মোবাইল প্রেমের একটা কাহিনী


সময়টা ২০০৫ বা তার কাছাকাছি , গাইবান্ধা সরকারী কলেজের মাঠে কতগুলো ছেলে গোল হয়ে আড্ডা দিচ্ছে । এখন ১ বা দেড় টাকায় যেখানে ১ মিনিট কথা বলাযায় সেই সময় বিল লাগত প্রায় ৪ থেকে সাড়ে চার

টাকার মত , আর রাস্তার মোড়ে মোড়েও ফ্লেক্সি লোডের দোকান ছিল না । সময়টা বোধ হয় অনুমান করতে পারছেন । মাত্র ssc পাশ করে কলেজে ওঠার পর ছেলেমেয়েদের ভেতর যেন প্রেমের আবেগ বেয়ে বেয়ে ঝুলে ঝুলে পড়ে এমন এক পরিস্তিতি বিরাজ করে , যার এক প্রতিফলন হচ্ছিল গাইবান্ধা সরকারি কলেজের সেই আড্ডারত ছেলেগুলার মাঝে । যাহোক নতুন মোবাইল আর সেই মোবাইলের ভেতর যদি ইচ্ছে করলেই নারী কন্ঠ শোনা যায় তাহলে তো খুবই ভাল । বন্ধুরা সবাই ফাজলামি করতে করতে ভিকারুন্নেসার পপি নামের একটা মেয়ের সাথে ফাজলামি টাইপের মিস কল নামক জিনিস শুরু হল ।

সেই মিসকল দিয়ে বিরক্ত করার অধ্যায় শেষ হল তাদের মোবাইল প্রেমের ভেতর দিয়ে । মেয়েটা মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে আর প্রশান্ত পড়ে ইন্টার মিডিয়েট...সে হিসেবে তাদের ও তারা শুরু করে দিল । পপি ssc পাশ করল আর এই সময়ের ভেতর প্রশান্ত বিভিন্ন যায়গায় ইঞ্জিনিয়ারিং এর এ্যডমিশন দিতে লাগল ।

ছেলেটা তিন মাস কোচিং করল ঢাকায় এসে,তবে কাজ যেটা বেশি করত সেটা হল জিয়া উদ্যান , আশুলিয়া বা ধানমন্ডিলেকের পাশে বাদাম দিয়ে আইসক্রিম খাওয়া আর লাল-নীল স্বপ্ন দেখা ।

ফাউল কাজ আর ফাজলামি=ফাউলামি , করার কোন সীমাছিল না , তাদেরসংসারের জন্য টাকা জমানো...ব্যাংক একাউন্টের নমিনি বানানো

মাঝে মাঝে এর দোকানে গিয়েও বিভিন্ন জিনিস দাম করত তাদের সংসারের জন্য... পপি আবার মাঝে মাঝে প্লাস্টিকের বক্সে করে অখাদ্য টাইপের বিভিন্ন রেসিপি বানিয়ে নিয়ে আসত প্রশান্তকে খাওয়ানোর জন্য ।

প্রশান্ত চান্স পেল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তবে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানে পপিকে ছেড়ে যাওয়া, এজন্য আর খুলনা গেল না...একইভাবে হাজী দানেশ ... পাবনাবিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কোনটাতেই গেল না প্রশান্ত । সে ঢাকাতেই থাকবে ।পপি আর প্রশান্ত...They are made for each other …প্রশান্ত অবশেষে এল তিতুমির কলেজে ...

ডাবল গোল্ডেন ৫ পাওয়া ছেলে প্রশান্ত ... চরম ব্রিলিয়্যন্ট... যাহোক পপিকে ৩ মাস প্রশান্ত নিজে গিয়েই এ্যডমিশনের জন্য পড়ালো । অবশেষে পপিকে ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাইয়ে তবে ছাড়ল ।

পরের কথাগুলা খুব গুছিয়ে বলতে পারব না ... মেডিকেলে পড়া মেয়ের সাথে নাকি প্রশান্তর স্ট্যটাস মিলে না ... প্রশান্তর ফিউচার ক্যরিয়ার পপির সাথে ঠিক মিলে না ... প্রশান্তর কোন যোগ্যতা নাই পপির পাশে থাকার ...কোথায় ন্যশনালের ছেলে আর কোথায় মেডিকেলের মেয়ে ...

ঘাটে মাত্র ফেরি এসে থামল আর প্রশান্ত হাসি মুখে একটা সিগারেট ধরিয়ে আমাকে বলল -“আপনি কেন টানা ৩৬ ঘন্টা  করলেন ?তাওএভাবে.”

প্রশান্তর শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আর বললাম না কেন আমি না খেয়ে ৩৬ ঘন্টা টানা  করলাম ...।

তবে প্রশান্ত একটা জিনিস প্রমাণ করেছে যে জীবণ এতটাই বড় যা কিছুতেই নষ্ট হয় না...ছোট বেলায় পড়েছিলাম “শক্তিরবিনাশ বা শেষ নেই রুপান্তর আছে মাত্র” ।

আজ সেই প্রশান্ত অনেক ভাল আছে ... প্রশান্ত ছেলেটাকে আমি চিনি না , আর কোনদিন সামনেও পাব না , খুলনা আসার পথে ছেলেটা আমার পাশের সিটে বসে এসেছিল ।

দুঃবিলাসি বোকাচোদা গুলাকে কানে চড় দিয়ে দেখাতে ইচ্ছা করে দেখ তোরা দেখ ...এটাই জীবণ...

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!