রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকে বিপজ্জনক রাসায়নিক


এনার্জি ড্রিংক’নামে মানুষ যা খাচ্ছে তা কতটুকু স্বাস্থ্যকর? যারা বাজার থেকে এসব এনার্জি ড্রিংক পান করছেন তারা হয়তো ভাবছেন যেহেতু এ ধরনের পণ্যের মান তদারক করছে সরকারি সংস্থা বিএসটিআই সেহেতু দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কয়েকটি এনার্জি ড্রিংকে বিপজ্জনক মাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ সোডিয়াম বেনজয়েটসহ ভয়ংকর মাদক আফিমের উপস্থিতি রয়েছে। মাসব্যাপী অনুসন্ধানে এমন বিস্ময়কর তথ্য মিলেছে। আর বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা এ বিষয়ে গভীর শংকা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কোমল পানীয় পান করলে কিডনি বিকল হতে পারে, নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও


থ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংক নামের একটি কোমল পানীয়তে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম বেনজয়েট মেশানো। এটি এক ধরনের প্রিজারভেটিভ। বিএসটিআই কর্তৃক নির্ধারিত মান (বিডিএস) অনুযায়ী সোডিয়াম বেনজয়েট প্রতি লিটারে ১৬০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। এই মাত্রা অতিক্রম করলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এদিকে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকসহ বাজারে প্রচলিত কয়েকটি কোমল পানীয়তে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম বেনজয়েট মেশানো হচ্ছে।


এ তথ্য যাচাই করার জন্য সম্প্রতি রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকের একটি নমুনা সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় উদ্বেগজনক তথ্য বেরিয়ে আসে। এতে দেখা যায়, প্রতি লিটার রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকে সোডিয়াম বেনজয়েট থাকে ২১৩ মিলিগ্রাম। এরপর এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন ও খ্যাতিমান চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, সোডিয়াম বেনজয়েট উচ্চমাত্রায় গ্রহণ করলে মানুষের পরিপাকতন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়া কিডনি অকেজো হওয়া, আলসার হওয়া বা গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে গর্ভপাত বা অটিস্টিক শিশু জন্মের আশংকা রয়েছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ তালুকদার বলেন, সোডিয়াম বেনজয়েট এক ধরনের প্রিজারভেটিভ যা মানবদেহে খাদ্য হজমে সহায়তাকারী উপকারী ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে দেয়। ফলে হজমের সমস্যা হয়। এক পর্যায়ে কিডনি ও লিভার আক্রান্ত হয়।


ব্র্যান্ডটি কেন প্রিয়: বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের যতগুলো এনার্জি ড্রিংক রয়েছে, তার মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকের রমরমা চাহিদা লক্ষণীয়। এর কারণ জানতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাজার ঘুরে অনুসন্ধান চালানো হয়। এই অনুসন্ধানে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে এর আসল রহস্য বেরিয়ে আসে।


রাজধানীর গাবতলী টার্মিনালে অবস্থিত অনেক মুদি দোকানদারদের মধ্যে কয়েকজনের কাছে কোন ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংক বেশি বিক্রি হয় জানতে চাওয়া হলে তারা এক বাক্যে জানান, ‘সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংক। সকালে এক কার্টন আনলে বিকালেই শেষ হয়ে যায়।’ এত চাহিদার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, ‘ভাই, এর বেশিরভাগ কাস্টমার ইয়ং পোলাপান। এডা খাইলে নাকি তাদের শরীর চাঙ্গা হয়, ফিলিংস আসে। জানিনা এডার ভিতরে কি আছে। মাঝে মধ্যে আমরাও খাই। খাওয়ার পর কেমন জানি নেশা নেশা লাগে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে মুদি দোকানি ফয়সাল আলম বলেন, ‘বাজারে টাইগার আসার পর অন্যান্য ব্র্যান্ডের কোমল পানীয়র বাজার কিছুটা পড়ে গেছে। সবাই শুধু টাইগার চায়।’


এদিকে দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে দেখা গেল কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক এসে ঠিকই এনার্জি ড্রিংক কিনলেন। দোকানের সামনে বেঞ্চে বসে তারা যখন এই কোমল পানীয় পান করছিলেন তখন তাদের সঙ্গে যুগান্তর প্রতিবেদকের কথা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘ভাই, টাইগার এক আজব জিনিস। এটি খাইলে দারুণ ফিলিংস হয়। গাড়ি যত জোরে চলে ততই ফুর্তি ফুর্তি লাগে।’


ফিলিংসের কারণ: এনার্জি ড্রিংক মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিএসটিআই’র একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকে উচ্চমাত্রায় ক্যাফেইন রয়েছে। ক্যাফেইন একটি উত্তেজক রাসায়নিক। মাদক শ্রেণীভুক্ত ১১টি উপাদানের অন্যতম এই ক্যাফেইন। তাই ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করলে এক ধরনের নেশা নেশা ভাব হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসক ড. আকতারুজ্জামান সেলিম যুগান্তরকে বলেন, ১২ বছরের নিচে কেউ উচ্চমাত্রায় ক্যাফেইন মেশানো পানীয় পান করলে তার সারারাত ঘুম হবে না। দীর্ঘদিন এ ধরনের পানীয় পান করতে থাকলে তার ক্যাফেইন আসক্তি দেখা দেবে।


তার স্বাভাবিক জীবনযাপনও বিঘিœত হবে। এক পর্যায়ে সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়বে। তবে বিএসটিআই’র সূত্র জানিয়েছে, এনার্জি ড্রিংক তথা কার্বনেটেড বেভারেজে ক্যাফেইনের মাত্রা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। বিডিএস ১১২৩ অনুযায়ী কোনোভাবেই এটি প্রতি লিটারে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি মেশানো যাবে না। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ক্যাফেইনকে কালো তালিকাভুক্ত করায় বিএসটিআই কার্বনেটেড বেভারেজে ক্যাফেইনের মাত্রা কমিয়ে ১৪৫ মিলিগ্রামে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। বিএসটিআই’র পরিচালক (মান) ড. সৈয়দ হুমায়ুন কবির বলেন, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ক্যাফেইনের পরিমাণ প্রতি লিটারে ১৩০ থেকে ১৪৫ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কার্বনেটেড বেভারেজে ক্যাফেইনের মাত্রা ১৪৫ এবং ইউরোপে এটির মাত্রা ১৩০-এর বেশি নয়। কিন্তু ক্যাফেইনের মাত্রা কমানোর এ প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে কার্বনেটেড বেভারেজ উৎপাদনকারীরা। তারা আরও বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন মেশানোর পক্ষে বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে বিএসটিআই’র ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে।


‘সাহস’ নেই: রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকে আরও কোনো ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য যুগান্তরের অনুসন্ধান টিমের সদস্যরা দেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি পরীক্ষাগারের দ্বারস্থ হয়। টাইগার ব্র্যান্ডের এই এনার্জি ড্রিংক পরীক্ষার জন্য নমুনাও দেয়া হয়। প্রথমে জনস্বার্থের কথা বলে রাসায়নিক পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা যুগান্তরের এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে নমুনা গ্রহণ করেন। কিন্তু কয়েকদিন পরই তাদের আচার-আচরণ রাতারাতি পাল্টে যায়। মাসাধিককাল ঘোরাঘুরি করার পরও কয়েকটি ল্যাব থেকে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়নি। আর রাজধানীর উত্তরা এলাকার বেসরকারি ল্যাবরেটরি ‘প্লাজমা প্লাসের’ পরিচালক অধ্যাপক আমীর এইচ খান জনস্বার্থে যুগান্তরকে এ বিষয়ে সহায়তা করার আশ্বাসও দেন।


কিন্তু এক সপ্তাহ পরই তিনি জানিয়ে দেন ‘টাইগার এনার্জি ড্রিংক পরীক্ষা করার সাহস তাদের নেই।’ এ অবস্থায় কার্বনেটেড বেভারেজের মান প্রণয়নকারী একজন বিশেষজ্ঞ যিনি এখন মগবাজারে একটি ভেষজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি যুগান্তরকে জানান, দেশের অভ্যন্তরে কোথাও এই এনার্জি ড্রিংক পরীক্ষার আসল ফলাফল পাওয়া যাবে না। কারণ অনেক ল্যাবের কর্তাব্যক্তিরা ওই কোম্পানি থেকে মোটা অংকের মাসোহারা পান। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমিন জানান, ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় এনার্জি ড্রিংকের ভেতর অ্যালকোহল উৎপাদিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তারা বিএসটিআই’কে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ পর্যায়ে অ্যালকোহলের উপস্থিতির বিষয়টি প্রমাণ করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কর্তৃক রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংক পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু তাদের পরীক্ষার রিপোর্টেও অ্যালকোহলের উপস্থিতি দেখানো হয়নি। তারা শুধু ক্যাফেইনের উপস্থিতি দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, তাদের ল্যাবরেটরি অনেকটা মান্ধাতা আমলের। তাই তাদের ল্যাব রিপোর্টে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসছে না। এনার্জি ড্রিংকে অ্যালকোহল মেশানোর তথ্য বিভিন্ন সোর্স থেকে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।


বিএসটিআই’র দফতরে: নিয়মানুযায়ী কার্বনেটেড বেভারেজ বা এনার্জি ড্রিংক উৎপাদনের লাইসেন্স দেয়ার পর নিয়মিত নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার কথা। বিধিতে বলা আছে, প্রতি ৬ মাস পর পর কারখানা পরিদর্শন করে উৎপাদিত পণ্যের নমুনা জব্দ করে নির্ধারিত মান অনুযায়ী পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করবে বিএসটিআই। তথ্যানুসন্ধানকালে ২৩ সেপ্টেম্বর বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ইকরামুল হকের কাছে রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকের কারখানা পরিদর্শন ও পরীক্ষার ফলাফল জানতে চাওয়া হয়।


এ সময় মহাপরিচালকের কক্ষে উপস্থিত পরিচালক (সিএম) কমল প্রসাদ দাস বলেন, রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকের কারখানা ভালো এবং তারা নির্ধারিত মান বা বিডিএস অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করছে। এ পর্যায়ে বিসিএসআইআর থেকে প্রাপ্ত ল্যাব টেস্ট রিপোর্ট মহাপরিচালকের সামনে উপস্থাপন করা হয়। যেখানে রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকে প্রিজারভেটিভ হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম বেনজয়েট মেশানোর প্রমাণ মিলেছে। এ পর্যায়ে মহাপরিচালক আমতা আমতা করে বলেন, যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তবে রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে তিনি পিছপা হবেন না। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পরিচালক কমল প্রসাদ দাসকে এ সংক্রান্ত ফাইল দেখে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত দেয়ার নির্দেশও দেন। এ সময় মহাপরিচালকের কক্ষে হাজির হন বিএসটিআই’র পরিচালক (মান) ড. সৈয়দ হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকের লেবেলের গায়েই উপাদান সম্পর্কে সতর্কীকরণ ঘোষণা দেয়া আছে। সেখানে বলা আছে ‘এই পানীয় শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও যারা ক্যাফেইন সংবেদনশীল তাদের জন্য নয়।’ এখন কেউ যদি এই সতর্কীকরণ দেখেও রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংক পান করেন সেক্ষেত্রে বিএসটিআই’র কোনো দায় নেই।’


তথ্যের আরও গভীরে যেতে দুই প্রতিবেদক বিএসটিআই’র পরিচালক কমল প্রসাদ দাসের দফতরে যান। তার নির্ধারিত কক্ষে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে হাজির হন উপ-পরিচালক (সিএম) সেলিম রেজা ও সহকারী পরিচালক (সিএম) আবু সাঈদ। উপ-পরিচালক সেলিম রেজাকে রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংক সংক্রান্ত ফাইল নিয়ে আসতে বলেন পরিচালক কমল প্রসাদ দাস। কিন্তু প্রতিবেদকের সামনে এ সংক্রান্ত ফাইল আনা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন সেলিম রেজা।


আরেক বিস্ময়: বিস্ময়ের আরও বাকি ছিল। বিকাল সাড়ে ৫টায় যুগান্তরের অনুসন্ধান টিমের সদস্যরা বিএসটিআই’র কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বেভারেজ কোম্পানির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) পরিচয়ে ফোন আসে। ০১৭৫৫৫৯৪৫০৯০ নম্বর থেকে নিজেকে গ্লোব বেভারেজের পিআরও আতিক হেলাল পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানতে চান রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকের বিষয়ে কি নিউজ হচ্ছে? তার কাছে পাল্টা জানতে চাওয়া হয় ‘এ তথ্য কোথায় পেলেন? উত্তরে আতিক হেলাল বলেন, বিএসটিআই’র কোনো এক মাধ্যম থেকে তিনি এ তথ্য জানতে পেরেছেন। রিপোর্ট না করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। অভিযোগ রয়েছে, এনার্জি ড্রিংকের স্বার্থরক্ষা করায় বিএসটিআই’র একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তারা মাসোহারা পেয়ে থাকেন। এদের কারণে বিএসটিআই’র ল্যাব রিপোর্টে কখনোই কোনো ত্র“টি পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ইকরামুল হক বলেন, যদি কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আইনের চোখে ধুলো: সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, কাগজে-কলমে কার্বনেটেড বেভারেজ বা সফট ড্রিংক (কোমল পানীয়) উৎপাদনের লাইসেন্স নিয়ে ক্ষতিকারক এনার্জি ড্রিংক উৎপাদন করছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। কারণ কার্বনেটেড বেভারেজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিএসটিআই’র নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু দেশে এখনও এনার্জি ড্রিংক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকায় অসাধু কোম্পানিগুলো উৎপাদিত পানীয়র লেবেলে ‘এনার্জি ড্রিংক’ লিখে দেদারসে বাজারজাত করছে। এ প্রসঙ্গে বিএসটিআই’র পরিচালক কমল প্রসাদ দাস বলেন, ‘রয়েল টাইগার’ ট্রেডমার্কে কার্বনেটেড বেভারেজের লাইসেন্স নিয়েছে ‘এএসটি বেভারেজ’ নামের একটি কোম্পানি। এখন তারা যদি এই ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে ‘এনার্জি ড্রিংক’ বাজারজাত করে তবে সেটি আর তাদের দেখার বিষয় নয়। তিনি বলেন, এনার্জি ড্রিংক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বিষয়। তিনি জানান, যেসব কোমল পানীয়তে অ্যালকোহল ও উচ্চমাত্রায় ক্যাফেইন থাকে সেগুলো কার্বনেটেড বেভারেজ নয়। এগুলোকে এনার্জি ড্রিংক বলা হয়। কারণ কার্বনেটেড বেভারেজের ক্ষেত্রে বিএসটিআই’র নির্ধারিত মান বা বিডিএস রয়েছে। কিন্তু এনার্জি ড্রিংকের কোনো বিডিএস বা নির্ধারিত মান নেই। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকের লেবেলে ‘কার্বনেটেড বেভারেজ’ লেখা থাকলেও বিজ্ঞাপন ও এএসটি বেভারেজের ওয়েবসাইটে ‘এনার্জি ড্রিংক’ নামেই পণ্যের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।


কারখানা পরিদর্শন: অনুসন্ধানী সেলের পক্ষ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকের কারখানা পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় জানার পর সেখানকার কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কারখানার ভেতরে ঢুকতে বাধা দেন। এ ছাড়া কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে চাননি।


কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিংকে কেন উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম মেশানো হচ্ছে জানতে চাইলে এই এনার্জিং ড্রিংকের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এএসটি বেভারেজের পরিচালক (মার্কেটিং) খায়রুল আনাম বলেন, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন। কোন লটে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে। তবে তিনি স্বীকার করেন, রয়েল টাইগার ট্রেডমার্কে কার্বনেটেড বেভারেজের লাইসেন্স নিয়ে তারা এনার্জি ড্রিংক বাজারজাত করছেন। খায়রুল আনাম স্বীকার করেন, ‘দেশের ভেতরে রয়েল টাইগার ‘কার্বনেটেড বেভারেজ’ লেবেল ও বিদেশে ‘এনার্জি ড্রিংক’ লেবেল লাগিয়ে একই পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে।যুগান্তর

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!