নিঃশ্বাসে ক্যান্সার সনাক্ত


আমাদের নিঃশ্বাসের উপাদান বিশ্লেষণ করেই শরীরের ভেতরে কি ঘটছে তা কিছুটা বোঝা যায়। পাশ্চাত্যে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ করা হয় গাড়িচালকদের নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের মাত্রা নির্ণয় করার জন্য। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিঃশ্বাস থেকে নির্ণয় করা যাবে আরও অনেক কিছুই। দেহে ক্যান্সার ছড়াচ্ছে কিনা, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ ছড়াচ্ছে কি না এসবের তথ্যও এখন জানা সম্ভব হবে। সম্প্রতি লাটভিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা একটি কৃত্রিম ইলেকট্রনিক নাক আবিষ্কার করেন যা কিনা গন্ধ শুঁকে শরীরে ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ চিহ্নিত করতে পারে এবং এ নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা করছেন তারা।

“নিঃশ্বাস হল পৃথিবীর সবচাইতে জটিল মিশ্রণগুলোর মধ্যে একটি,” বলেন জেমস কেরি। তাইওয়ানের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ কাওসিউং এর এই রসায়নের অধ্যাপক নিজেও একটি ইলেকট্রনিক নাক আবিষ্কারের ওপর কাজ করছেন। তবে এই নাকটি একটু অন্যরকম। এটি রক্ত শুঁকে শরীরে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ সম্পর্কে তথ্য দিতে সক্ষম হবে। ক্লিভ ল্যান্ড ক্লিনিক এর ডক্টর রেইড ডেইক বলেন, “আমরা এখন নিঃশ্বাসে এমন সব পদার্থ খুঁজে পাচ্ছি যেগুলোর ব্যাপারে আগে আমরা কিছুই জানতাম না”।

ইতোমধ্যেই ডাক্তাররা হৃদপিণ্ড-প্রতিস্থাপিত রোগীদের নিঃশ্বাস বিশ্লেষণ করে থাকেন অ্যালকেন নামক যৌগটির উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য। এর উপস্থিতি থেকে বোঝা যায় শরীর সেই হৃদপিণ্ডটিকে গ্রহণ করতে পারছে না। অ্যাজমার রোগীদের নিঃশ্বাসে নাইট্রিক অক্সাইডের উপস্থিতি থেকে ডাক্তাররা বুঝতে পারেন তাদের শরীরে ঔষধ কাজ করছে কি না। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যেসব রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির ভিত্তিতে রোগ-উপসর্গ অথবা শারীরিক অবস্থা নির্ণয় করা হয় সেগুলো বেশ ভালো পরিমাণে উপস্থিত থাকে। শরীরে ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও একই ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করলে যে সমস্যাটি হবে তা হলো, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ যেসব রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে তা অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ সুস্থ কোষ থেকেও নিঃসৃত হতে পারে। এ কারনেই কেউ আশা করছেন না যে এই প্রক্রিয়াটি খুব একটা সহজ হবে।

সুস্থ কোষ, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ, ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত কোষ সব ধরণের কোষই বিভিন্ন উদ্বায়ী পদার্থ নিঃসরণ করে এবং এগুলো রক্তের মাধ্যমে ফুসফুসে এসে আমাদের নিশ্বাসের সাথে মিশে যায়। তাই নিঃশ্বাস পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ওই ব্যক্তির পরিবেশ এবং খাদ্যাভ্যাসের ওপরেও কারণ এ দুটোর প্রভাবেও পরিবর্তিত হতে পারে নিশ্বাসের উপাদান। এছাড়া ক্যান্সারের ফলে সৃষ্ট টিউমারের আশপাশ থেকে যেসব পদার্থ নিঃসৃত হয় সেগুলোও এই পরীক্ষার ফলাফলে গড়বড় তৈরি করতে পারে। এসব সমস্যার সমাধানেও বিজ্ঞানীরা পথ খুঁজে বের করছেন। ক্লিভ ল্যান্ড ক্লিনিকের ফুসফুস ক্যান্সারের প্রোগ্রামের ডাইরেক্টর পিটার মাযোন স্বীকার করেন যে এই গবেষণার কার্যকারিতার ব্যাপারে মানুষের সন্দেহ থাকতেই পারে। কিন্তু যদি এমনটা করা যায় যে, ল্যাবরেটরিতে একটি পাত্রে জন্মানো ক্যান্সার কোষের থেকে নিঃসৃত পদার্থের তথ্য বিশ্লেষণ করা হল। সুস্থ স্বাভাবিক কোষের নিঃসৃত পদার্থের সাথে এর যে সব পার্থক্য থাকবে, অসুস্থ ব্যক্তির নিঃশ্বাসে সেই সব পদার্থের খোঁজ পাওয়া গেলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যাবে যে ওই ক্যান্সার কোষ তার শরীরে উপস্থিত।

নিঃশ্বাসে ক্যান্সার কোষ এবং ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত কোষের সূক্ষ্ম গন্ধ নির্ণয়ের জন্য বিজ্ঞানীরা অনেকে সাহায্য নিচ্ছেন বেশ তীক্ষ্ণ নাকের প্রাণী, কুকুরের। গবেষণায় দেখা যায়, প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে কুকুর ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার এবং শরীরের কোষে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নির্ণয় করতে সক্ষম।

এই গবেষণা যদি সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে নিশ্বাসের গন্ধ শুঁকেই বিভিন্ন রোগের লক্ষণ বোঝা যাবে এবং রোগ নির্ণয়ে কাটা-ছেঁড়া করার আর কোনও প্রয়োজন হবে না।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!