যেভাবে ব্যায়াম উপকার করে


ফুসফুস: এক্সারসাইজ করলে শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা প্রায় ১‘৫ গুণ  বেড়ে যায়। তাই তখন  দ্রুত ও ভারী নিঃশ্বাস নিতে হয়। এ কাজ চলতে থাকে যতক্ষণ না ফুসফুসের সঙ্গে যুক্ত পেশিগুলো পুরোপুরি ক্লান্ত হয়। ব্যায়ামের সময় একজন মানুষ বাতাস থেকে যত বেশি অক্সিজেন


গ্রহণ করতে পারে, বলা যায় সে তত বেশি সুস্থ সবল।


পেশি: কাজ ও চলাচল করার জন্য আমাদের শরীরে শক্তির প্রয়োজন, সেই শক্তির জোগান আসে শরীরে জমানো সুগার বা গ্লুকোজ থেকে। খাবারের বিভিন্ন উপাদান থেকে শরীর গ্লাইকোজেন নামের এ সুগার তৈরি করে। আরো কিছু শক্তি থাকে অ্যাডেনোসিন ট্রাই ফসফেট বা এটিপিরূপে, যা পেশিতে শক্তি জোগায়; কিন্তু মানবদেহ খুব বেশি পরিমাণ এটিপি বা গ্লাইকোজেন জমা করে রাখতে পারে না। পেশির কাজ করার ফলে শরীরে জমানো শক্তি যখন ক্ষয় হয়ে যায়, তখন নতুন এটিপি উত্পাদন করার জন্য শরীরের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। কিন্তু ব্যায়ামের সময় পেশিতে অক্সিজেনের জোগান কম হওয়ায় ল্যাকটিক নামে এক ধরনের এসিড উত্পন্ন হয়, যা সরাসরি শক্তির জোগান দিতে পারে না। তাই ব্যায়ামের ফলে পেশিতে যে সাময়িক ব্যথা হয়, তার কারণ হলো এটিপির অভাব। কিন্তু নিয়মিত পেশির ব্যায়াম ও নিয়মিত ল্যাকটিক এসিড উত্পাদনের ফলে পেশির কোষ তথা টিস্যুর আকার বাড়ে। সুতরাং নিয়মিত এক্সারসাইজের ফলে শরীরের পেশি উন্নত ও শক্তিশালী হয়।


ত্বক: ব্যায়ামের ফলে শরীরে উত্পন্ন তাপ ত্বকের মাধ্যমে নির্গত হয়। ঘর্মগ্রন্থি থেকে লবণ ও পানির মিশ্রণ ঘাম নিঃসৃত হয়। এ ঘাম বাতাসে শুকিয়ে যাওয়ার পরই শরীর ঠাণ্ডা হয়। বগল ও ঊরুসন্ধির ঘর্মগ্রন্থি থেকে যে ঘাম বের হয়, তাতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকায় এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ফ্যাটকে ভাঙতে শুরু করে। তাই এ ঘাম পরিষ্কার না করলে ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়।


অস্থিসন্ধি: শরীরের ওজন বহন করতে অস্থিসন্ধিতে যে চাপ পড়ে, ব্যায়াম তার চেয়ে পাঁচ-ছয় গুণ বেশি চাপ প্রয়োগ করে। হাঁটু, গোড়ালি, নিতম্ব, কাঁধ বা কনুইয়ের অস্থিসন্ধির কাজ ভিন্ন ভিন্ন হলেও তারা মূলত একই মূলনীতিতে কাজ করে। প্রত্যেক অস্থিসন্ধিস্থলে উপাস্থি ও লুব্রিকেটিং ফ্লুইড থাকে। এরা অস্থিসন্ধির ক্রিয়াপদ্ধতিকে চলমান রাখে। ব্যায়াম যত বেশি করা হয়, হাড় ও অস্থিসন্ধি ততই সবল হয়। তবে অনিয়মিত ও অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে অস্থিসন্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।


দেখা যাচ্ছে, ব্যায়ামের ফলে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো সচল ও সবল থাকে। প্রতিদিন নির্ধারিত সময় ব্যায়াম করলে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি আসে এবং কর্মোদ্যম বাড়ে। জীবনটাকে উপভোগ করতে হলে সুস্থ ও সবল শরীরের প্রয়োজন সবার আগে। সুন্দর জীবনের জন্য তাই ব্যায়াম করুন, সুস্থ শরীরে জীবন কাটান।


হৃদপিণ্ড: ব্যায়ামের সময় হৃপিণ্ডের রক্ত পাম্প করার হার বেড়ে যায়। যত বেশি ব্যায়াম করা হয়, হৃদপিণ্ড এ কাজে তত বেশি পারদর্শিতা অর্জন করে। ফলে নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে ধীরে ধীরে হূিপণ্ড সবল হয় ও সুস্থ থাকে। এক্সারসাইজ করার ফলে শিরা ও ধমনির বৃদ্ধি ঘটে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।


কিডনি:  কিডনির রক্ত শোধন করার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই শরীর বেশি পরিমাণ পানি গ্রহণ করতে পারে। এ কারণে শরীরে প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ ঠিক থাকে। একই সঙ্গে কিডনি সুস্থ থাকে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।


মস্তিষ্ক: অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহের ফলে মস্তিষ্কেরও উপকার হয়। এতে নিউরো ট্রান্সমিটারের যোগাযোগ ও মস্তিষ্কের কোষগুলো বেশি সক্রিয় হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্ক অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতে দু-একটি জিনের সক্রিয়তা কমে অথবা বেড়ে যায় এবং শরীরে বেশকিছু ব্যাধির প্রতিরোধক তৈরি হয়।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!