ভালবাসার গল্পের শেষের অংশ


তনু হাটতে হাটতে একটা কাঁচে ঘেরা ফাষ্ট ফুডের দোকানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কম করে হলেও তিনশত টাকা দরকার। কিন্তু আমার পকেটে আছে মাত্র একশত পনেরো টাকা। কিছুটা আতংকিত হয়ে আমি সামনে তাকালাম। বুকের ভিতর ছলাৎ করে উঠল আনিস আর সবুজ আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফাষ্টফুডের দোকানের ভেতর ঢুকছে। আংতঙ্কিত হয়ে পড়লাম ওদের হাফভাব দেখে মনে হল সবি সাজানো। আমার পকেটের বারোটা বাজাতেই ওরা প্লান করে নেমেছে। তনু হয়ত আমাকে গাধা বানাতেই একটা নাটক করছে। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল।

এক ঝটকায় আমি হাত ছাড়িয়ে নিলাম। মন জুড়ে এতক্ষন যে রোমান্টিকতার জোয়ার বয়ে চলছিল তা হঠাৎ করেই থেমে গেল। আমার এই আচমকা পরিবর্তনে তনু ভীষন আশ্চর্য হল। ব্যথিত চোখে সে আমার দিকে তাকালো। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমার বুকের ভেতর কেমন যেন করে উঠল। ওর চোখে কোন ছল নেই। আছে ভালবাসার গভীর আকুতি। সেই ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার শক্তি আমার নেই।

তনু অভিমান ভরা কণ্ঠে বললো, কি হল তোমার! এমন করছো কেন?

আমি উত্তর না দিয়ে আবারও ওর হাত ধরলাম। যেন কিছুই হয়নি।

তনু বললো, তোমার জানি মনে নেই যে আজ আমার জন্মদিন। সবুজ আর আনিসকে এই রেস্টুরেন্টে আমিই ডেকেছি। আমি তোমাদের খাওয়াবো।

ও হাসতে থাকে। ওর সেই হাসি দেখে ভারি ভাল লাগে আমার। ও বলে, সেই সাথে আমি ওদের জানাতে চাই যে তুমি আমার প্রেমিক।

ও আমার হাত ধরে চাপ দিয়ে চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞসা করে, কি? আমারে পছন্দ হয়না!

আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলি, ভালবাসতে এত ভাল লাগে আমার জানা ছিলনা। আরো কিছু বলার আগেই আমার মোবাইলে রিং বেজে উঠে..

স্কিনে দেখি আমাদের সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার ভাইর নাম্বার। এমন রোমান্টিক সময়ে আনোয়ার ভাইর মাথামোটা প্যাচাল শুনতে ইচ্ছে হলনা। মোবাইল অফ করে দিলাম।

তনুর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল।ও সন্দেহ ভরা চোখে প্রশ্ন করে, কে ফোন দিল তোমারে? ফোন বন্ধ করলা কেন? নিশ্চয় তোমার কোন র্গাল ফেরে- আছে!

কিংকর্তববিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে পড়লাম। কিছু বলার আগেই চিলের মত কোথা হতে যেন উড়ে এসে সামনে দাড়ালো আনোয়ার ভাই। সে ভারি বিরুক্তি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ধমকের স্বরে বললো, কিরে তুমি ফোন ধরছো না কেন? আজ ১২টার সময় যে আমাদের প্রতিবাদ সভা আছে সেটা ভুলে গেছো! তোমারা মিয়া সংগঠনকে কোন দিনই সিরিয়াসলি নিলা না। দলটারে ডুবাই ফেলবা? কি সব কইরা বেড়াইতাছো। ভাল হও, চল এখুনি অনেক কাজ পইরা আছে।

তনু এবার চরম বিরুক্তিকর কণ্ঠে আনোয়ার ভাইরে বলে, আপনার দলরে গিয়ে বলেন আজ তমালের প্রেমিকার জন্মদিন!

তনু আমার হাত ধরে টানমেরে আনোয়ার ভাইর সামনে থেকে নিয়ে এল। আমিও অসিম সাহসে আনোয়ার ভাইকে উপেক্ষা করে তনুর হাত ধরে হাটছি। নিজেকে কেমন মুক্ত পাখির মত লাগছে।

তনুকে তবু মিনমিনে গলায় বলি দেখ আনোয়ার ভাইরে এমন ভাবে অপমান করা ঠিক হইলো, উনি যদি আমারে হল থেকে বের করে দেয়।

তনু আমার দিকে তাকিয়ে বললো তোমার হলে থাকার দরকার কি? কালই তুমি আমাদের বাসায় উঠবে।

মানে কি? প্রশ্ন করি আমি। ও হেসে বলে জানোতো আমার বাবার একমাত্র মেয়ে আমি। বাবার ইচ্ছে তিনি তার মেয়ে জামাইকে নিজের ছেলের মত করে বাড়িতে রাখবেন।

কিছুটা বিস্মিত আমি দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করি তার মানে কি ঘর জামাই?

ও হেসে বলে কি রাজকন্যাসহ রাজ্যত্ব তোমার ভালো লাগেনা!

তনুর চোখের দিকে তাকিয়ে কেন যেন মনে হল ও শিকারীর মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম আনোয়ার ভাইও শিকার ছুটে যাওয়ায় হতাশ শিকারীর মত তাকিয়ে আছে।

আমি দু’জনের মধ্যে দাড়িয়ে ভাবছি কার শিকার হব?

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!