আজ মেয়েটির জন্ম দিন। তবে মেয়েটির আজকে ভিষণ মন খারাপ। কেননা তার অতি প্রিয় মানুষটি তাকে এখনো জন্মদিনের শুভেচ্ছা পর্যন্ত জানায়নি। মনে হয় ভুলেই গেছে । অথচ গত দু-বছর কি চমকটাই না তাকে দিয়েছিলো। কিন্তু এবার এখনো তাকে কোন শুভেচ্ছা পর্যন্ত জানায়নি। বরং গত দুদিন ধরে মেয়েটির সাথে কেমন জানি আচরণ করছে। মেয়েটি গত কাল সারারাত্রি শুধু একটি কন্ঠ শুনার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। সে ঠিক করেছে সে নিজ থেকে কিছুই বলবে না।সে এখানে প্রায় এক ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে, তার প্রিয় মানুষটির জন্য। অথচ তার কোন পাত্তাই নেই। তাকে অনেক কষ্টে রাজি করানো হয়েছে আজকে এখানে আসার জন্য। মেয়েটি চায় আজকের দিনটা শুধু্ই সে তার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে এখানে কাটাবে। এই জায়গাটা তাদের অনেক প্রিয়।কেউ একজন আসতে দেখা যাচ্ছে। এইতো তার প্রিয় মানুষটি আসছে। মেয়েটির মুখের মেঘ হঠাত কাটতে শুরু করলো। কেন জানি মেয়েটার এই মানুষটার মুখটা দেখলেই সমস্ত কিছু ভুলে যায়। সে চায় বাকী জীবনটা যেন সে তার প্রিয় এই মানুষটির সাথে কাটাতে পারে। ছেলেটা বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে মেয়েটির পাশে এসে বসে পড়লো।
-এতো সময় লাগলো তোমার? আমি সেই ১ ঘন্টা ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
-আমারতো আর কোন কাজ নেই যে,তুমি বলবে আর আমি উড়ে চলে আসবো।
-আমি কি এমন বলেছি?
-তুমিতো এটাই বুঝতে চাইছো। আমার এতোই যদি দেরি হয়ে যায় তাহলে তুমি চলে যাওনি কেন? তোমারতো চলে যাওয়া উচিৎ ছিলো।
-তুমি গত দু'দিন ধরে আমার সাথে এমন আচরণ করছো কেন? আমার যদি কোথাও ভুল হয়ে থাকে তাহলে আমাকে বলো। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।
-তোমার কোন ভুল নেই। আমার আচরন এমনই।যাই হোক হঠাৎ এতো তাড়াহুড়ো করে আসতে বললে কেন?
-না এমনিতেই আমি ঠিক করেছি আজকে আমরা সারাদিন একসাথে ঘুরবো। তারপর কোন একটা ভালো রেস্টুরেন্টে দুপুরে লাঞ্চ করবো। তোমার পছন্দের ঐ রেস্টুরেন্টাতে।
-এই জন্য আমাকে তুমি ডেকেছো?
-আমার আজকে তোমার সাথে ঘুরতে খুব ইচ্ছা করছে। দেখ আজকে আমি শাড়ী পড়েছি। চোখে কাজল দিয়েছি। তুমি না আমাকে একদিন বললে এভাবে সাজতে। আর চোখের কাজল না তোমার অনেক পছন্দ। তাই আজকে সেজে এসেছি।
-তোমার শাড়ী পড়া দিবস উপলক্ষ্যে আমাকে ১১০ মাইল পারি দিয়ে আসতে হলো। তোমার কি কোন ........ দেখ এই ধরনের ন্যাকামী কোন একটা সময় পর্যন্তই ভালো লাগে। সব সময় না। তুমি জানো আমার আজকে অনেক কাজ ছিলো। তাছাড়া আমার কাছে কোন টাকা পয়সাও ছিলো না যে হুট করে ঢাকায় চলে আসবো।
-আমিতো তোমার পছন্দ মতোই সেজেছি। আমি ভাবলাম তুমি খুশি হবে। (চোখের কোনে মেঘ জমতে শুরু করেছে)।
-(রেগে গিয়ে).. আমি আবার এইসব কবে বললাম। আর বললে না হয বলেছি। তাই বলে তুমি কি কোন সময়-অসময় বুঝবে না? যতসব ! আর শোন তোমাকে শাড়ীতে একবারে বয়স্ক লাগছে। আর তোমার চোখের কাজল-টাজল না কি দিয়েছো সেটা কেমন জানি লাগছে। সবাইকে সবকিছু মানায় না।
-(কান্না ধরা গলায়) ভুল হয়ে গেছে আর এই ভাবে কখনো সাজবো না। আমি বুঝিনি তুমি রাগ করবে।
-খুশি হওয়ার মতোতো কিছুই দেখলাম না। আর মুখে এইসব কি মেখেছো আটা নাকি? এমন ফর্সা লাগছে কেন?
-আমি কোন সময়ই মুখে কিছু দেই না।আমার গায়ের রঙই তো এমন। (চোখের কোণের মেঘ ভারি হয়ে আছে, এই পড়লো বলে)।
-যাই হোক আমার তাড়াতাড়ি যেতে হবে। আমার আজকে আসাটাই বোকামী হয়েছে। তুমি বললে আর আমি চলে আসলাম। এখন নিজের প্রতি নিজেরই রাগ লাগছে।
-আমার পাশে দয়াকরে একটু বোস না। আবার কবে আসবে না আসবে? আচ্ছা আজকের দিনটা একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে না? মনে হচ্ছে অন্য রকম একটা দিন। তুমি কি জান আজকে কোন একটা বিশেষ দিন ?
-হ্যাঁ! জানবো না কেন? আজকে হলো বিশ্ব শিশু দিবস।
-মেয়েটি এক পলকে তাকিয়ে আছে ছেলেটির দিকে। এ যেন অচেনা এক মানুষ। আচ্ছা তোমার কি কিছু হয়েছে? তুমি গত দু"দিন থেকে কেমন জানি হয়ে গেছো। আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে চিনতে পারছি না। তুমি কি ই..... নাকি অন্য কেউ?
-দেখ তোমার সব ন্যাকামো কথা শুনতে আমার একটুও ভালো লাগছে না। আর মানুষ মাত্রই বদলায়। আর বদলাতেতো কোন দোষের কিছু দেখছি না। মনে করো যদি একটা খুনি ভালো চায়, বদলাতে চায়, তাহলে কি তাকে বদলাতে দেয়া উচিত না?
-হ্যাঁ তা উচিত। কিন্তু যদি কোন ভালো মানুষ খুনি হতে চায় তখন?
-তোমার কাছে যত আলতু ফালতু কথা। এই সব কথা শুনতে এখন বিষের মতো লাগছে। আর শোন আমি বদলাইনি। তার পরেও যদি তোমার কাছে মনে হয় আমি বদলে গেছি। তাহলে আমার মনে হয় তোমার একটা সিদ্ধান্তে আসা উচিত।
-তুমি কোন সিদ্ধান্তের কথা বলছো? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।(বিস্ময় ভরা গলায়)
-দেখ তোমার যদি মনে হয়। আমার আচরনে সমস্যা। তাহলে তুমি আমার চেয়ে ভালো একজন খুজে নাও। আর আমাদের সম্পর্ক্যটা এখানেই শেষ করে দাও।
-মেয়েটা কি শুনলো সে বুঝতে পারছে না। এটা কি কোন দু:সপ্নের মধ্যে হচ্ছে। তার সমস্ত পৃথিবী যেন হঠাত এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সে তার চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না। সে তার চোখের জল দেখাতে চাইছে না। তার পাশে বসে থাকা মানুষটিকে। চোখের জলের বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হয় আর কোন দিন থামবে না।
মেয়েটা কোনভাবে নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করে বলল-কি বলছো এই সব।এখানে সম্পর্কের বিষয়টা আসলো কোথা থেকে? আমার সমস্যা কি জানো- আমি তোমাকে ছাড়া কখনো থাকতে পারবো না।অথচ আমি থাকতে চাই। আর তোমার সুবিদাটা কোথায় জানো-তুমি আমার সাথে কখনো থাকতে চাও না, আর তোমাকে থাকতেও হবে না। আচ্ছা ঠিক আছে আমি আর তোমার বাঁধা হয়ে থাকতে চাই না। আমি চাই তুমি যেখানেই থাকো ভালো থাক। সুখে থাকো। চোখের জল মুছতে মুছতে সে উঠে দাঁড়ালো। আমি আসি। ছেলেটি মেয়েটির হাত চেপে ধরে -বসিয়ে দিলো।
-এখন আবার আমাকে বাঁধা দিচ্ছো কেন? (মেয়েটি ফুফিয়ে -ফুফিয়ে কাঁদছে)।
-আমি বাধা দিচ্ছি না। আমাদের যেদিন প্রথম দেখা হয সেদিন তুমি আমাকে কিছু গিফট দিয়েছিলে। সেগুলো আমি তোমাকে ফেরত দিয়ে দিতে চাচ্ছি।
-আমি কি তোমার কাছে ঐগুলা ফেরত চেয়েছি?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে )।
-না চাইলেও ! আমি এইগুলা রাখতে চাচ্ছি না। তুমি একটু বোস আমি ঐ গুলা নিয়ে আসছি। আমার এক বন্ধু ঐসব হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
-তুমি কি এগুলো আজকে নিয়ে এসেছো? (হতাশা আর বিস্ময় নিয়ে)। (মনে মনে ভাবছে) তার মানে তার সম্পর্ক্য ভাঙ্গাটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিলো। ঘটনা গুলো ঘটছে খুব দ্রুত। বোঝা যাচ্ছে না আসলেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে। একটা সম্পর্ক্য কি এতোই মূল্যহীন। আচ্ছা তাহলে কি সে অন্য কোন মেয়েকে পছন্দ করে। কিন্তু তাকে দেখেতো কখনো এমনটা বুঝা যায়নি। মেয়েটি ভাবছে আর তার চোখের জল অবিরাম ধারায় গড়িয়ে পড়ছে। মেয়েটি চায় না তার এই কান্না কিছুতেই এই মানুষটি দেখুক। সে তার কান্না থামাতে চাইছে, কিন্তু কিছুতেই তার কান্না থামছে না। চোখের জল আজ তার অবাধ্য হয়ে গেছে।
অবশেষ: আসলে ছেলেটা সব সময় তার প্রিয়তমাকে বিশেষ বিশেষ দিনে একটু চমকে দিতে পছন্দ করে। তাই গত দু'দিন ধরে সে তার প্রিয় মানুষটির সাথে খারাপ আচরণ করছে। এধরনের দুষ্টমিতে প্রায় সময়ই মেয়েটিকে কাঁদতে হয় । তবে কেন জানি ছেলেটার মাঝে মাঝে মেয়েটাকে কাঁদাতে ভালো লাগে। মেয়েটা যখন ছেলেটার জন্য কাঁদে ,তখন ছেলেটার নিজের অজান্তেই অহংকার পেয়ে বসে। কেননা, পৃথিবীর সবচাইতে মায়াবতী মেয়েটা তার জন্য কাঁদছে। এর চাইতে বেশী তার জীবনে আর কি বা পাবার আছে।ছেলেটা কখনো এই মেয়েটা হারাতে চায়না। ছেলেটা ভাবছে আচ্ছা সে কি জানে আমি তাকে কতটুকু ভালোবাসি? আজকে সে মেয়েটার অনেক আগেই এখানে এসে উপস্থিত হয়েছিলো। সে চমকে দেবার জন্য তার প্রিয় মানুষটির সবচাইতে প্রিয় গোলাপ নিয়ে এসে আগেই একটি ঝোঁপের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে। সে তার লুকিয়ে রাখা গোলাপগুলো বের করে তার পিছনে নিয়ে নিলো। যেন মেয়েটি চট করে ধরে না ফেলতে পারে যে হাতে কি আছে।
সে মেয়েটির কাছে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটি মাথা হাটুর উপরে রেখে কাদছে। ছেলেটা বলল-এই নাও তোমার জিনিস। মেয়েটা মাথা না তুলে হাত বাড়িয়ে নিলো। ছেলেটা মেয়েটির হাতে তার প্রিয় একগুচ্ছ সাদা গোলাপ দিলো। মেয়েটার হাতে ফুলের স্পর্শ লাগতেই মাথা তুলে তাকালো। মেয়েটা দেখলো তার হাতে একগুচ্ছ ধবধবে সাদা গোলাপ। মেয়েটি ছেলেটার দিকে তাকালো। এইতো এখন ছেলেটার সেই পরিচিত মুখখানা দেখা যাচ্ছে। হাসি মাখা একটু দুষ্টু টাইপ মুখটা। ছেলেটা তার হাটু গেঢ়ে মেয়েটার সামনে বসলো। সে মেয়েটার চোখের জল মুছে দিচ্ছে।আর তখন বলল- "শুভ জন্মদিন" মেয়েটার চোখ দিয়ে তুতীয়বারের মতো বর্ষণ শুরু হলো। তবে এই বর্ষণ প্রথম দুটি থেকে সম্পূণ্য আলাদা। অভিমান আর ভালোবাসা মাখা। যাকে বলে আনন্দ অস্রু। ছেলেটা মেয়েটির চোখ মুছে দিচ্ছে। কিন্তু এখন তার নিজের চোখই ভারী হয়ে যাচ্ছে। না কিছুতেই কাদা যাবে না।ছেলেদের কাঁদতে নেই। তার প্রিয়তমা তার দিকে তাকিয়ে আছে কাজল কালো আঁখি নিয়ে। সেই চিরচেনা আখিঁ দুটি। বিধাতা যেন সাজিয়েছে আপন মনে। ছেলেটি মেয়েটির পাশে এসে বসলো।
ছেলেটা কোন একটা কথা বলতে চাইতেই মেয়েটা তার হাতে ছেলেটার মুখ চেপে ধরলো। মেয়েটি ছেলেটার কাধে মাথা রাখলো। ছেলেটা তার প্রিয়তমার হাতটা আলতো ভাবে চেপে ধরলো।
চারিদিকে খোলা মাঠ। মাঠের একপাশে ঘন কাশফুল ফোটে আছে। মাতাল-হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। মাঠে কচি সবুজ ঘন ঘাসের চাদর। চাদরে বসে আছে একটি তরুন ও একটি তরুণী। তরুণীর মাথা তরুণের কাধে আর একটি হাত তরুনের হাতে। দুজন চুপ করে আছে। কোন কথা হচ্ছে না। এ যেন কথা বলার সময় না। শুধুই নিড়ব থাকার সময়। শুধুই অনুভব করার সময়। হঠাৎ অচেনা এক ঝাঁক পাখি বিজয় মিছিল করতে করতে চলে গেলো তাদের পাশ কাটিয়ে। দুই তরুণ-তরুণী তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। তাদের মাথার উপর সাদা-নীল মেঘের ছাউনী। তাদের দুজনের প্রায় সবকিছুতেই অনেক মিল। তাদের চিন্তা ধারায়ও অনেক মিল। যেমন এখন তারা দুজনেই চিন্তা করছো-জীবনটা এতো ছোট কেন? হঠাৎ এক ঝাপটা বাতাস এসে তরুণীর লম্বা মসৃণ চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো। চুলগুলো তরুনীর মুখে এসে পড়েছে। কিন্তু সে সরাতে চাইছে না। সে চায় তার প্রিয় মানুষটি তার মুখের চুল সরিয়ে দিক।কিন্তু সে লজ্জায় তার অতি আপন মানুষটিকে বলতে পারছে না।হঠাৎ তরুনের চোখ পড়লো তরুনীর মুখে পড়ে থাকা মসৃণ চুলে। তরুন-তরুণী একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে । তাদের চোখে পলক পড়ছে না। এইতো তরুণের হাত তরুণীর মুখে পড়ে থাকা চুলের দিকে এগিয়ে আসছে। তরুণী তার চোখ বন্ধ করে ফেললো.......।
0 comments:
Post a Comment