বরগুনায় আরেক পরিমল-পান্না মাস্টারের উত্থান !



বরগুনা : রাজধানী ঢাকার আলোচিত পরিমল আর কুষ্টিয়ার পান্না মাস্টারের পর দেখা মিলেছিল দিনাজপুরের শিক্ষক তসলিম উদ্দিনের। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাইভেট ও কোচিং পড়ানোর সুযোগে প্রলোভন ও ভয় ভীতি দেখিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক তৈরির অভিযোগ রয়েছে।

এমনকি যৌন সম্পর্কের ভিডিও চিত্র ধারণ করে ছাত্রীদের জিম্মি করে দিনের পর সম্পর্ক চালিয়ে গেছেন।অনেক শিক্ষক অশ্লীল চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ায় ওই ছাত্রীদের পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার।

পরিমল আর পান্না মাস্টারদের তালিকায় এবার যুক্ত হলেন বরগুনার বামনা উপজেলার শিক্ষক হানিফ সরদার (৪৫)। রাতের বেলা কোচিং সেন্টার খুলে দীর্ঘ দিন ধরে তিনি শিশু ছাত্রীদের যৌন হয়রানী করে আসছিলেন।

অবশেষে ১৩ ছাত্রীর অভিযোগ ও এক অভিভাবকের দায়ের করা মামলায় মো. হানিফ সরদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার ভূক্তভোগী শিশু ও তাদের পরিবার উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ দিলে সন্ধ্যায় পুলিশ ওই শিক্ষককে উপজেলা পরিষদ চত্বর হতে গ্রেপ্তার করে।

আজ সোমবার তাকে বরগুনা জেল হাজতে পাঠানো হয়। হানিফ সরদার উপজেলার রামনা ইউনিয়নের পশ্চিম গোলাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।তিনি গোলাঘাটা গ্রামের মৃত কুদ্দুস সরদারের ছেলে।

রোববার রাতে বিদ্যালয়ের ভূক্তভোগী এক ছাত্রীর মা বাদী হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে আসামি করে বামনা থানায় মামলা দায়ের করেন।মামলায় ভূক্তভোগী আরও ১২ ছাত্রীকে সাক্ষি করা হয়েছে।

থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক হানিফ সরদার দীর্ঘ দিন ধরে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়তি শিক্ষাদানের নামে একটি কোচিং বাণিজ্য চালু করেন।গত দুই মাস ধরে তিনি রাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কক্ষে এ কোচিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।

অভিযোগ ওঠে হানিফ মাস্টার নানা ছলছুতায় ছাত্রীদের শারীরিক হয়রানি করে আসছেন। যৌন হয়রাণির শিকার শিশুরা যাতে অভিভাবকদের না জানায় এজন্য ভাল ফলাফল, এমনকি টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার অপচেষ্টা চালান।

রোববার কোচিং বাণিজ্যের আড়ালে শিশুদের ওপর ওই শিক্ষকের অনৈতিক আচরণের বিষয়টি স্থানীয় ভাবে জানাজানি হয়ে যায়। ঘটনা অনুসন্ধান চালাতে সোমবার দুপুরে বরগুনার স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে যৌন হয়রানির শিকার ১৩ স্কুল ছাত্রী হানিফের অনৈতিক কার্যাকলাপের অভিযোগ তোলে।বিকেলে উপজেলা প্রশাসনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ভূক্তভোগী শিশুরা ও পরিবারের সদস্যরা যৌন হয়রাণির অভিযোগ দায়ের করেন।

এরপরই পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফাতিমা বেগম বলেন, ১৩ স্কুল ছাত্রী স্কুলের সহকারী শিক্ষকরে বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দিয়েছে, যা অনৈতিক।আমি আজই এ অভিযোগ পেয়েছি।বিষয়টি শিক্ষা অফিসে অবহিত করার উদ্যোগ নেয়ার আগেই অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, গত এক মাস ধরে অভিযুক্ত শিক্ষক শিশু ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক আচরণ করে আসছেন।তিনি রাতে কোচিং চালু করে এসব করছেন।বিষয়টি রোববার স্থানীয়ভাবে জানাজানি হয়ে গেলে ভূক্তভোগী বহু ছাত্রী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে।

মোহাম্মদ উল্লাহ আরও জানান, ছয় মাস আগে স্কুলের এক ছাত্রীর সাথে ওই শিক্ষক অনৈতিক আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ জরুরি সভা ডাকে।সেখানে অভিযুক্ত শিক্ষক দোষ স্বীকার করে সভায় ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল।বর্তমানে ১৩ ছাত্রীর ওপর ওই শিক্ষকের যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিব্রত।

এ ব্যাপারে বামানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, যৌন হয়রানির শিকার এক ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।মামলায় যৌন হয়রানির শিকার আরও ১২ ছাত্রীকে সাক্ষি করা হয়েছে।আজ সোমবার অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষক পরিমল জয়ধর স্টাইলে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করে গোপন ক্যামেরায় ভিডিও চিত্র ধারণ করে ছাত্রীদের জিম্মি করেছিলেন কুষ্টিয়া শহরতলীর স্কুল শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্না ওরফে পান্না মাস্টার।

লোকচক্ষুর অন্তরালে অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে আসার এক পর্যায়ে ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে পড়ে।এক পর্যায়ে চলতি বছরের ১৪ জুন শিক্ষকের অপকর্মের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে। এ সময় ক্ষুব্ধ জনতা পান্না মাস্টারকে গণপিটুনি দেয়।

পরে পুলিশ তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। একই রকম ঘটনায় নির্যাতিত এক ছাত্রীর দায়ের করা মামলায় গত ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক তসলিম উদ্দিনকে (৪৩) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।তিনিও ছাত্রীদের জিম্মি করে যৌন সম্পর্ক করেন।পরে তা ভিডিও চিত্রে ধারণ করে সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!