সঙ্গিনী যখন বয়সে বড়


স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্কটি শুধু সম্পর্কের বেড়াজালের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, সব কিছু ছাপিয়ে জীবনের অংশ হয়ে উঠে তা। অন্য সব সম্পর্কের মত জন্মসুত্রে পাওয়া নয় এই সম্পর্ক। অনেক জেনে বুঝে, বিচার করে তবেই আপন করে নেয়া হয় কাউকে। তাই অন্য যেকোনো মানুষের থেকে বেশি আপন হয় এই মানুষটি। শ্রদ্ধা ও ভালবাসার মেলবন্ধন ঘটে এই সম্পর্কে।

স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারে অনেকটাই উদার হয়েছে আমাদের সমাজ। এক সময় স্বামী বা স্ত্রীর সম্পর্কে কিছু জানা তো দূরে থাক তাদের চেহারা দেখার সৌভাগ্যটাও হতো না অনেকের বিয়ের আগে। এখন শুধু একে অপরকে দেখেই নয় বরং ভাল করে জেনে বুঝেই গড়ে উঠে সম্পর্ক। ভালবাসার বিয়ে নিয়েই মত বদলেছে আমাদের সমাজ অনেকটাই। তারপরও কিছু ব্যাপার মনোভব এখনও রয়ে গেছে আগের মতই, যা হয়তো সেভাবে মেনে নেবার প্রবনতা গড়ে উঠেনি। অথচ ব্যাপারটা হয়তো অন্য সকল সম্পর্কের মতই নিরীহ। যেমন আপনার সঙ্গিনী যদি আপনার থেকে বয়সে বড় হন তবে মানুষ আর কিছু না হোক অন্তত একবার হলেও ঘুরে আপনার দিকে তাকাবে।

অথচ আমাদের ইসলাম ধর্মে সঙ্গী বা সঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়স বিষয়ক কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করা নেই। কোথাও বলা নেই যে স্ত্রীর বয়স স্বামীর থেকে বেশি হতে পারবেনা বরং আমাদের মহানবী (সাঃ) এর প্রথম স্ত্রী উনার থেকে বয়সে বেশ কিছুটা বড় ছিলেন এবং তাদের সুখময় দাম্পত্য জীবনের কথা সর্বজনবিদিত। এছাড়া অন্যান্য ধর্ম যেমন হিন্দু, খ্রিস্টান বৌদ্ধ ইত্যাদিতেও এমন কোন বিধিনিষেধের খোজ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত।তাহলে এমন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা আসে কোথা থেকে?

আসলে বিধিনিষেধ ধর্মের দিক থেকে নয় বরং তা এসেছে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে। হাজার বছরের সংস্কৃতি ও সামাজিক আচার আচরণের কারনেই মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এখন এমনটাই রয়ে গেল। আসলে আমাদের দেশের ক্ষেত্রে সম্পর্কের মূল ধারনা ছিল স্বামীপ্রবর বাইরে কাজ করবেন ও স্ত্রী সামলাবেন অন্দর। যেহেতু স্বামীকে উপার্জন করবেন ও সংসারের হাল ধরবেন তাই তাকে হতে হবে শক্তিশালী। এবং স্ত্রী যেহেতু অন্দরে থাকবে ও সন্তানের দেখভাল করবেন তাই তিনি কমনীয় হলেও সমস্যা হবেনা এই ধারনাই প্রচলিত ছিল। অনেকটা এই ধারনা থেকেই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে বয়সের বিন্যাসের ধারা সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।

তবে ব্যাপারটা যে শুধু সামাজিক তা নয়। কিছু "মেডিক্যাল কন্ডিশনও" প্রভাব ফেলে এই সম্পর্কের উপরে। সম্পর্কটা যখন স্বামী-স্ত্রীর তখন শারীরিক ব্যাপারগুলো আসবেই। বয়সের তারতম্য বেশি হয়ে গেলে শারীরিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। স্ত্রীর বয়স বেশি হলে সন্তান ধারনের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। বলা হয়ে থাকে সমান বয়সের একটি ছেলে ও একটি মেয়ের পরিপক্বটা কখনই এক হবেনা। মেয়ের পরিপক্বতা ছেলের থেকে অবশ্যই বেশি হবে তা শারীরিক হোক বা মানসিক হোক। এমন ক্ষেত্রে মেয়ের বয়স বেশি হলে শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি দুজনের দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা হতে পারে। সেক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিবে পারে মানিয়ে চলার ক্ষেত্রে।

তবে সবারই যে এমন সমস্যা হবে এমন কোন কথা নেই। কিছু মানুষের সমস্যার কারণে ঢালাওভাবে কাউকে বিচার করা ঠিক নয়। সমস্যা কখনই শুধু মাত্র বয়সের পার্থক্য হলেই হবে এমনটাও কোথাও বলা নেই। অনেক ক্ষেত্রেই সম বয়সীদের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তৈরি হতে পারে নানাবিধ সমস্যা।

সঙ্গিনী বয়সে বড়, এমন অবস্থা সাধারণত প্রেমের ক্ষেত্রেই হয় আমাদের দেশে। এখনও সামাজিক বা পারিবারিক ভাবে ব্যাপারটা স্বীকৃত হয়ে ওঠেনি। তবে প্রেমের বিয়ে হলেও দাম্পত্য জীবনে নানান রকম সমস্যা হয়েই যায়। বয়সে কম হোক বা বেশি যে কোন সম্পর্কই সামান্য বোঝাপড়া ও ভালবাসাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে। সেই সাথে যদি নিয়মিত চর্চা করেন কিছু বিষয় তবে আপনার কাছে বয়সের পার্থক্য মনে হবে শুধুমাত্র একটি সংখ্যা। যেমন-
  • যে কোন দরকারে সাহায্য নিতে পারেন আপনার স্ত্রীর। যেহেতু তিনি বয়সে বড় তাই হয়তো তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে আপনাদের যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে।
  • যেহেতু আপনারা আলাদা সময়ে বড় হয়েছেন তাই আপনার ও আপনার স্ত্রীর জীবনের ধারা একে অন্যের থেকে একদম আলাদা ছিল। এই ব্যাপারটিকে ভাল মত মানিয়ে নিতে পারলে বৈচিত্র্যপূর্ন হয়ে উঠতে পারে আপনাদের জীবন। কে কি সামলে নিয়ে এগিয়ে গেছেন তা জানা থাকলে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতে মানিয়ে চলার প্রবনতা অনেক বেশি থাকবে।
  • আপনাদের বেড়ে উঠার সময় ও পরিবেশ ভিন্ন। তাই ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এই ব্যাপারটি আপনাদের সন্তানের জন্য হয়ে উঠবে আশীর্বাদস্বরূপ। তাদের জবনে নানান বৈচিত্র্যের সমাগম ঘটবে, ফলে পরবর্তীতে তা তাদের জীবন গড়তে সহায়তা করবে।
  • বয়সের পার্থক্য কখনো কখনো আসে আশীর্বাদের রুপে। যেহেতু আপনাদের বয়সের পার্থক্য বেশি তাই একে অন্যকে বুঝে নিতেই সময় পার করতে হয় অনেক। এই সময় পার করার ফলেই আরও গাঢ় ও নিবিড় হয়ে উঠে এই জাতীয় সম্পর্ক।
  • লোকে কি বলল বা কি নিয়ে কটাক্ষ করলো, সেইসব নিয়ে পরস্পরের সাথে ঝগড়া করতে যাবেন না। লোকের কাজ সমালোচনা করা। আপনারা তাতে কান না দিলেই হলো।
  • স্ত্রী বয়সে বড় বলেই সর্বদা স্বামীর উপরে হুকুম খাটাবার চেষ্টা করবেন না। তাতে সমস্যা কেবল বাড়বেই। মনে রাখবেন যে দাম্পত্যে সকলেই সমান। কেউ বড় বা ছোট নয়।
  • লোকে কি বলবে এই ভয়ে অনেক দম্পতিই সামাজিকতা এড়িয়ে চলেন এইসব ক্ষেত্রে। তেমনটা মোটেও করবেন না। মনে রাখবেন, পরস্পরের জন্য ভালবাসাই আপনাদের সম্পর্কের সৌন্দর্য।
মনে রাখবেন বয়স যাই হোক না কেন, প্রেমিক প্রেমিকা বা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সত্যিকারের ভালবাসা থাকলে এসব সমস্যাগুলো কেবল বড় বড় বুলি হিসেবেই গণ্য হবে। আসল কথা হল স্ত্রী আপনার থেকে যতই বয়সে বড় হন না কেন পারস্পারিক বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধাবোধ থাকলে সম্পর্ক হয়ে যাবে অটুট। হয়তো আপনাদের আন্তরিকতা বদলে দিবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকেও।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!