দাম্পত্যে মানিয়ে চলুন পছন্দ-অপছন্দ

স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে অনেক কিছু শেয়ার করেন। একসাথে বসবাস করতে হলে মিল থাকা আবশ্যক। তবে দুজন মানুষ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে বসবাস করলেই যে তাঁদের সব বিষয়ে মিল থাকতে হবে, তা নয়! কারণ প্রত্যেকটি মানুষই আলাদা, চিন্তা-ভাবনা, পছন্দ-অপছন্দ, রুচি স্বতন্ত্র হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কিছু কিছু ব্যাপারে মতের অমিল থেকেই যায় সারাজীবন! এই অমিলটা মেনে নিতে পারেন না বহু স্বামী বা স্ত্রী। ফলে ব্যক্তিত্ব বা যুক্তি খাটিয়ে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করেন সঙ্গীর ওপর! এই চেষ্টা শুভফল বয়ে আনে না কখনোই। অনেকে প্রথম প্রথম মেনে নিলেও পরে এই জোর খাটানোর অভ্যাস দাম্পত্যে ফাটল ধরায়।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব মতামত আপনার ব্যক্তিত্বকে এক বিশেষ মাত্রা দেয়। এই নিজস্বতাই অন্যদের কাছ থেকে আপনাকে আলাদা করে তোলে। এ কারণেই নিজস্বতা নিয়ে বেশি ছাড় দিলে আপনি নিজেকেই একসময় হারিয়ে ফেলবেন। তাই সংসারজীবনের গোড়া থেকেই খেয়াল রাখুন এ বিষয়ে। আপনার সঙ্গীর মতামতকে অবশ্যই গুরুত্ব দিন, তবে তাঁর মতামতকে আপনার ওপর চাপিয়ে দিতে দেবেন না।

মনে রাখুন :

  • ১)দাম্পত্যজীবনের শুরু থেকেই শুধুমাত্র সঙ্গীকে খুশি রাখার জন্য নিজের পছন্দ বা ইচ্ছা চাপা দিয়ে রাখবেন না। আবার নিজের পছন্দ-অপছন্দও জোর করে সঙ্গীর ওপর চাপিয়ে দেবেন না। তাঁর সাথে আপনার সমস্ত পছন্দ-অপছন্দ নাও মিলতে পারে। মনে রাখবেন, কাউকে ভালবাসা মানে হলো তাঁর দোষগুণসহ তাঁকে ভালবাসা!
  • ২)পোশাক পরা বা নিজের কোনো জিনিস কেনার সময় আপনার সঙ্গীর মতামত অবশ্যই চাইবেন। সেটা যদি যুক্তিসঙ্গত হয় বা আপনার বিবেচনায় ঠিক মনে হয়, তবেই সেটা মেনে চলবেন। অশান্তি এড়াতে বা সঙ্গীকে খুশি রাখতে যদি তাঁর মতামত পছন্দ না হলেও মেনে নেন এবং নিজের পছন্দগুলোকে এড়িয়ে চলেন, তাহলে মানসিক অশান্তিতে ভুগতে হবে কিন্তু আপনাকেই!
  • ৩)নিজের রুচিবোধ নিয়ে কখনো লজ্জিতবোধ করবেন না। নিজেকে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল বা আধুনিক মনে না হলে সেই বিষয়ে খোঁজখবর করুন, বই বা পত্রপত্রিকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। এতে নিজে তো সমৃদ্ধ হবেনই, প্রয়োজনে অন্যকে নিজের মতামত যুক্তি দিয়ে বোঝাতেও পারবেন!
  • ৪)সঙ্গীর মতামতকে সবসময় হেলাফেলা করবেন না। মাঝে মাঝে তাঁরও পছন্দমতো সাজপোশাক করুন, তাঁর পছন্দ অনুযায়ী জিনিসপত্র কিনুন। তবে এটা অবশ্যই খেয়াল রাখুন যে, আপনারা কেউ যেন কারো উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে না দেন।
  • ৫)খাওয়াদাওয়া, জামাকাপড়, বেড়ানো, পারিবারিক সমস্যা, বাচ্চার পড়াশোনা - এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন দুজন আলোচনার মাধ্যমে। তাহলে দুজনার মতামতই গুরুত্ব পাবে। একজন হুকুম করছেন এবং অন্যজন সেটা মেনে চলছেন - এমনটা যেন কখনোই না হয়।
  • ৬)আপনার সঙ্গী যদি আপনার ওপর জোর খাটানোর চেষ্টা করেন অথবা আপনাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁর সাথে ঝগড়া বা তর্কাতর্কি না করে তাঁর সাথে একটা চুক্তি করে নিন। একে অন্যের কথা মেনে চলা এবং নিজের স্বাধীন মতামতের গুরুত্ব বিবেচনা করে তৈরি করুন আপনাদের চুক্তির শর্ত। পুরো ব্যাপারটা খুব বেশি ভাবগম্ভীর করে না তুলে একটা বন্ধুভাবাপন্ন অবস্থায় নিজে আসুন।
  • ৭)পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে একে অন্যের ওপর জোর খাটানোর চেষ্টাটা বেশি দেখা যায় পারিবারিকভাবে বিয়েতে। কারণ প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী আগে থেকেই একে অন্যের ব্যাপার অনেক কিছু জানেন বলে এ সমস্যাটা কম হয়। পারিবারিকভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির মাত্রাটা থাকে বেশি। বিয়ের শুরুর দিকে একে অন্যকে সময় দিন বেশি। এতে অমিলসংক্রান্ত সমস্যাগুলো অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যায়।
ব্যক্তিত্বের টানাপোড়েন আপনার দাম্পত্যজীবনকে করে তুলতে পারে দুর্বিষহ। তাই সঙ্গীর সাথে সংঘাতে না গিয়ে একে অন্যের মূল্যায়ন করুন।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!