শাস্তি


জীবিত বা মৃত কারো সংগে গল্পের কোন চরিত্রের মিল নেই। মিলে গেলে কাকতাল মাত্র।


খাঁটি বাংলাতে বললে, চরম এক ছেঁকা খেয়ে নিলয় পাগল প্রায়। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও আজ কালকার পোলাপান গুলো কেমন যেন ননির পুতুল। গার্ল ফ্রেন্ড কিছু বললেই হল। বাকিটা আর বললাম না। এই নিলয় এক সময়কার তুখোড় স্টুডেন্ট সেই সাথে খেলোয়াড়। অথচ আজ সে একদম ঘর কুনো। মেজাজটা খারাপ না হয়ে পারলো না আবিদের। গত বিসিএস-এ দুজনেই ভাইভা দিয়েছে। আর কয়েকদিন বাদেই রেজাল্ট। আবার সামনের শুক্রবারে একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে ভাইভা। অথচ এই সময় নিলয় সব কিছু ছেড়ে দেবদাস। নিলয়ের ফোনও বন্ধ। আবিদকে সারাদিন ফোন করতেছে নিলয়ের বাড়ি থেকে। আবিদ এটা সেটা বলে ম্যানেজ করে নিচ্ছে।


"শালা বলদা, পনেরোটা ছেঁকা খেয়ে এখনও দিব্য ঘুরে বেড়াচ্ছি আর তুই একটা খেয়েই...," আবিদ নিলয়ের উদ্দেশে বলল।


"দোস্ত, তোর দোহায় লাগে তুই এখন আর জালাস না, আমাকে একটু একা থাকতে দে", নিলয়।


" চল ঘুরে আসি। এবার ব্যাগরা দিলে সোজা খন্দকার সাব'কে জানায়ে দিব", বলল আবিদ।


নিলয় আর কোন কথা না বলে সোজা ভদ্র ছেলের মত আবিদকে অনুসরন করলো।


আসলে মেয়েটা একটু অন্যরকম সব সময়। নিলয় খুব চুপচাপ স্বভাবের ছেলে। কিন্তু মেয়েটা তার বিপরীত। আড্ডা পেলে আর কথাই নাই, এমনিতে নাচুনি বুড়ি তার উপর আবার ঢোলের বাড়ি পড়লে যা হয় আর কি। এটা ভালো লাগতনা নিলয়ের। গায়ে ঢুলে পড়াও একটা বোধ অভ্যাস আছে মেয়েটার। কিন্তু নাজুক নিলয়ের সেটাতেও আপত্তি। কিন্তু মেয়েটা যেটা মানা করে সেটা পারলে যেন আরও বেশি করে করতে থাকে। মেয়েটার সাথে নিলয়ের দ্বন্দ্ব এখানেই , নিলয়কে সে আধুনিক সমাজের অযোগ্য, ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে থাকে। নিলয় যে সব কথা মুখ বুজে সহ্য করে তা নয়, সেও মাঝে মাঝে দু একটা উত্তর দেয়। কিন্তু এবারের উত্তরের ভাষাটা একটু কড়া ছিল। কড়া হবেই বা না কেন ? কোন একটা বিষয়ে নিলয় রাজী না হলে মেয়েটা তাকে নপুংসক বলে খ্যাপাতে থাকে। আর এইটা সহ্য করতে না পেরেই নিলয়ের কড়া জবাব। তার পরে যা হবার তাই। শেষ বারের মত নপুংসুক বলে মেয়েটা চলে গেল নিলয়ের কাছ থেকে।


তনু , নিলু আর সুমি তিন বান্ধবী এক সাথে থাকে এবং একই সাথে পড়াশোনা করে একটি কলজে। এর মধ্যে তনু ও সুমি নিলুর থেকে একটু এগিয়ে আছে। নিলু ছাড়া দুজনেরই বয় ফ্রেন্ড আছে। এজন্য নিলুর মনে কোন আক্ষেপ না থাকলেও ঐ দুজনের কথা শুনতে শুনতে সে মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত। কিন্তু সহ্য করে থাকে, বান্ধবী বলে কথা। তনুর বয় ফ্রেন্ড অরুন আবার মোটামুটি বিখ্যাত গায়ক। বছরে দু-একটা ক্যাসেট বের করে মোটামুটি একটা জায়গা করে নিয়েছে। এবার তিনি মেউজিক ভিডিও বানানোর কাজে দিয়েছেন। এই নিয়ে তনুর বেস্ততার শেষ নেই। সকাল বিকাল তাকে সময় দিতে হয়। আসলে কাজ টা যে কি সেটা নিলু বা সুমি কার মাথায় ঢোকে না। সেই সকালে যায় আসে রাতে। তনুকে জিজ্ঞাসা করলে বলে, তার মিউজিক ভিডিও বানানোর কাজ চলছে। কয়েকটা গান হয়ে গেছে আরও কয়েকটা বাকি। সারাদিন তার সাথে শুটিং স্পটে থাকে। নিলু আর কিছু জিজ্ঞাসা না করলেও সুমির আগ্রহ দেখা গেল। সে তনুকে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা বলে কিন্তু আসল কথাটা বলতে পারে না। তারপর একদিন বলেই ফেললো, তাকে একদিন শুটিং এ নিয়ে যেতে। তনুর আপত্তি নেই। সে রোজ একা একা যায় , ভালই হল একজন সাথী পাওয়া গেল।


নিলু বেচারা এখন একা হয়ে গেল। সে ক্লাস শেষে সারা দিনই প্রায় একা থাকে রুমে। সুমি আর নিলু ক্লাস বাদ দিয়ে এখন গানের শুটিং-এ। নেই কাজে বিজি বেশি সুমি এখানে। সে দেখা যাচ্ছে ডিরেকশনও দিচ্ছে মাঝে মাঝে। তনুর বয়ফ্রেন্ড অবশ্য কিছু মনে করতেছে না। কিন্তু তনুর একটু ইতস্তত লাগছে। যাহোক ভালই কাটছে সুমির দিনগুলো। মাস ব্যাপী চলছে গানের কাজ।


একদিন তনুর খুব জ্বর। ঐদিনই আবার শেষ হবে গানের কাজ। একটা গান ইনডোরে হবে পুরো শুটিং। তনু যেতে পারলো না। সুমি একাই গেল। এদিকে স্পট তখন খুব গরম। না না আবহাওয়াগত কোন সমস্যা না। সমস্যা হল গানের মেয়ে মডেল আসতে পারবে না জানিয়ে দিয়েছে। সুযোগ বুঝে কোপ মারতে ভুল করলো না সুমি। এত দিনে তার মনের আসা পুরন হতে পারে আজ। সে সরাসরি অরুণকে একাকি ডেকে নিয়ে বলল, সে মডেল হতে আগ্রহী। অরুন কিছু না ভেবেই তাকে নিতে রাজী হল।


এদিকে নিলয়ের বিসিএস রেজাল্ট বের হয়েছে। বিসিএস পুলিশ এ সে কুয়ালিফাই করেছে। এখন সে মোটামুটি স্বাভাবিক। আবিদ টিকেছে এডমিনে। দুজনেই এখন হাওয়া খেতে বেরিয়েছে। খুব ঘুরতেছে তারা। জয়েন করতে বেশ দেরি। বাদবাকি কাজ গুলো কমপ্লিট হয়ে গেছে।


গানের সিডি এখন বাজারে। মোটামুটি ভালই চলছে। এদিকে অরুনের সাথে সুমির একটু বেশিই মাখামাখি হচ্ছে। অরুনের সাথে কোন কারন ছাড়াই অনেক্ষন ধরে কথা বলা। অরুনের সাথে দেখা কপরতে যাওয়া একা একা। মাঝে মাঝে তনুকে সুমি বলে চল, অরুনের সাথে দেখা করে আসি। তনু এটা সেটা বলে কাটিয়ে দেয়। আবার তনু একা একা দেখা করতে গেলে সুমি তনুকে বকা ঝকা করতে থাকে তাকে সাথে না নেয়ার জন্য। তনুর ফোনে অরুনের কল আসলে সুমিকে না দিয়ে কল কাটার মত অবস্থা এখন নেই। তনুর এটা তেমন একটা ভালো লাগে না। তনু মুখে কিছু বলতে না পারলেও সহ্যও করতে পারে না। তবে অরুনের সাথে এই নিয়ে কুরুক্ষেত্র বেধে গেছে। এটা সুমি জানে কিন্তু না জানার ভান করে থাকে। তনু ব্যাপারটা নিলুর সাথে শেয়ার করে। নিলু সুমিকে অরুনের সাথে এভাবে মেলা-মেশা করতে মানা করে। সুমি জবাব দেয়, এটা তাদের পার্সোনাল ব্যাপার আর আমার সাথে তার সম্পর্ক মিডিয়া কেন্দ্রিক। আমি একটা মডেল (?) সে গায়ক। আমি তার গানের আর্টিস্ট। আমাদের সম্পর্ক অন্য খানে। তনু যদি এটা সহ্য করতে না পারে তাহলে আমার কিছু করার নেই। তাদের কি হল না হল এতে তার মাথা ব্যাথা নাই। আর এগুলো নিয়ে আর যেন তার সাথে কোন কথা না বলে। এটা তারা তারা ঠিক করে নিক। নিলু শুধু বলল, তুই এত ছোটলোক হয়ে গেছিস যে নিজের অবস্থান ভুলে গেছিস।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!