম্বনের এই দিকটি সম্পর্কে তারা বেশি সংবেদনশীল থাকেন।

রাফায়েল ওয়ালোডারস্কি বলেন, হিন্দুধর্মের বেদ এমনকি প্রাচীন মিশরীয় ম্যুরালে দেখা যায় চুম্বনের দৃশ্য। “এটা এতটাই প্রচলিত যে এর পেছনে কোনও একটি কারণ থাকাটাই স্বাভাবিক,” বলেন তিনি।

চুম্বনের পেছনের কারণ নিয়ে তিন ধরণের তত্ব প্রচলিত আছে। কেউ ধারণা করেন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সূচনা করে এটি, কেউ ধারণা করেন এর ফলে সম্পর্ক দৃঢ় হয়। কেউ কেউ ধারণা করেন, চুম্বনের মাধ্যমে একজন মানুষ আরেকজনের মূল্যায়ন করেন। এই মুল্যায়নের পেছনে লক্ষ্য হলো, সঙ্গীর স্বাস্থ্য এবং বংশবিস্তারের ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। অনেকে ধারণা করেন এই প্রক্রিয়ায় “ফেরোমোন” নামের পদার্থটির ব্যবহার আছে। বিভিন্ন প্রাণী এই ফেরোমোনের গন্ধ ব্যবহার করে সঙ্গী আকর্ষণ করে। ওয়ালোডারস্কির ভাষ্যমতে, “পরস্পরের প্রতি আগ্রহী দুজন মানুষ যাতে কাছাকাছি এসে একে অপরকে শুঁকতে পারে তারই একটি পথ তৈরি করে দেয় চুম্বন”।

এখনও পর্যন্ত মানব শরীরে “ফেরোমোন” হিসেবে কাজ করে এমন কোনও পদার্থের খোঁজ পাওয়া যায়নি, কিন্তু এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা একমত যে গন্ধের মাধ্যমে তথ্য আদানপ্রদান হয়। এপ্রিলে প্রকাশিত হওয়া আরেক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, নারীরা সেসব পুরুষদের পছন্দ করেন যাদের শরীরের গন্ধে টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বেশি।

নতুন এই গবেষণার জন্য ওয়ালোডারস্কি এবং তার সহকর্মী রবিন ডানবার একটি অনলাইন প্রশ্নপত্র তৈরি করেন যাতে সারা দেয় নয়শোরও বেশি মানুষ। সম্পর্কের শুরুতে এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে চুম্বনের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে প্রশ্নের উত্তর দেন এসব মানুষ। ইতোমধ্যেই সম্পর্কে জড়িত অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানান তাদের চুম্বনের মাত্রা এবং তারা নিজেদের সম্পর্কে কতটা সুখী।

চুম্বনের ব্যাপারে একটি তত্ব প্রচলিত রয়েছে যে এর মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্কের পথ সুগম হয়ে যায়। কিন্তু এই গবেষণা তাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। সম্পর্কে জড়িত মানুষেরা মতামত দেন, তাদের সম্পর্ক জোরালো এবং সুন্দর রাখতেই তারা চুম্বনের ব্যবহার করেন। চুম্বনের পরিমাণ বাড়লে তাদের সম্পর্কের পরিতৃপ্তিও বাড়ে। কিন্তু শারীরিক সম্পর্কের সাথে পরিতৃপ্তির সেই যোগ দেখা যায় না।

এই অনলাইন জরিপ থেকে আরও দেখা যায়, সম্পর্ক রক্ষায় চুম্বনের উপকারিতা সম্পর্কে পুরুষের চাইতে নারীরা বেশি সচেতন। এছাড়াও দেখা যায় যারা নিজেদেরকে আকর্ষণীয় মনে করেন, চুম্বনের গুরুত্ব তারাই বেশি দেন। আগের কিছু গবেষণায় দেখা যায়, সঙ্গী নির্বাচনে পুরুষদের চাইতে নারীরা বেশি খুঁতখুঁতে। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে যারা উদার, তারা সঙ্গী নির্বাচনের ব্যাপারে বেশি সতর্ক হন। আর পুরনো গবেষণার সাথে এই নতুন গবেষণার তথ্য মিলিয়ে দেখেলে দাঁড়াচ্ছে যে, ভবিষ্যৎ সঙ্গী বাছাই করার উদ্দেশ্যেই চুম্বনের ব্যবহার করে মানুষ। আরও একটি বিষয় জানা যায় পরবর্তী পরীক্ষায় আর তা হল, সম্পর্ক অটুট রাখতে আঠার কাজও করে চুম্বন।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!