রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্দনাম ভানুসিংহ হল যেভাবে...


রবি (রবীন্দ্রনাথ) আসলে যথেষ্ট লেখাপড়া করতেন, তবে চিরাচরিত প্রথায় নয, অন্য সবার মতো করে নয়, স্কুলে মাস্টারদের কাছে নয়। তিনি শিখতেন নিজের ভাললাগা থেকে, জ্ঞান অন্বেশন করতেন প্রকৃতির কাছ থেকে। একবার সে একটি মৈথিলী কবিতাগুচ্ছ সংগ্রহ করে এনে সেটাকে পুংখানুপুংখরুপে পড়ে ফেলেছিলেন। তারপর এক বর্ষার দুপুরে, খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে, স্লেটে ঐ পুরনো মৈথিলী কবিতার কয়েক লাইন কবিতা লিখে ফেললেন এবং নিজের প্রটচেষ্টায় নিজেই খুব খুশী হয়ে উঠেছিলেন।

কিছুদিন পর সে একজন পুরনো বন্ধুকে ধরে বলল, “জান, ব্রাহ্মসমাজ লাইব্রেরীর পুরনো বই ঘাঁটতে গিয়ে ভানুসিংহ বলে এক মৈথিলী কবির পোকায় কাটা পুঁথি পেলাম। এই দেখ আমি তার কয়েকটা কবিতা তুলে এনেছি।” এই বলে রবি তার কবিতাগুলো পড়ে শোনাল। তার বন্ধু তো অবাক! “আরে এত চমৎকার হয়েছে এগুলো বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাসের লেখার থেকেও ভাল। আমাকে এগুলো দাও। অক্ষয়বাবু খুশী হয়ে তার পুরনো কবিতার নতুন সংকরনে ছাপিয়ে দেবেন।”

রবি তাই শুনে খব লজ্জা পেয়ে বললেন, “আসলে এগুলো আমারই লেখা। এই দেখ তার খসড়াগুলো।” এই হল ঐ কবিতার অবিশ্বাস্য সত্য।

কবিতাগুলো পরে ‘ভারতী’ নামে একটি মাসিক পত্রিকায় ভানুসিংহের নামে ছাপানো হয়েছিল। সকলে পড়ে প্রচীন কবি ভানুসিংহের বিষয়ে নানা রকম অতিরঞ্জিত প্রশংসা করতে লাগলেন। শুধু বাড়ির লোকেরা ও কয়েকজন অন্তরঙ্গ বন্ধু জানতেন যে, কবিতাগুলো একজন পনেরো বছরের একটি ছেলের লেখা, নাম তার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তারপর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্দনাম ‘ভানুসিংহ’ হয়ে গেল এবং তিনি ভানুসিংহ নামে অধিক পরিচিতি লাভ করতে লাগলেন।

আসলে ‘ভারতী’ ছিল একটি পারিবারিক পত্রিকা; প্রকাশক জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও সম্পাদক দ্বিজেনন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবি এই পত্রিকার জন্য নিয়মিত কবিতা ও প্রবন্ধ লিখে যেতেন। এ পত্রিকায় তার বড় কবিতা ‘কবি-কাহিনী’ বেরিয়েছিল, পরে সেটা একটা ছোট বই হয়েও বেরেছিল। এইটিই রবির প্রথম বই ছিল। রবি বড় হয়ে পরে এই কবিতা ও প্রবন্ধগুলিকে নিছক শিশুসুলভ ও উদ্দেশ্যহীন বলে মনে করেছিলেন।

তথ্যসূত্র: জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি (রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা), লীলা মজুমদার।

Related Posts:

  • পাহাড়ি কন্যা একটা মানুষের চেহারা, যদি হয় অপূর্ব লাবণ্যের প্রতীক, আর সে মানুষটা যদি হয় নারী, তাহলে তো মহাভাগ্যবতী! আবার মাঝে মাঝে সে লাবণ্যময়ী চেহারা নারীর … Read More
  • অনার্য মেয়ে বন্ধুর পথ বেয়ে যখন হাঁটো__ ধানক্ষেতের মতোন নিতম্ব দোলে__ বক্ষে এক জোড়া ব্যাঙ ক্রমাগত নাচে__আদিবাসি ধাঁচে। অনার্য মেয়েদের কথা মনে হয়__মনে … Read More
  • বিভ্রম কখনো দেখিনি তোমায় তবুও নিশ্চুপ কোনো এক সন্ধ্যায় নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয়া ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে আনমনে উদাসী দৃষ্টি যখন দুরে বাহিরপানে আবদ্ধ হয় আবছা আল… Read More
  • পরকীয়া প্রেম "ফারহানা কলি" মনের মাঝে খুব অসস্থি। দারুন অপরাধবোধ কাজ করছে। এই পাপবোধের জন্য মনে হয় ঘুম আসছেনা । রাত নিশি হচ্ছে ক্রমশঃ। কিন্তু কীসের যেন এক দূর্নিবার নিষি… Read More
  • সেই আমার প্রিয়তমা আমার এমন অসময়ে যে আমাকে হাসাবে, হাত ধরে, পিঠে হাত ঠেকিয়ে বলবে- কতটা সুখী তুমি, তোমার চেয়ে বড় দুঃসময় পার করছে মানুষ, ভেবো না, এই তো আর মাত্র কি… Read More

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!