সঙ্গী যখন কর্মজীবী


আমাদের জীবনে জীবনসঙ্গীই হল এমন একজন ব্যক্তি যার হাত ধরে জীবন সাজাবার সুযোগ থাকে যা অন্য কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে থাকেনা। তাই অন্য সব সম্পর্কের থেকে এই সম্পর্কে সময় ও শ্রম দিতে হবে অনেক বেশি। আজকাল সংসারে সচ্ছলতা আনতে স্বামী স্ত্রী দুজনেই চাকরি করে থাকেন। তাতে পরিবারে ও একে অন্যকে সময় দেয়া হয় অনেক কম। ঠিক মত সময় না দেয়ার ফলে ছোটখাটো মতের অমিল থেকে অনেক বড় আকারের ঝগড়াও অনেক সময় ঘটে যায় যা সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে তুলতে যথেষ্ট।

রিনা ও রাসেল ভালবেসেই বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর পর সংসারের হাল ধরার জন্য রাসেল অতিরিক্ত কাজ করতে শুরু করে যার ফলে রিনাকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়ে উঠে না। রিনাও প্রথমে চেষ্টা করেছিল রাসেলকে কাজের জন্য ছাড় দিতে। কিন্তু সেও এক সময় ক্লান্ত হয়ে নিজেকে অন্যান্য কাজের সাথে যুক্ত করে ফেলে। এক পর্যায়ে এসব নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু হয়। তাদের সম্পর্কের খুব দ্রুত অবনতি ঘটে। ফলাফল বিবাহবিচ্ছেদ। অথচ ২ জনে মিলে চেষ্টা করলে তাদের এই পরিণতির স্বীকার হতে হত না। এটা কাল্পনিক কাহিনী, কিন্তু এমনটাই ঘটে সাধারণত।

একে অপরের সাথে যোগাযোগ হল সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক বড় নিয়ামক। সারা দিন যায়ই করেন না কেন, বাসাই এসে সঙ্গীর সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন। এর মানে এই নয় যে অফিসের দরকারি তথ্য তার সাথে শেয়ার করতে হবে, তবে ছোটখাটো মজার ব্যাপার ঘটলে বা কাজের চাপ বেশি হলে তা তাকে জানাতে পারেন।

স্বামী স্ত্রী দুজনেই চাকুরীজীবী হলে দুপুরে হয়ত এক সাথে খাবার খাওয়াটা স্বপ্নের মতই মনে হয়। তবে মাঝে মাঝে লাঞ্চ টাইমে দুজনে মিলে এক সাথে কোথাও বসে খেতে পারেন। এ জন্য আগে থেকে প্ল্যান করে রাখতে পারেন। এভাবে এক সাথে বাইরে কোথাও খেলে একে অন্যের সাথে সময় কাটানো হবে, সেই সাথে বজায় থাকবে রোমাঞ্চ।

হুট করে ছুটি পেয়ে গেলেন, ভাবছেন কিছু না করে সারাদিন ঘুমিয়েই কাটাই। শুধু ঘুমিয়ে কাটালে হয়ত শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে, কিন্তু মনের ক্লান্তি কি দূর হবে তাতে? তাই শুধু ঘুমিয়ে বা রেস্ট না করে আপনার সঙ্গীকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন ঘুরতে। আর ঘুরতে যাওয়ার মত জায়গা না থাকলে মুভি দেখতেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাইরেই খেয়ে নিতে পারেন। তবে ভিড় এড়াতে চাইলে বাসাতেই নিজেদের মত করে আয়জন করে নিন আর একে অন্যের সাথে সময় কাটান।

বাসায় কিছু সাধারন নিয়ম চালু করতে পারেন যেন পারিবারিক সময় পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেন। যেমন শুতে যাওয়ার সময় ল্যাপটপ ব্যাবহার করা যাবেনা, বা খাবার টেবিলে বসে ফোন ধরতে মানা। এসব ছোটখাটো নিয়ম সঙ্গীকে পারিবারিক সম্পর্কের মূল্য বোঝাতে কাজে দিবে।

বাসায় যে শুধু সময় কাটাতে হবে, কাজ করা যাবে না তা কিন্তু না। অনেক সময় বাসায় বসে অফিসের দরকারি কোন কাজ করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাকে অবশই ছাড় দিবেন। এছাড়া বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, বা নিজেকে কিছু সময় দেয়া এসব ব্যাপারেও ছাড় দিতে হবে। কারন শুধুমাত্র আপনার সাথেই তাকে সময় কাটাতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই এবং এমন মনে করাটাও উচিত হবেনা। যদিয়ও কাজের জন্য কোন সময় নেই কিন্তু আড্ডা দেয়া বা একান্ত কিছু মুহূর্ত পার করার জন্য সপ্তাহের একটি বা দুইটি দিন আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখতে পারেন। এটা দু'জনার জন্যই প্রযোজ্য।

বাস্তবতাকে স্বীকার করতে শিখুন। মনে রাখবেন আপনার সম্পর্ককে যদি বিচার করতে হয় তবে নিজের সাথেই করুন। আরেকজনের সম্পর্ক দিয়ে নিজের সম্পর্ককে বিচার করতে যাবেননা। আপনার মা আপনার বাবার জন্য এইটা করল, আপনার স্ত্রী কেন পারে না বা আপনার বোনের স্বামী তাকে ওটা এনে দিল, আপনার স্বামী কেন দিলোনা এসব নিয়ে আপনার সঙ্গীকে কটাক্ষ করতে যাবেন না। বাইরে থেকে দেখতে আপাত সুখি মনে হলেও তাদের মধ্যেও সমস্যা বিরাজ করতে পারে যা হয়ত আপনাদের মধ্যে নেই।
প্রত্যেক সম্পর্ককেই একটা সময় খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। যদি কখনো এমন হয় তবে আগে নিজের সাথেই প্রশ্ন করুন যে সেই সম্পর্ক থেকে আপনি কি আশা করেন এবং আপনি আপনার সঙ্গীকে কি দিতে পারবেন। ঝোঁকের বসে এমন কোন অঙ্গীকার করতে যাবেন না যা আপনার জন্য রক্ষা করা কঠিন হতে পারে।

আপনার সঙ্গীকে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববেন না। তাকে আপনার সম্পুরক ভেবে তার ভালমন্দের খেয়াল রাখবেন। একে অপরের খেয়াল রাখলেই এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলেই একটি সুন্দর সম্পর্ক সূচিত হয়।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!