ছটফট করছে সমস্ত শরীর ও মন


কিছুদিন যাবত প্রচণ্ড অস্থির লাগছে, ছটফট করছে সমস্ত শরীর ও মন। যার সাথে এক মুহূর্তও কথা না বলে থাকতে পারি না, সেই মা’এর সাথে গত বিশ টা দিন ধরে কথা বলা হচ্ছে না।


এমনিতেই মন খারাপ, তার উপর আবার স্বার্থপর কিছু মানুষ যাদের সাথে দুর্ভাগ্যক্রমে জন্মসূত্রে জড়িয়ে গেছি, তারা উল্টাপাল্টা কথা বলে মাথাটা আরও নষ্ট করে দিয়ে যাচ্ছে।


প্রেম ভালোবাসা


সারা দিন বিয়ে বিয়ে আর বিয়ে নিয়ে আলাপ ছাড়া যেন কিছুই তারা বোঝেনা। বিয়েটা কি এতই জরুরী ! কেন ?


বিয়ে মানেই তো আবার কোন এক সেই নারীগত্রদেরই একজনের সাথে নিজের এই অর্ধ-ছিন্ন জীবনটাকে জড়িয়ে নেয়া। সম্পূর্ণরূপে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া। আবারও এক নতুন অতিথিকে পৃথিবীতে জোর করে ডেকে আনা। আর কিছুদিন পর সেই নতুন অতিথির জীবনের সাথেও সেই একই খেলা করা। আবার আরেকটা নতুন ছিন্নভিন্ন জীবনের গল্প লেখা।


আমি চাইনা। আমি চাইনা ডায়েরীর কোন এক পাতাতেই আবারও অন্য কাউকে নিয়ে এইরূপ ছিন্নভিন্ন, এলোমেলো জীবনের গল্প লেখা হোক। আমি চাই না, আবার কোন এক নিষ্পাপ সরল জীবনের করুন পরিণতি। আমি চাইনা, যা আমার সাথে হয়েছে বা হচ্ছে, তা অন্য কারোও সাথে হোক। তবে পুরো পৃথিবীকে তো আর আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। অন্ততপক্ষে আমার কারণে যেন এমনটি না হয়, এটা তো করতে পারি! আর আমি তাই করবো!


কেন এমটি হলও! কি করেছিলাম আমি! জন্মের সাথে সাথেই কি কোন মানুষ কোন দোষ করতে পারে! কি করে তা সম্ভব! দ্বিতীয় জন্ম বলে তো কিছু নেই, যে আমি ভাববো আমার প্রথম জন্ম ছিল পাপময়! উফ্! প্রচণ্ড মাথাব্যথা। মাথার শিরা-উপশিরাগুলি যেন ছিরে যাবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


কি হবে যদি ছিরে যায়! আমি কি পাগল হয়ে যাবো তখন! আমারই ভাই-বোনেরা, বন্ধুরা আমাকে দেখে হাঁসবে। পাগলের যায়গা নাই, এই জগতে। কেউ দেখেনা কি করে এই পাগলের জন্ম হয়। শুধুই হাঁসির উপকরণ ছাড়া কিছুই মনে করে না তাদের। অথচ পাগল কি নিজের জন্য হয়! হয় তো অন্যের জন্য। এই উপলব্ধিটুকু করার জন্য বোধশক্তি নাই আজকালের অতি আধুনিক মানুষদের।


কি লাভ এই আধুনিকতার, যা মানুষের কাছ থেকে তার আবেগকে কেড়ে নিয়ে যায়! সব মিথ্যে ঢং ছাড়া কিছুই না। আমি তো পারি না! পারি না, এই মিথ্যের জগতে পা বাড়াতে। কি হবে তবে আমার। কিছু কি ভালো হতেই হবে, এই জীবনে! না হতে পারলে কি কঠিন দোষ করে ফেলবো! এই মিথ্যের জগতের মিথ্যে মানুষগুলির সাথে মিথ্যে অভিনয় করাটা কি এতোটাই জরুরী! তা না হলে কি মরে যাবো! মরে গেলে কি হবে! খুব ক্ষতি হবে! ক্ষতিটা কার হবে, আমার না কি অন্য কারও!


এরূপ ভাবতে ভাবতে ‘বিষাদ’ হঠাৎ করেই উত্তেজিত হয়ে পরে এবং কাউকে কিছু না বলে রাত ১১ টার দিকে ঘর হতে বেড়িয়ে পড়ে। কোন পরিকল্পনা ছাড়াই। মাথা তো কাজই করছে না তার, পরিকল্পনা কি করে করবে?


ভেবেছিল তাকে তার মা আটকাবে। কারণ সে দেখে ফেলেছিল বিষাদকে বাইরে যেতে। কিন্তু সে তা করলো না! প্রচণ্ড জেদ এই মা-ছেলের ভিতরে!


বিষাদ হনহন করে হাঁটছিল। পরনে ছিল ফুল হাতা শার্ট যার হাতাগুলি কিছুটা গোটানো ছিল। প্যান্টও ছিল দামী কাপড়ের। চোখে ছিল পাওয়ার-বিহীন এক চশমা। জীবনে প্রথম চশমাটা নেয়া হয়েছিল তার সেই মাঝামাঝি বয়সে। মাথাব্যথার জন্যই এটা নেয়া। যা হোক, এই চশমাতে তাকে প্রচণ্ড ভদ্র দেখাতো। আসলেই সে খুব একটা খারাপ ছেলে না। বরং আট-দশটা ছেলের থেকেও অনেক ভালো বলা চলে।


এতো রাতে তার হাঁটা দেখে রাস্তায় পাহারাদার কি মনে করেছিল কে জানে। অনর্গল তাকে সালাম দিতে লাগল। কিন্তু তাদের এই সালাম বিষাদের কান পর্যন্ত আসতে আসতে অনেক দুর চলে যেতো সে। তার কাছে মনে হতো দুর থেকে ভেসে আসা কোন শব্দ।


কিছু দুর উত্তেজিত ভাবে হাঁটার পর বিষাদের কিছুটা চেতন ফিরে এলো। ভাবলও, কি করবে এখন! কোথায় যাওয়া যায়! অথচ বিন্দুমাত্র ভয় করলো না তার। যেন প্রচণ্ড অভিমানের ঝড় তার হৃদয় থেকে সমস্ত ভয়ভীতি ভুলিয়ে দিয়েছে।


এমন সময় পথে দেখা হয়ে গেলো তার এক বড় ভাই ‘রাসু’র সাথে। রাসু তাকে বেশ কয়েকবার ডাকল। বিষাদ শুনতে পেলোনা। ফলে অবাক হয়ে সে বিষাদের কাছে গিয়ে তাকে স্পর্শ করলো। ভেবেছিল বিষাদ আঁতকে উঠবে। কিন্তু রাসুর সেই ভুল ভেঙ্গে দিয়ে বিষাদ ধীরেধীরে মুখ ঘুরিয়ে চাইল। তার সেই ছলছল চোখ দেখেই রাসু বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে।


ভাবল, বিষাদকে নিয়ে কিছুটা বেড়িয়ে আসা যাক। মনটা ঠিক হলে বাসাতে দিয়ে আসবে। বিভিন্ন স্থানে তারা ঘুরতে লাগলো।


সমস্ত এলাকা নিঃশ্চুপ। শুধু রাসু, বিষাদ, রাস্তার পাহারাদার আর ক’টা কুকুর। এছাড়াও ছিল পূর্ণ গোলাকার এক চাঁদ। হয়তো বা সেই চাঁদটি বুঝতে পেরেছিল, তাকে এখন বিষাদের প্রয়োজন। তাই সে আলো দিয়ে দিয়ে পথ দেখিয়ে দিচ্ছিল।


প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কুকুরেরাও ডাকাডাকি করতে ভুলে গেছিল। পাহারাদার ছিল মোটামোটা জামা গায়। এমনকি রাসুও ছিল মোটা কাপড়ের দুই তিনটা কি যেন গায়। অথচ বিষাদ শুধুমাত্র পাতলা গেঞ্জি আর একটা ফুলহাতা শার্ট ছাড়া কিছুই গায় দেই নি। তার শীতও তেমন করছিল না। হয়ে পড়ছিল অনুভূতিহীন এক স্তব্ধ সময়ের মত।


হাঁটতে হাঁটতে এক মাঠের পাশ দিয়ে তারা দুজন যাচ্ছিল। প্রচণ্ড গন্ধ আর এক অজানা ধোঁয়ায় সেদিকটা ছেয়ে গেছিল।


বিষাদ জানতে চাইলো রাসুর কাছে, এগুলি কিসের গন্ধ। রাসু হাসছিল। কোন উত্তর দিল না। বিষাদ আবারও জানতে চাইলো এগুলো কিসের গন্ধ, কিসের ধোঁয়া! রাসু এবার এমন ভাবে হাসছিল যেন বিষাদ তাকে কোন এক হাস্যকর জোকস শুনিয়েছে। কিন্তু পরের বার বিষাদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো, ও রাগ করেছে।


- “এই ধোঁয়া আর গন্ধ গাঁজার। গাঁজা তো বুঝোই, কি হয় খেলে?” (রাসু এইবার সিরিয়াস হয়ে বলল)


- “কি হয় খেলে ?” (ধীরে ধীরে আনমনে বলছিল বিষাদ। যেন তার অবচেতন মন বলছে এই সব। বিষাদও জানে এর উত্তরটা কি। এর আগেও বহুবার শুনেছে।)


- “সব কিছু ভুলে থাকা যায়।“ (রাসুর সেই সাধারণ উত্তর, যা সে বিষাদকে আগেও বহুবার বলেছিল।)


- “স-ব কিছু ভুলে থাকা যায় !” (আনমনে বিষাদ বলছিল।)


রাসু এইবার কেন জানি হেঁসে উঠল। দু’চোখ বন্ধ করে এক অতি সুখের হাঁসি।


চোখ খুলে দেখে বিষাদ ধীরে ধীরে, একা একা, আনমনে সেই অজানা ধোঁয়ার পিছু পা বাড়াল। যেন বিষাদের অবচেতন মনই তাকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছে।


সে জানে না, সেই ধোঁয়ার আড়ালে কারা বসে আছে, কি করছে, কেন করছে, কিভাবে করছে! তারা কি তাকে বসতে দেবে, বন্ধু করে নেবে, না কি ছিন্নভিন্ন জীবনের মত, ছিন্নভিন্ন মনের মত তার দেহটাকেও ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে!


কি এক অলৌকিক ক্ষমতার বলে সে সাহসী হয়ে উঠেছে। ভুলিয়ে রেখেছে তাকে মৃত্যুভয় থেকে। না কি মৃত্যুভয়ও তার কাছে আজ বড়ই তুচ্ছ হয়ে উঠেছে হৃদয়ের জমে থাকা কষ্টের কাছে!

Related Posts:

  • আমার দেহের মানচিত্রে ...... !   স্বপ্ন দেখেছি বেলা বোস এর মত তোমায় নিয়ে লাল নীল সংসারের যেখানে রোজ সকালে চায়ের পেয়ালায় ঠোঁট ডুবানোর আগে তোমার ঠোঁটে এক চুমুক দিয়ে দিনের শু… Read More
  • নিষিদ্ধ জগতের নারী কাহিনী গ্ল্যামার, একশন, লাইট, সেট, কাট এসবই এই জগতের পরিচিত শব্দ। লোক দেখানো লৌকিকতায় নারী এখনো পণ্য। সেই জগতের হাতছানিতেই মডেল হবার স্বপ্ন কাজ করে … Read More
  • মিশরীয় প্রেমের রহস্য মিশর রহস্যর সন্তুর প্রেমিকা ত্রিধাকে এবার নিজের প্রেমিকা বানিয়ে ফেললেন অগ্নিদেব-পুত্র আকাশ চট্টোপাধ্যায়! শোনা যাচ্ছে, টলিউডে নবাগতা ত্রিধা চৌ… Read More
  • আমি আজ অবগুন্ঠন খুলে নীল জোৎস্নায় দাঁড়াব আজ সারাবেলা তোমার সঙ্গে থাকব সূর্যের আলো গায়ে মেখে, দেখব কতটা মাতাল হতে পারো! কিভাবে মাতোয়ারা হয় উদাসী দুপুর, বাতাসের বীণা হাতে কি করে বেজে… Read More
  • Islami Book web Address Visit for Islami Kitab Islamicbook Sultan.org Download free Bangla-english Text Books Nctb.gov.bd, For Direct download Primary & Secondary lev… Read More

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!