শাড়িতে আড়াল হোক ভারী গড়ন

শাড়ি...
১২হাত লম্বা সেলাইবিহীন এই পরিধেয় বস্ত্র বাঙালি নারীদের কাছে আজ আর শুধু পোশাক হিসেবে নয়, বরং ঐতিহ্য হিসেবেই বিবেচিত হয়। শাড়ি পরতে ভালোবাসেন না এমন নারীর সংখ্যা খুব কমই হবে। যে কোন অনুষ্ঠানে অথবা অবসরের দিনে বাসায় শাড়ি পরতে পছন্দ করেন না এমন নারীর দেখা মেলা ভার। শারীরিক গড়ন ভেদে সকল বয়সী নারীদের পছন্দের পোশাকের তালিকায় আছে এই শাড়ি। তবে যাদের গড়ন একটু ভারীর দিকে তারা শাড়ি পরতে পছন্দ করলেও নিজেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন, নিজেকে কেমন দেখাবে এসব ভেবে শাড়ি পরাটা এড়িয়েই চলতে চান অনেক সময়। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটালেই কিন্তু ভারী গড়নের নারীরাও শাড়িতে নিজেকে তুলে ধরতে পারেন খুব সুন্দর ভাবে। এসব নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন-

১. পরুন শাড়ি জর্জেট-সিল্কেরঃ
শাড়ি পরার আগে প্রথমেই যে জিনিসটি খেয়াল রাখবেন তা হলো আপনি যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ভারি গড়নের হন তবে শাড়ির ম্যাটেরিয়াল থেকে ভারী, মোটা, কাপড় অবশ্যই বাদ দিতে হবে। সেই সাথে এমন কাপড়ও বাদ দিন যা পরলে আপনাকে আরও ভারী দেখাবে। সেই সাথে যেসব শাড়ি পরলে, পরার পরে তা ফুলে থাকবে সে সব কাপড়ের শাড়িও পরতে যাবেন না, যেমন মসলিন, খাদি ইত্যাদি। অনেকের জন্য মাড় দেয়া সুতি শাড়ি পরতে আরামদায়ক হলেও তা না ভারী গড়নের নারীদের এড়িয়ে চলাই ভাল। কারণ এতে আপনার ভারিত্ত্ব বেশি বোঝা যাবে। এর চাইতে বাছাই করুন হালকা ও শরীরের সাথে মানিয়ে যাবে সহজে এমন সব কাপড়ের শাড়ি কারণ এসব কাপড়ের শাড়ি পরলে তা ফুলে থাকবেনা। শরীরের সাথে সুন্দর মানিয়ে যায় এমন কাপড়ের শারির মধ্যে আছে জর্জেট, সিল্ক ইত্যাদি। যদি নিতান্তই সুতির মধ্যে কিছু পরতে চান তবে কোটা শাড়ি ভারী গড়নের নারীদের জন্য ভাল হবে।

২. অতিরিক্ত কাজ করা শাড়ি এড়িয়ে চলুনঃ
শাড়ির কাপড়ের পাশাপাশি আরও যে একটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে তা হল অতিরিক্ত কাজ করা শাড়িতে ভারী গড়নের নারীদের আরও ভারী দেখাবে। তাই যথাসম্ভব বেশি কাজ করা শাড়ি এবং একই সাথে পুতি-চুমকির কাজ করা শাড়ি এরিয়ে চললেই ভালো হবে। কারন এসব শাড়িতে আপনাকে আরও মোটা দেখাবে। কাজ করা শাড়ি পরতে চাইলে হালকা কাজের শাড়ি পরতে পারেন। এতে আপনার মোটাভাব অনেকটাই কম লাগবে। সব থেকে ভাল উপায়্ হল কাজ করা শাড়ির বদলে প্রিন্টেড শাড়ি পরা। এতে শাড়িতে ভেরিয়েশন আসবে সেই সাথে মোটাও দেখাবেনা আপনাকে।
৩. রঙ হতে উজ্জল এবং গাড়ঃ
শাড়ির কাপড় বাছাইয়ের পরে আসি শাড়ির রঙের কথায়। রঙ বাছাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। চাইলেই যে কোন রঙের শাড়ি পরতে পারেন। তবে বেশি চাকচিক্যময় কাপড়ের শাড়ি এড়িয়ে গেলেই ভাল করবেন। যেমন উজ্জ্বল সোনালি, কটকটে রুপালি ইত্যাদি রঙগুলি এড়িয়ে চলাই সব থেকে ভাল হবে। এসব রঙ মানুষের নজর আপনার দিকে বেশি আকৃষ্ট করবে সেই সাথে এসব রঙের ব্যবহারে আপনার গড়ন আরও মোটা লাগবে। তবে যে কোন রঙের গাড় ও উজ্জ্বল শেড ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে। যেমন লাল, সবুজ, খয়েরি বা কালো ইত্যাদি রঙ্গে আপনার ব্যক্তিত্ত্ব সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে সেই সাথে এসব রঙের একটু গাড় শেডের ব্যবহার আপনার ভারি গড়ন অনেকটাই আড়াল করতে সক্ষম হবে। 

৪. শাড়ির পরনের ঢঙে ঢাকা পড়ুক আপনার গড়নঃ
শাড়ির কাপড়, রঙ, ম্যাটেরিয়াল সব তো ঠিক করে ফেললেন। কিন্তু তারপরও শাড়িতে আপনাকে নাও মানাতে পারে। সব ঠিকঠাক করেও যদি এমনটা হয় তবে মন খারাপ হওয়াটাই সাভাবিক নয় কি? সব তো নিয়ম মেনেই করলেন তাহলে ভুলটা হল কোথায় তাই হয়তো ভাবছেন। আসলে ভুলটা হয়েছে আপনার শাড়ি পরার স্টাইলে। শাড়ি পরার সময় মনে রাখবেন যেনতেন ভাবে শাড়ি পরলেই কিন্তু হবেনা। শাড়ি পড়তে হবে টিপটপ গোছানোভাবে। শাড়ি পরার প্রথম পর্যায় থেকেই এমনভাবে শাড়ি পড়তে হবে যেন কোথাও দরকারের থেকে অতিরিক্ত ঢোলা বা লুজ হয়ে না থাকে। যত বেশি গুছিয়ে শাড়ি পড়তে পারবেন ততবেশি সুন্দর দেখাবে আপনাকে। এছাড়া যাদের গড়ন যদি একটু বেশি ভারীর দিকে তারা চেষ্টা করবেন সম্পূর্ণ শাড়ি পিনআপ করে আপনার শরীরের অনাবৃত অংশগুলো ঢেকে নিতে। এতে আপনার শরীরের ভারী ভাব অনেকটাই আড়াল হয়ে যাবে। 

৫. আচলের বাঁধনে হয়ে উঠুন সুন্দরঃ
শাড়ি যেমন সুন্দর পিনাপ করে পড়তে হবে তেমনি শাড়ির আঁচল ছেড়ে না রেখে পিনআপ করে পড়তে পারেন। এতে করে আপনাকে অনেকটাই শুকনা দেখাতে পারে। শাড়ির আঁচল সুন্দর করে পিন করে আটকে নিন। পিন করার সময়ে কুচিগুলো বেশি বড় করতে যাবেন না, এমনটা করলে আপনাকে আরও বেশি ভারী দেখাতে পারে। ছোট কুচি দিয়ে সুন্দর করে পিন করলে স্মার্টনেসটা যেমন ফুটে উঠবে তেমনই সুন্দরও লাগবে অনেক। 

৬. অন্যান্য অনুষঙ্গের দিকেও থাকতে হবে নজরঃ
শাড়ির অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ হচ্ছে ব্লাউজ। শাড়ির সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে শাড়ির পাশাপাশি এখন চলছে নানা ধাঁচের ও নানা ডিজাইনের ব্লাউজের সুন্দর ব্যবহার। যেহেতু ব্লাউজ নির্বাচন করা সঠিক শাড়ি নির্বাচন করার মতই গুরুত্বপূর্ণ তাই শাড়ির পাশাপাশি ব্লাউজের ব্যবহারের দিকেও তীক্ষ্ণ নজর দিতে হবে। মনে রাখবেন, যেহেতু আপনার গড়ন ভারির দিকে তাই আপনার মুল লক্ষ্য হতে হবে শাড়িতে নিজের সৌন্দর্যকে নাকি নিজের ভারি গড়নটি সবার সামনে তুলে ধরা। তাই যত ভালই লাগুক না কেন লম্বায় ছোট ব্লাউজ এড়িয়ে চলতে হবে সবার আগে। পরতে হবে লম্বা ধাঁচের ব্লাউজ। সেই সাথে বেশি ছড়ানো গলার ব্লাউজও এড়িয়ে চলবেন। একই রকমভাবে বেশি বড় গলার ব্লাউজটাও এড়িয়ে চললে ভালো হবে। তবে শখের কাছে সবাইকেই কখনো কখনো হার মানতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে এমন ব্লাউজ পড়তে চাইলে হতে হবে একটু কৌশলী। গোল গলার ব্লাউজ না পরে পরতে পারেন গ্লাস শেপের বা ছড়ানো ভি শেপের ব্লাউস। এতে আপনার পিঠ ও বুকের অতিরিক্ত মোটাভাব ঢেকে গিয়ে সুন্দর লাগবে অনেক। তবে ছোট হাতা বা হাতা ছাড়া ব্লাউজ একদম এড়িয়ে চলতে হবে। ব্লাউজের হাতা সব সময় কনুই পর্যন্ত বা থ্রি কোয়ার্টার, ফোর কোয়ার্টার বা ফুল হাতা রাখতে পারেন। হাতা ব্লাউজের কাপড়ের হলে যদি মোটা লাগে তাহলে হাতায় জর্জেট, নেট ইত্যাদি কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। এতে নতুনত্বও আসবে। এছাড়া সায়া বা পেটিকোট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফিশকাটের পেটিকোট নির্বাচন করুন। এতে আপনার শাড়ি নিচের দিকে ফুলে না থেকে নিচের দিকে সুন্দরভাবে সেট হয়ে থাকবে। 

৭. জুতা হোক হিল সমৃদ্ধঃ
শাড়ি পরার একটি সুবিধা হল পায়ের নিচ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনি চাইলে লম্বা বা উচু হিল পড়তে পারেন অনায়াসে। এতে দুইটি উপকার পেতে পারেন। নিজের উচ্চতা বাড়িয়ে তোলা যায় কিছুটা। আবার শাড়ির নিচে হিলের ব্যবহারে নিজের মোটাভাব কমিয়ে সুন্দর করে তুলেও ধরা যায়। তবে হিল পরে হাঁটাচলার সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে উচু ফ্ল্যাট হিল ব্যবহার করতে পারেন।

৮. অলঙ্কার হোক হালকাঃ
শাড়ির সাথে গয়না নির্বাচনের ক্ষেত্রে কৌশলী হন। গলায় ভারি কিছু না পরে হালকা চেন ও সেই সাথে লকেট বা একটি মোটা চেন ব্যবহার করতে পারেন। সেই সাথে কানে দিন বড়সর এক জোড়া দুল। চাইলে পরতে পারেন বড় ঝুমকাও। এতে আপনাকে সুন্দর দেখাবে অনেক। সেই সাথে হাতে দিতে পারেন এক গাছি চুড়ি ও আঙ্গুলে আংটি। মোটা কথা শাড়ির উপরে যেসব গহনার ব্যবহার হয় যেমন গলার মালা বা কোমরের বিছা তা যথা সম্ভব সাধারন রাখুন। এতে সেসব দিকে নজর কম যাবে। ফলে আপনার শারীরিক গড়নের দিকেও নজর কম যাবে। 

তবে এত সব কথার মুল কথা হল আপনি যদি শাড়ি পরতে চান তবে নির্দ্বিধায় শাড়ি পরুন। দোমনা ভাব নিয়ে শাড়ি পরলে তা কিন্তু আপনার ব্যাক্তিতেই প্রকাশ পাবে। শাড়ি পরার পরে যদি আপনি নিজেকে নিয়ে খুশি না থাকেন তবে মানুষের চোখেও কিন্তু সেইটাই ধরা পড়বে। তাই যাই পরবেন না কেন সাবধানি হয়ে যেমন বেছে পরতে হবে তেমনই পরার পরে নিজেকে নিয়ে থাকতে হবে আত্মবিশ্বাসী। তবেই শাড়িতে প্রকাশ পাবে আপনার আসল সৌন্দর্য।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!