আমার ভুলের স্রোতে ভেসে যাওয়া তোমার ভালবাসা


ভালবাসা ব্যাপারটা সম্ভবত একটা ছোট্ট শিশিতে ভরা থাকে।মাঝে মাঝে সেই শিশিটা খুলে দিলে হয়তো ঘ্রান সব জায়গায় ছড়িয়ে পরে।নীরার প্রতি আমার ভালবাসাটাও হয়তো তেমনই।

নীরা ছিল আমার ক্লাসমেট।দীর্ঘ ছয় বছর প্রেম করার পর আমাদের বিয়ে হল।নীরা দেখতে বেশ ভাল।আমি জানতাম ক্যাম্পাসের অনেক ছেলে ওর প্রেমে দিশেহারা ছিল।ও এদের সবাইকে বাদ দিয়ে আমার মত মুখচোরা মানুষটার প্রেমে পড়েছিল-এটা ভাবলে আমার এখনো ওর প্রতি কৃতজ্ঞতা জন্মে।

ভার্সিটিতে থাকতে মাঝে মাঝেই দেখতাম নীরার সেল ফোনে অযাচিত সব মানুষেরা ফোন দিত,ম্যাসেজ পাঠাতো!সেই ম্যাসেজে ভালবাসা উপচে পড়তো।আমার ওসব দেখলে কেন যেন মাথা ঠিক থাকত না।প্রচন্ড রাগ হত।এমনিতেই আমার একটু রাগ বেশী।এসব দেখে মাথা ঠান্ডা রাখাই কষ্টকর হয়ে যেত।আর রাগলে কেন যেন আমার মুখ থেকে কেবল তুই-তোকারিই বের হয়।

একদিন ক্যাম্পাসে এক সাথে দুজন বসেছিলাম।ঐসময় নীরার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসল।সেই ম্যাসেজেও ছিল সীমাহীন সব ভালবাসার কথা লেখা।ম্যাসেজ দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গেল।সবার সামনেই চিৎকার করে বললাম-হারামজাদী বেশ্যা,তুই আমার সাথে প্রেম করতে আসছিস ক্যান?তোর কাছে যে নাগর ম্যাসেজ পাঠায়্ তার কাছে যা!

নীরা অবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আসতে করে শুধু বলল-এসব তুমি কি বলছ?

তারপর কথা না বাড়িয়ে ছোট ছোট পা ফেলে চলে গেল।এই ঘটনার দুইদিন যেতে না যেতেই আমার রাগ পড়ে গেল।আমি বুঝলাম বড় বেশী ভুল করে ফেলেছি।আমি আবার নীরার কাছে গিয়ে মাফ চাইলাম।নীরাও আমার প্রতি এত বেশী দূর্বল ছিল যে ও আবার আমার কাছে ফিরে আসত।নীরার সাথে আমার সম্পর্কটা সাংসারিক জীবন পর্যন্ত গড়িয়েছিল কেবলই ওর সংযমের কারণে।

কি অপরিসীম ধৈর্য ছিল মেয়েটার!সব ব্যাপারেই যা বলেছি মেনে নিয়েছিল।নীরার রেজাল্ট আমার চেয়ে অনেক ভাল ছিল।বিয়ের পর আমরা দুইজন অস্ট্রেলিয়াতে একটা স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করেছিলাম।ভাল রেজাল্ট থাকার কারণে নীরা স্কলারশীপটা পেয়ে গেল।কিন্তু আমি পেলাম না।আমার ভিতরে রোখ চেপে গেল।নীরাকে এক কথায় বলে দিলাম-“যদি স্কলারশীপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যেতে হয় তাহলে সংসার ভেঙ্গে দিয়ে যাও।আর কখনও আসবে না।”সেদিনও নীড়া সামান্যতম কথা বাড়ায়নি।

একটা সময় নীরা সম্ভবত আমার ভয়েই কেমন চুপ মেরে গিয়েছিল।দুইজনের চাকরীর সংসারে কেবল রাতের খাবারটাই আমরা এক সাথে খেতাম।কিন্তু খাবার টেবিলে দেখা যেত ও আমার সাথে খেতে বসত না।আমাকে খাবার দিয়ে চুপচাপ চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত।খাবার পছন্দ না হলে তা বাটি সহ ছুড়ে ফেলে দেয়াটা আসলে আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছিল।আমি কোনো খাবার ছুড়ে ফেলে দিলেই ও আবার তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে আমাকে একটা ডিমভাজি করে এনে দিত কিংবা অন্য কোনো খাবার বানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করত।

মাঝখানে ঘটে গেল একটা অঘটন।আমরা একই অফিসে চাকরী করতাম।কিন্তু ও হঠাৎ করে প্রোমোশন পেয়ে গেল।এটাতে আমার যথেষ্ট রোখ চেপেছিল কিন্তু এই একটা ব্যাপারেই চুপ করেছিলাম।মাঝেমাঝেই নীরাকে পুরুষ কলিগদের সাথে এখানে ওখানে যেতে হত।একদিন শুনলাম নীরা একপুরুষ কলিগের সাথে লাঞ্চ করে এসেছে।আমার এবারো রোখ চেপে গেল।আমি ঐদিন নীরাকে ফেলে একাই বাসায় চলে আসলাম।অফিস ছুটির অর নীরা যখন এসে দরজা নক করল তখন দরজা খুলে বললাম-“খবরদার তুই আমার ঘরে ঢুকবিনা।যার সাথে দুপুরে খাইছিস তার কাছে গিয়ে ঘুমা!”

নীরা আসতে করে বলল-প্লিজ আসলাম,এত জোরে কথা বোলনা।অন্য ফ্লাটের সবাই শুনতে পাবে।

-শুনলে শুনুক।তুই আরেক ব্যাটার সাথে ঢলাঢলি করতে পারবি আর সেইটা আমি বলতে পারব না?

-বিশ্বাস কর আসলাম,মুজাহিদ ভাইয়ের সাথে দুইটা ব্রাঞ্চে এক সাথে যেতে হয়েছে।হাতে সময় ছিল না।তাই বাইরে এক সাথে খেতে হয়েছে।

-তুই আর কথা বাড়াবি না।তুই যেখানে ইচ্ছা হয় যা।

নীরা হঠাৎ আমার পা ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিল।আমি এক ঝটকায় আমার পা ছাড়িয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।নীরা আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল।

এই ঘটনার ঘটার এক সপ্তাহের ভিতর নীরা একদিনও অফিসে আসল না।একদিন আমিই ওকে ফোন দিলাম।দেখলাম ও ফোনটা কেটে দিচ্ছে।ওদের বাসায় গেলাম।ও তবুও দেখা করল না।মাস ছয় এভাবে চলল।এরই ভিতর শুনলাম নীরা অন্য কোম্পানীতে চাকরী নিয়েছে।আমি এর ভিতর বহুবার ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি।কিন্তু পারিনি।কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি নীরা আমাকে ছেড়ে একদম চলে যাবে।এরই ভিতর ডিভোর্স লেটার পেয়ে গেলাম।আশ্চর্য নীরা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে!

আজ দেড় বছর হল,নীরা এই বাড়িতে আমার সাথে থাকে না।ও এখন হাজার মাইল দূরে সিডনি নামের একটা জায়গায় বসবাস শুরু করেছে।নতুন করে সংসার বেধেছে।ও এখন অন্যের স্ত্রী।তবু অফিস শেষ করে ঘরে ফিরলে আমি কেন জানি এখনও নীরাকেই আশা করি।আমার ঘরজুড়ে ছড়িয়ে আছে নীরার ভালবাসা।আমি এঘর-ওঘর ঘুরে নীরার ভালবাসাকে হাতড়ে বেড়াই।নীরা আমায় ক্ষমা করে দিও!

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!