বুদ্বিমত্তা বাড়ানোর কৌশল


এটা বলার কোন অপেক্ষা রাখে না যে বুদ্বিমত্তা বা আইকিউ মহান সৃষ্টিকর্তা থেকে প্রদত্ত। কাউকে প্রশ্ন করলেই সে অনায়াশে বলবে যে এটি বিধাতার কাছ থেকে সরাসরি পাওয়া। কিন্তু তারপরও অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষন, দর্শন, সাবধানতা, সচেতনতা, প্রচেষ্টা, অনুশীলনের মাধ্যমে এই বুদ্বিমত্তাকে প্রস্ফুটিত করা সম্ভব। বেশ কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করলে যে কেউই হতে পারেন এই বিশেষ গুনে গুনান্বিত।


আমাদের বুদ্বিমত্তা আমাদের ভিতর থেকেই সম্পূর্ন সৃষ্টি হয়। আসলে এটি অর্জন করার কোন সংক্ষিপ্ত রাস্তা নেই; এমনকি নেই কোন ঔষধ যা আপনাকে পানি দিয়ে গিলিয়ে খাওয়ালে আপনার বুদ্বিমত্তা অলোকিক ভাবে রাতারাতি বৃদ্বি পাবে। তাছাড়া আপনি গাদাগাদি ডিগ্রী অর্জন করেই যে অনেক বুদ্বিমত্তার অধিকারী হয়ে গেছেন তা চিন্তা করলেও একেবারে ভুল হবে। কি প্রথমেই এই সকল না বোধক কথা শুনে একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলেন! আসলে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই; দর্শন, প্রশিক্ষন, সাবধানতা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে বুদ্বিমত্তার অনেকটা পরিবর্তন আনা সম্ভব।


আইকিউ শব্দটি এসেছে জার্মান ‘ইন্টিলিজেন্স-কোয়েশেন্স’ শব্দ থেকে। এটির ইংরেজী শব্দ হচ্ছে ‘Intelligence’, আরবী শব্দ ‘এলেম’। ১৯১২ সালে জার্মানের মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম স্টের্ম শিশুদের বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের জন্য এই বিশেষ পদ্ধতির প্রস্তাব করলে মনোবিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড বিনেট ও থিওডোর সিমেন এটিকে বর্তমান রূপ দেন। আইকিউ হচ্ছে মুলত একটি নাম্বার বা সংখ্যা। কার বুদ্বিমত্তার পরিমান কতটুকু তা বুদ্বিমত্তার পরিমাপক হিসেবে বিভিন্ন যাচাই বাচাই ও পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে সেটি বের করা সম্ভব। তাই যে কেউ খুব সহজে কারো আইকিউ দেখে তার বুদ্বিমত্তার মাত্রা কতটুকু তা সহজে নির্নয় করা সম্ভব।


আপনি নিজেই নির্ণয় করুন আপনার আইকিউ


খুব সহজে আপনি নিজে নিজের আইকিউ নির্ণয় করতে পারেন। এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো পদ্বতি। সেগুলোর মাঝে সবচেয়ে সহজ পদ্বতি হচ্ছে ‘প্রশ্ন-উত্তর’। আপনি নিজেই নিজেই প্রশ্ন করুন আপনার পছন্দের যে কোন বিষয়ের উপর আর এক একটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য এক মার্ক নির্ধারন করুন; সেই সাথে সময়। এসব প্রশ্নে সাধারণত ক্ষণিক স্মৃতিশক্তি, তড়িত্ বুদ্ধি, মৌখিক জ্ঞান, কোনো কিছু বিশেষভাবে মানসপটে নিয়ে আসার ক্ষমতা এবং উপলব্ধি ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। আপনি এবং আপনার বন্ধুরা মিলে শ্রেনীকক্ষে বসেই খুব মজার একটা পরীক্ষা করতে পারেন। কি অবাক হয়ে গেলেন না কি! নিশ্চই আপনি চিন্তা করছেন সেটি কিভাবে করবেন? ব্যাপারটা খুবই সহজ।


আপনার সাথে আরো কয়েকজন বন্ধু নিয়ে তাদের কাছ থেকে তাদের রঙ পেন্সিল, কলম এবং অন্যান্য ছোট খাঁট বস্তু নিয়ে সেগুলোকে বেশ এলোমেলো করে একটা স্থানে নিয়ে বসে পড়েন। তারপর আধা মিনিট খুব মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষন করে সেগুলো দ্রুত আপনাদের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলেন বা স্কুল ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখুন। এবার আপনাদের শুরু হয়ে যাক কাগজে লেখা কে কতটা বস্তু দেখতে পেরেছেন এবং কত রঙের বস্তু ছিল সেখানে। তবে সময়টা হবে নির্দিষ্ট। এবার যে সঠিকভাবে বেশি জিনিসের নাম লিখতে পারবেন মনে করবেন তার আইকিউ ভালো।


আইকিউ বাড়ানোর কৌশলঃ


আসলে খুব সহজে আইকিউ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এটা অনেকটা জন্মগতভাবে পাওয়া। তবে সময়, স্থান ও বয়সভেদে আইকিউতে পরিবর্তন আসতে পারে। একইভাবে আইকিউ নির্ণয়ের বিভিন্ন গাঠনিক প্রশ্নের এবং আরও কিছু পদ্ধতির চর্চা করলে আইকিউ নম্বরও বাড়তে পারে। শুধু তাই নয়, বুদ্ধির এসব চর্চায় বুদ্ধিমত্তাও বাড়তে পারে। বুদ্ধির চর্চায় চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে, মাথা খোলে। এজন্য অবশ্য ছোটবেলা থেকেই চর্চা করা উচিত। এ ছাড়া চিন্তা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। জিজ্ঞাসু মনই বুদ্ধির চর্চা করতে পারে।


ইংরেজী সাহিত্যের বিখ্যাত সাহিত্যিক ফ্যান্সিস ব্যাকনের মতে, “ইতিহাস শাস্ত্র পাঠককে জ্ঞানী করে, কবিতা শাস্ত্র করে চতুর, গনিত শাস্ত্র চাতুর্যময়, দর্শন শাস্ত্র করে নৈতিকতাপূর্ন, যোক্তিক এবং বৃদ্বি করে চেষ্টা করার সামর্থ।”


তিনি আরো বলেন, “অধ্যয়ন পাঠককে পরিপূর্ন করে, আলাপ আলোচনা প্রস্তুত করে, এবং লেখালেখি তাকে যথার্থভাবে গড়ে তোলে।” তাহলে বোঝতেই পাচ্ছেন কোন কোন বিষয়গূলোর প্রতি মনোনিবেশিত হলে আপনার আইকিউ বৃদ্বি পাবে।


মেনে চলুন কিছু টিপসঃ


মস্তিষ্কবৃদ্বিকারী ভালো খাবারগুল গ্রহন করুন। যেমন—মাছ, ডিম, দুধ, ফল, শাকসবজি।


নিয়মিত শারিরীক ব্যায়াম করুন। এটি আপনার রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে স্মৃতিশক্তি বৃদ্বি করতে সাহায্য করবে।


সুডোকুর সমস্যা সমাধান করুন।


পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি প্রচুর গল্প, উপন্যাস, সাইন্স ফিকসান পড়ুন।


নিজেকে সবসময় আপডেট রাখতে তথ্য ও সাধারন জ্ঞান বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিনগুলো পড়ুন।


রীতিমত পাঠ করুন দৈনিক পত্রিকা, এবং শুনুন ও দেখুন প্রচারিত খবরগুলো।


অর্থ সহকারে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করুন এবং বিশ্লেষনের চেষ্টা করুন।


বিভিন্ন লেখা মাঝে মাঝে উলটো করে অথবা আয়নার সামনে রেখে পড়ার চেষ্টা করুন।


বুদ্বিবৃদ্বিকারী কিছু খেলা যেমন; দাবা, পাজল বা শব্দের খেলা, সুডেকু মিলাতে পারেন।


কম্পিউটার গেইম বা ভিডিও গেইম খেলতে পারেন।


জীবন ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনি, বিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে স্টাডি করলে জীবন ও জগত্ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হয় এবং এর ফলে আইকিউ অনেক বেড়ে যায়।


পড়াশোনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন এবং পিতা-মাতার যত্ন ও সান্নিধ্যলাভের মাধ্যমে মেধার উত্কর্ষ সাধন করা সম্ভব।


বুদ্ধিমান জ্ঞানী মানুষের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে আপনার আইকিউ অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই আপনাকে আদর্শ শিক্ষক, গবেষক, চিন্তাবিদ, দার্শনিক, সমাজকর্মী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে আসতে হবে।


সময় পেলেই ঘুরে আসুন দেশের বা দেশের বাহিরের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে।


যেতে পারেন বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে।


এ ছাড়াও বুদ্ধির পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন মনোদৈহিক সুস্থতা, রুচিশীল বিনোদন ব্যবস্থা, আর্থিক সচ্ছলতা, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, মেডিটেশন চর্চা প্রভৃতি।


তাহলে আর দেরি কেন? শুরু হয়ে যাক বুদ্বিমত্তা বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। নিজেকে প্রমান করুন একজন বুদ্বিমান হিসেবে।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!