আজ শুধুই ভালোবাসা!


‘ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে তোমারে করেছে রানী’। অথবা ‘আমি ভালোবাসি যারে, সে কী কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে’। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘তোমরা যে বল দিবস-রজনী, ভালোবাসা ভালোবাসা সখী ভালোবাসা কারে কয়, সে তো কেবলই যাতনা নয়’। এভাবে নানারূপে ভালোবাসার বর্ণনা দেয়া হলেও মূলত ভালোবাসার সর্বজনীন কোনো সংজ্ঞা আজও নির্দিষ্ট হয়নি।সেই ভালোবাসাকে চিরঞ্জীব করে রাখতে ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসেছে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ বা ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’।সব ভুলে আজ প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সঙ্গে। চিরচেনা প্রাণের বসন্ত নতুন রঙ দিয়েছে আজ। প্রকৃতি সেজেছে ভালোবাসার আবেশে। ভুলে বিরহ, মুছে বিচ্ছেদ হৃদয়ের আনন্দে স্নান করছে হৃদয়। পাতায় পাতায় লেগেছে রঙ। দুলছে মধুর আরতি। এই তো সেই ক্ষণ ভালোবাসিবার। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হয়ে গেছে ভালোবাসার পারস্পরিক হৃদয় বিনিময়ের পালা। বিশ্ববাসীর সঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশেও তরুণ-তরুণীরা পালন করছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এখানে ভালোবাসা পালনে থাকে বাড়তি বসন্তের ছোঁয়া।ভালোবাসা দিবস এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে নতুন সংযোজন। তরুণ-তরুণীদের কাছে এ এক মহাউত্সব। রাজধানীর বিভিন্ন উদ্যান, একুশে বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কফিশপ, ফাস্টফুড শপ, লংড্রাইভ অথবা নির্জন ঘরের কোণে একান্ত নিভৃতে কাটবে প্রণয়রত তরুণ-তরুণীর মধুরসিঞ্চিত সময়।


উত্সবটির যাত্রা আজকের নয়। সেই প্রাচীন দুটি রোমান প্রথা থেকেই দিবসটির সূত্রপাত। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে ইতিহাসে একাধিক অভিমত পাওয়া যায়। ইন্টারনেট অবলম্বনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ঐতিহাসিক বর্ণনা হলো—এক পাদ্রি ও চিকিত্সক ফাদার সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে দিনটির নামকরণ হয়েছে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। যুদ্ধে আহত সৈনিকদের চিকিত্সার অপরাধে রোমান সম্রাট গথিকাস ২৭০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড দেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেন্টাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লিখে রেখে যান। চিঠির ওপর লেখেন—‘ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন।


আবার ইতিহাসের বর্ণনায় পাওয়া যায়, তৃতীয় শতকে রোমের যাজক ছিলেন দ্বিতীয় ক্লাডিয়াস। সে সময় তার ঘোষণা অমান্য করে প্রথম ভ্যালেন্টাইন গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ২৭০ খ্রিস্টাব্দে বিশপ ভ্যালেন্টাইন ভালোবাসার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেন। তৃতীয় ভ্যালেন্টাইন উত্তর আফ্রিকার একটি রোমান সাম্রাজ্য আত্মোত্সর্গ করেন। ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে এই তিন ভ্যালেন্টাইন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার জন্য আত্মাহুতি দেন। সেসব ইতিহাসের পথ ধরে ৪৯৮ সালে প্রথম জেলসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের ঘোষণা দেন। আজ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা স্থানে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।


দিবসটি সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা পায় প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর আগে প্রতিবছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত ‘জুনো’ উত্সব। রোমান পুরাণে বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এদিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ সালের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে, তখন ‘জুনো’ উত্সব আর সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের দিনটি একসুতোয় গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ হিসেবে উদযাপন করা শুরু হয়।


বাংলাদেশে বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান এই দিবসটিকে পরিচয় করিয়েছিলেন, উত্সব প্রিয় বাঙালি তা সাদরে গ্রহণ করেছে। ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক ও বিরোধীদের নানা প্রচারণা, তারপরেও ভালোবাসা মানে না কোন শাসন। অনেক উত্সবের মধ্যে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ এখন আরেকটি উত্সব।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!