গতকালই তো ১০০০ টাকা নিলি!!""দোস্ত বিশ্বাস কর, ছিনতাইকারী ধরছিলো ... পকেটফাঁকা ...বইটা কিনতেআমার টাকা লাগবেরে ...দে না প্লিজ ... সামনেরমাসেই দিয়ে দিবো!!"খুব মনোযোগ দিয়ে অর্কর চোখের দিকে তাকায়নিশাত ... অর্করচোখে মিথ্যার কোন ছাপ নেই, যদিও নিশাতজানে অর্ক মিথ্যা বলছে ... খুব আত্মবিশ্বাসেরসাথে মিথ্যা বলছে...এরকমভাবেমিথ্যা বললে সেটাধরাযায় না !!
নিশাত হ্যান্ড-ব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার দুটো নোটবেরকরে অর্কর হাতে গুঁজে দেয় ... অর্করমুখটা ১০০ওয়াটের বাতিরমত জ্বলে ওঠে !!"থ্যাঙ্কস দোস্ত ... তোকে আমিপরের মাসেই সবশোধ করে দেব !!"নিশাত মুচকি হাসে ... নিশাতের হাসির মাঝে একধরণেরক্লান্তির ছাপ ... ক্লান্তি আসাটাই স্বাভাবিক...মোটামুটি ৬মাস ধরে এই একই নাটক মঞ্চায়িত হয় ওদেরদুইজনের মাঝে ...একই সংলাপ ... একই অভিনেতা-অভিনেত্রী ...এবং সেই একইপরিণতি !! নিশাত উচ্চবিত্ত পরিবারেরমেয়ে...বাবা লন্ডন থাকে ...অর্থের অভাব নেই ... এরকমএকটা মেয়েকে বান্ধবী হিসেবে পেয়ে অর্করজীবনটা পোয়াবারো ... প্রচন্ডবাজে খরচকরে ছেলেটা ...নিশাতের ধারণা নেশাটেশাকরে হয়তো ... বলিরপাঠা হয়নিশাত ...
"সামনের মাসেই দিয়েদেব" -বলে আরটাকা দেয় না অর্ক ... কোন এক অদ্ভূতকারণে অর্ককে কিছুবলতে পারে না নিশাত !!অর্কর প্রতি নিশাতের সফট কর্ণারটা অন্যকারণে ... পরীক্ষারহলে নিশ্চিত একটা নকলের দায়থেকে নিশাতকে বাঁচিয়েছিলঅর্ক ... পুরো নকলের চিরকুটটা নিজেরবলে দাবী করে ৬ মাসেরজন্য ভার্সিটি থেকে নিষিদ্ধ হয় অর্ক ... ঠিককী কারণে সে এই দায় নিয়েছিলো, তা নিশাতজানে না !!... ... ...খুব সকাল সকাল কলিং বেলের আওয়াজে ঘুমভাঙ্গে নিশাতের ...দরজা খুলে দেখে হাসিমুখে বাইরে অর্ক দাঁড়ানো !!এক ধরণের বিরক্তি নিয়ে নিশাত জিজ্ঞেস করে,"টাকা লাগবে ??" নিশাতকে অবাক করে দিয়ে অর্কনা-সূচক মাথা নাড়ে !!"তাহলে ??""ভিতরে আসতে বলবি না ??"
নিশাত ইতস্তত করে ... বাড়িতে কেউ নেই ...তাছাড়া অর্ককখনোই এর আগে বাড়িতে ঢুকতে চাইতো না ...টাকা বা নোটবা বই যা লাগে, নিয়ে দরজা থেকেই ফিরে যেত! "বসএখানে !!""একটু চা খাওয়াবি, মাথাটা ধরে আছে!!"নিশাত চা নিয়ে আসে ... এর আগেওওরা পাশাপাশি বসে চা খেয়েছে ... কখনো নিশাতেরঅস্বস্তিলাগে নি ... আজকে কেমনজানি লাগছিলো ...সে অস্বস্তিকে নতুন মাত্রাদিয়ে অর্ক বললো,"নিশাত !! তোকে একটা কথা বলার ছিলো !!"নিশাত জানে অর্ক কী বলবে ... এটাই বাকি ছিলো ...নিশাতজানে একটা সময় অর্কর মনে ভালোবাসা জন্মাবে ...বাম হাতে একটা হাতের স্পর্শ পায় নিশাত ...আচমকা ডান হাতথেকে চায়েরকাপটা পড়ে যায় ... অর্ককে কিছুবলারসুযোগনাদিয়ে চিৎকার করে উঠে নিশাত, "অর্ক !! তুই এইমূহুর্তে এখান থেকে চলে যা... আর কক্ষনো আমারসামনে আসবি না ... কক্ষনো না!!"
অর্ক ধীর পায়ে বের হয়ে যায় ...তার চোখে একধরণের বিস্ময়মাখা অশ্রু টলমল করছিলো !!... ... ...দুই দিনের মাঝেই নিশাতের ফ্লাইট... বাবা-মা এরসাথে লন্ডনে পাকাপোক্তভাবে থাকবে সে !!ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে তৈরি হয় নিশাত ... অর্কর ৬২টা মিসকলওতার মনে কোন দাগ কাটতে পারে না ...মোবাইলটা রেখে যাওয়ার সময় একটা মেসেজআসে ... নিশাতেরঅনেক দেরি হয়ে গেছে ...মোবাইলটা ড্রয়ারে ফেলে রওনা হয়সে !! ... ... ...হাসপাতালের বেডে লাইফসাপোর্টে বাচিয়ে রাখা হয়েছে একটা ছেলেকে ...ছেলেটারবালিশের পাশে একটা মোবাইলে"নিশাত"নামে একটা মেয়েকে একটা মেসেজ পাঠানো হয়েছে...মেসেজটাএরকমঃ "নিশাত ... আমাকে ভুল বুঝিসনা ... সেদিন তোরহাতটা ধরে ক্ষমা চাইতে এসেছিলাম ... এতদিন তোরকাছথেকে যতবার টাকা নিয়েছিলাম, সব আমার নিজেরচিকিৎসারজন্য ... আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম, নিশাত ... ডাক্তারবলছিলো,২দিনেরমাঝে হসপিটালে ভর্তি না হলে আমাকে বাচানো যাবেআমি শেষবারের মততোকে বলতে এসেছিলাম ... তুইশুনতে চাইলি না !!নিশাত, আমাকে ক্ষমা করে দিস...
আমারবাবা আমার জন্যব্যাংকে ২০ হাজার টাকা রেখে গিয়েছিলো ...ওটা দিয়ে তোরটাকার ঋণ পরিশোধ করে গেলাম... তবে এই জীবনেরযে মূহুর্তগুলো আমায় দিয়েছিলি, ঐ ঋণ শোধকরতে পারলাম না ... ভালো থাকিস!!"... ... ...এয়ারপোর্টে ডাক আসছে ... ফ্লাইট ০১৪৫ এরযাত্রীরা অগ্রসরহচ্ছে ... ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আনমনা হয়ে যায়একটা মেয়ে ... ঘুরে এয়ারপোর্টের অন্যদিকে দৌড়ে যেতেথাকে ..."ড্রাইভার !!তাড়াতাড়ি বাসার দিকেচলেন!!"হতভম্ব ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে নিশাতকে নিয়ে বাসারদিকে রওনা হয়!!খুব বেশি দেরি হয়ে গেলো কী?? ... আকাশের উপরেরতিনিইভালো জানেন!!
0 comments:
Post a Comment