নতুন বর সমাচার

বিয়ে এমন একটি প্রথা যার মাধ্যমে দুই জন নর-নারীর জীবন এক সাথে এক সুতোয় গাঁথা পড়েন। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে বিয়ে শুধু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটি বন্ধনের নাম নয়, বরং বিয়ের মাধ্যমে তাদের পুরো পরিবারের মধ্যেও একটি অটুট সম্পর্কের সূচনা হয়। তবে বিয়েতে সাধারণত নতুন বউটির উপরেই সবার বেশি নজর থাকে, কেননা সে এক পরিবার থেকে আরেক পরিবারে যুক্ত হতে যাচ্ছে। তাই বিয়ের আগে থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে একদিকে শুরু হয় তাকে ভালো স্ত্রী, ভালো বউ করে গরে তোলার প্রক্রিয়া। তো আরেক দিকে থাকে তাকে আপন করে নেয়ার প্রস্তুতি। কিন্তু এত সব কিছুর মধ্যে বর ছেলেটি সাধারণত আড়ালেই পড়ে যান। তার দিকে সেভাবে বিশেষ মনযোগ দেয়া পড়ে না।
আজ আমাদের বিশেষ ফিচার সেই নতুন বরের জন্য...

একটি মেয়েকে ঠিক যতটুকু যত্ন নিয়ে বৈবাহিক, পারিবারিক বা সামাজিক দিকগুলো বোঝান হয়ে থাকে ঠিক ততোটুকুই অবহেলা করা হয়ে থাকে ছেলেটিকে বিয়ে পরবর্তী নতুন পরিস্থিতি ও দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করতে। "ছেলে মানুষ" আস্তে আস্তে সব বুঝে নেবে এই ধারনার বশবর্তী হয়ে তার মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করা হয়না। অথচ হয়ত মেয়েটির মত ছেলেটির মনেও নতুন সম্পর্ক, পরিবার বা দায়িত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন বা ভয় কাজ করতে পারে। একটি মেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের প্রাপ্য সাহায্য পান কিন্তু ছেলেটির জিজ্ঞাসা করার মত বা উত্তর দেবার মত কেও থাকেনা। অনেক সময় পাছে কেও তাকে উপহাস করবে ভেবেও ছেলেটি কাওকে কিছু জিজ্ঞাসা করা থেকে বিরত থাকে। এর ফলে শুধু নতুন জামাইয়ের নয় বিয়ের পরে নতুন বউটিকেও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় ছোট একটা ব্যাপার থেকে অনেক বড় ভুল বুঝাবুঝির কারনও ঘটে যেতে পারে। তাই সংকোচ না করে নতুন দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে আগে থেকে জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

বিয়ের পরে নতুন জীবন শুরু করার পর নতুন সংসারে মানিয়ে নেয়ার মতন গুরুদায়িত্ব সাধারণত নতুন বউটিকেই নিতে হয়। কিন্তু স্বামী যদি সাহায্য করেন তাহলে একে অপরকে আপন করে নেয়া, নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে চলার মানসিকতা দ্রুত গড়ে উঠে। ইদানিং পছন্দের বিয়ের কারনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আগে থেকেই কিছুটা মানিয়ে চলার মানসিকতা থাকে। আবার পারিবারিক ভাবে ঠিক হওয়া বিয়ের ক্ষেত্রেও ছেলে মেয়ের আগে থেকে একে অপরের ব্যাপারে জানার সুযোগ থাকে। তারপরও উভয় বিয়ের ক্ষেত্রেই, বিয়ের আগে থেকে বিয়ে ও বিয়ের পরের জীবন সম্পর্কে ধারনা থাকা আপনার বৈবাহিক সম্পর্ককেই দৃঢ় করতে সাহায্য করবে।

বিয়ের আগে সম্ভব হলে হবু স্ত্রীর সাথে দেখা করুন। তার ভালো মন্দ দিক গুলো বোঝার চেষ্টা করুন। নিজের ভালো দিকগুলো সম্পর্সকে তাকে জানান। বিয়ের পরে অনেক স্ত্রীর অন্যতম অভিযোগ থাকে যে তার স্বামী বদলে গেছে। একটি মেয়েকে "ইমপ্রেস" করার জন্য অনেক ছেলে নিজের সম্পর্কে অনেক সময় এমন অনেক কথা বলে থাকেন বা এমন আচরন করে থাকেন যা সঠিক নয়। বিয়ের পরে যখন সেই ভালো গুণটি বা আচরণটির অভাব দেখা যায় তখন স্ত্রী অনেক ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ করেন। এতে সম্পর্কে জটিলতার সৃষ্টি হয়। তাই শুধু মাত্র ভালো ইম্প্রেশন তৈরি করার জন্য তাকে মিথ্যা কথা বলতে যাবেন না। পরবর্তীতে হয়ত আপনার সেই একটা মিথ্যা কথার কারণে আপনার বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত নড়ে যেতে পারে।যেমনই হোক নিজের মন্দ ব্যাপারগুলোও তাকে জানান ভালোগুলোর পাশাপাশি। উনি অবশ্যই বুঝবেন। আর যদি বিয়ের আগে সম্ভব না হয় তবে বিয়ের পরপর তার সাথে এসব বিষয়ে কথা বলে নিন। তার পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। তাকে আপনার পছন্দ অপছন্দগুল জানানর চেষ্টা করুন। আপনার পরিবারের রীতিনীতি সম্পর্কে তাকে জানিয়ে দিন এবং উনার কাছে থেকে উনার পরিবারের রীতিনীতি সম্পর্কে জেনে নিন এবং পালনের চেষ্টা করুন।

যেহেতু বিয়ের পরে আপনার জীবনে নতুন সঙ্গী আসছেন তাই নিজের জীবনধারা কিছুটা হলেও বদলে ফেলতে হয়। স্ত্রী, সংসারে সময় দেয়ার পর হয়ত বন্ধুদের সাথে আগের মত আড্ডা দেয়া, বা হুট করে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মতন ব্যাপারগুলো আর করা হয়ে উঠে না। নিজের জীবনে এই আকস্মিক পরিবর্তনে নিজেকে অনেক সময় অসহায় মনে হতে পারে। এই পরিবর্তনটি ধীরেধীরে ঘটালে কিন্তু এমন পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। এজন্য বন্ধুদের সাহায্য নিতে পারেন। আপনার স্ত্রীকেও ব্যাপারটি জানান। সম্ভব হলে স্ত্রীকে নিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন।একি ভাবে স্ত্রীর বন্ধুদের সাথেও সদ্ভাব বজায় রাখুন।

বিয়ের পরে আপনি যেভাবে আশা করেন যে আপনার স্ত্রী আপনার পরিবারের একজন হয়ে যাবেন ঠিক সেভাবেই আপনার স্ত্রী আশা করেন আপনি উনার পরিবারকে আপন করে নেবেন। তাই স্ত্রীর পরিবারের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করবেন। বিয়ে হয়ে গেছে তাই জামাই হিসাবে যা করব তাই ঠিক এধরনের মনোভব না রাখাই ভালো।মনে রাখবেন আপনি আপনার স্ত্রীর কাছে পরিবারের একজন হিসাবে যা আশা করবেন ঠিক সেটাই উনাকে দেয়াটাও কিন্তু আপনার কর্তব্য। তাই নতুন পরিবারকে আপন করে নেয়ার চেষ্টা করুন।স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের মাঝে কারো ব্যাপারে কিছু জানতে হলে আপনার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন। শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে আদবের সাথে কথা বলুন, তাদের খোঁজ খবর নিন। চেষ্টা করুন স্ত্রীর পরিবারের একজন হয়ে ওঠার।আপনার অল্প প্রচেষ্টাই আপনাকে নতুন পরিবারের সাথে দ্রুত যুক্ত হতে সাহায্য করবে।

এত গেল ঘরের কথা। এবার আসি সামাজিকতার কথায়। বিয়ের পরে প্রথম যে সামাজিকতার মুখমুখি হতে হয় তা হল দাওয়াত। এখানে যেমন নতুন বউকে সবার সাথে পরিচয় করানো হয়ে থাকে তেমন নতুন জামাইকেও সবার সাথে পরিচিত হতে হয়। খারাপ শোনালেও এসব অনুষ্ঠানেই সাধারণত নতুন দম্পতিকে একে অপরের জন্য কতটুকু মানানসই তা যাচায় করে থাকে অনেকে।তাই কিছুটা সাবধানী হওয়া জরুরি। দাওয়াতে যাওয়ার আগে জেনে নিন কোথায় যাচ্ছেন। দুরের রাস্তা হলে বা ট্রাফিকের সমস্যা থাকলে হাতে কিছু সময় নিয়ে বের হওয়া ভালো। যেখানে যাচ্ছেন তাদের মানসিকতা অনুসারে কিছু উপহার সাথে নিয়ে নেয়া ভালো হবে। ছোট বাচ্চা থাকলে অনেক সময় চকলেট নিয়ে নিতে পারেন। পোশাকটি সাধারণত ফরমাল হলেই ভালো হয়। তবে নিজের আরামের দিকেও খেয়াল রাখবেন। কাওকে ইমপ্রেস করতে গিয়ে নিজেকে বিড়ম্বনার দিকে ঠেলে দেয়া ঠিক নয়। সবার সাথে ভালো ভাবে কথা বলুন। বিয়ের পরপরই হয়ত সবাইকে চিনে ফেলা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন, বা চিনতে না পারলে আদবের সাথে সেটা উনাকে জানান। নিজের আত্মীয় হলে স্ত্রীকে সাহায্য করুন। সবার সাথে স্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দিন।

বিয়ের আগেই সব জেনে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে এমন কোন কথা নেই, তবে বিয়ে যেহেতু অনেক বড় একটি প্রতিষ্ঠান এবং একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া এই প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় তাই কিছু কিছু ব্যাপারে আগে থেকে ধারনা থাকলে তা একটি মজবুত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন আপনার ছোট একটি প্রচেষ্টা আপনাকে একটি সুন্দর বৈবাহিক জীবন উপহার দিতে পারে।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!