ব্রেক-আপের পরে...


“ব্রেক-আপ”... শুনতে যত সহজ বা ছেলেমানুষী মনে হোক না কেন, যার ওপর দিয়ে যায় কেবল সেই মানুষটিই বোঝে এই কষ্ট। অনেক আবেগ আর মমতা দিয়ে আগলে রাখা একটি সম্পর্ক যখন ছিন্ন হয়ে যায়, তখন ব্যথা তো হবেই। এবং সত্যি বলতে কি ভীষণ প্রবল আর প্রচণ্ড হয় সেই ব্যথা। অনেকেরই জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায় এই আঘাত সামলে উঠতে গিয়ে। এবং আরও অদ্ভুত ব্যাপারটা হচ্ছে, একটি ব্রেক-আপের রেশ আমাদের জীবনে আর মনে রয়ে যায় দীর্ঘদিন। এবং কখনও কখনও সারা জীবনও। তবুও, জীবনকে তো থামিয়ে রাখা যায়না। তাই না?
এই জীবনটা চালাতে গিয়েই কিন্তু এই সময়ে হয়ে যায় বেশ কিছু ভুল। আর সেগুলোর মাসুল দিতে হয় বাকি জীবনভর। আজ রইলো এমন কিছু পরামর্শ, যা আপনার কাজে আসবে সম্পর্কের ভাঙ্গনের পর নিজেকে সামলাতে। আর রক্ষা করবে ভুলগুলোর হাত থেকেও।

১) অহেতুক কষ্ট পুষবেন না-

যে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে, তার জন্য কেন কষ্ট পাচ্ছেন? ভালোবেসে থাকলে কি তিনি যেতে পারতেন? কখনোই তো না! আর যে ভালোবাসে না, তার জন্য কষ্ট কিসের? আবার যদি সম্পর্ক ভাঙ্গার সিধান্তটা আপনি নিজেই নিয়ে থাকেন, তাহলে কি ভাঙ্গনের পর মাতম করা ঠিক হচ্ছে? এখানে সিধান্ত তো খোদ আপনারই!

২) কুৎসা রটাবেন না-

আমরা অনেকেই আছি সম্পর্ক ভাঙ্গার পর প্রেমিক/ প্রেমিকার নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়াই। এটা নীতিগতভাবে অনুচিত তো অবশ্যই। তবে তার চাইতেও বেশী ক্ষতিকর আপনার নিজের জন্য। কেননা ব্রেক আপের পর এককালের আপন মানুষটির নামে যদি এখন কুৎসা রটান, তাহলে কাছের মানুষেরাই আপনাকে সস্তা বা গীবতকারী মনে করবে। আপনার ব্যক্তিত্ব খাটো তো হবেই, সাথে অনেকেই কিন্তু আড়ালে আড়ালে আপনাকে নিয়ে রসিকতাও করতে পারে।

৩) সময় দিন সময়কে-

সম্পর্ক ভেঙ্গেছে, কষ্ট হচ্ছে খুব। হবেই আর এটাই স্বাভাবিক। হুট করে কোনও কিছু না করে সময় দিন নিজেকে। সময় সেই ওষুধ যা কিনা সকল ক্ষতকে ভরাট করতে পারে। কিছু দিন যেতে দিন, দেখবেন খারাপ লাগাটা একটু হলেও কমবে।

৪) কষ্টের প্রদর্শন করবেন না-

আমরা অনেকেই আছি একটি সম্পর্ক ভাঙ্গার পর “দেবদাস” হবার চেষ্টা করি। অনেকটা যেন কষ্টের প্রদর্শন। এই কাজটি সেই মানুষটির সামনে আপনার আবেগকে তুলে তো ধরেই না, বরং আপনাকে আরও খেলো করে ফেলে তার চোখে। শুনতে খারাপ শোনালেও সত্যি যে আপনার কষ্ট পাওয়া দেখে সে এক রকম আত্মতৃপ্তি পায়।

৫) নিজেকে ধরে রাখতে চেষ্টা করুন স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়-

এটা খুব জরুরি। কেননা নিজের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় থাকলে আপনি ব্যস্ত থাকবেন, আর ব্যস্ত মানুষের কষ্ট একটু হলেও কম থাকে। একজন মানুষ জীবন থেকে চলে গেছে বলে জীবন তো আর ফুরিয়ে যাচ্ছে না, তাহলে আর জীবনকে অহেতুক থামিয়ে রাখার চেষ্টা কেন?

৬) স্মৃতিকে আগলে ধরে রাখবেন না-

স্মৃতির নিদর্শনের মতন কষ্টদায়ক বস্তু আসলে কমই আছে। প্রিয়জনের ছবি, উপফার, চিঠি ইত্যাদি কেবল কষ্টই বাড়াবে আপনার। তাই আগলে না রেখে কোনও না কোনও উপায়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। তাকে ফেরত দিয়ে দিন, নষ্ট করে ফেলুন। একদম কিছুই করতে না পারলে কোনও বন্ধুর কাছে রাখতে দিন সাময়িক ভাবে। যেন কিছুতেই আপনার হাতের নাগালে না থাকে।

৭) মানুষটির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবেন না-

অনেকেই আছেন বারবার প্রাক্তন প্রেমিক/ প্রেমিকার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এই কাজটা করলে কেবল আপনার মূল্যটাই কমে যায়, আর কোনও লাভ কিন্তু হয় না। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ফোন করেন, উলটো সে আরও দূরে সরে যায়। যদি মনে করেন যে ব্রেক আপের পর বন্ধু হিসাবে থাকবেন আপনারা, সে ক্ষেত্রেও কিছুদিনের জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখুন।

8) “কমন” বন্ধুদের এড়িয়ে চলুন-

কেননা দুই জনের “কমন” বন্ধুদের সাথে দেখা হলে ঘুরে ফিরে ব্রেক আপের প্রসঙ্গটা আসবেই। তাতে আপনদের কষ্ট বাড়বে বই কমবে না। কিছুদিনের জন্য হলেও এই কমন বন্ধুদের আড্ডা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

৯) নতুন সম্পর্কে জড়ানোর আগে সময় নিন-

কেবল একা থাকতে খারাপ লাগছে , কিংবা মানসিক সমর্থন দরকার বলেই আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়ে যাবেন না। ব্রেক আপের পর মন দুর্বল থাকে, কেউ একটু সহানুভূতি দেখালেই অন্তত ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে নতুন সম্পর্কের সূচনা হয়। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই নতুন সম্পর্কটা হয় আরেকটা ভুল। সহানুভূতি বা করুণা থেকে যে সম্পর্কের সূচনা, সেটা কখনোই সঠিক হতে পারে না।

১০) নেশা কষ্ট কমায় না–

সর্বশেষে এই অনুরোধ যে কষ্ট কমাবার জন্য নিজেকে কোনও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিবেন না। সিগারেট থেকে শুরু করে যে কোনও প্রকার নেশাই মানুষকে কষ্ট মুক্ত করতে পারে না, বরং ঠেলে দেয় চিরস্থায়ী অন্ধকারের দিকে।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!