ঢাকা,
২৯ এপ্রিল (টাইমস অফ বাংলা) : হঠাৎ ক্ষুধার আক্রমণ পেয়ে বসলে স্যান্ডউইচ,
কেক, ভাজাভুজি – এসব মজাদার খাবার টপাটপ মুখে পুরতে থাকেন সান্ড্রা৷ কয়েক
মিনিটে কয়েক হাজার ক্যালোরি খতম, ক্ষুধা থাকুক বা নাই থাকুক৷
সান্ড্রা ‘বিঞ্জ ইটিং ডিসওর্ডার’ রোগে ভুগছেন৷ এক ধরনের মানসিক অসুখ
এটি৷ খেতে খেতে যখন পেটে আর জায়গা থাকে না, তখনই ক্ষান্ত দেন এই নারী৷ তবে
সৌভাগ্যবশত ক্ষুধার এই আক্রমণটা পেয়ে বসে অল্পসময়ের জন্য৷ সপ্তাহে মাত্র
কয়েকদিন৷
অন্য দুই ধরনের ইটিং ডিসওর্ডার ‘বুলিমিয়া’ ও ‘অ্যানোরেক্সিয়া’-র মতো ওজন
নিয়ে মাথা ঘামায় না বিঞ্জ ইটাররা৷ বমি করে কিংবা খেলাধুলা ও ছোটাছোটি করে
ক্যালোরি কমানোর দিকে নজর নেই তাদের৷ ইটিং ডিসওর্ডারের এই ধরনটি সম্পর্কে
মানুষের তেমন কোনো ধারণা নেই৷ অথচ ইটিং ডিসওর্ডারের প্রায় ১৫ শতাংশ রোগী এই
সমস্যায় ভোগেন৷ খাবারের মাধ্যমে তারা মানসিক চাপ ও ভেতরের শূ্ন্যতা দূর
করতে চান৷
বিঞ্জ ইটারদের কাছে খাওয়া একটি নেশা৷ সত্যিকারের ক্ষুধা বা খাওয়ার ইচ্ছার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই৷
নেশার মতো৷
সান্ড্রা জানান, ‘‘অনেকে যেমন বিয়ার পান করতে পাবে ছোটেন৷ আমি ছুটি
ফ্রিজের দিকে৷ হঠাৎ করেই এই চাপটা এসে যায়৷ তখন অশান্তি লাগে৷ ঠিক
মাদকাসক্তদের মতো৷”
আন্ড্রেয়া হেলেসিক
কিন্তু গপাগপ খাওয়ার পর হঠাৎ চেতনা ফিরে আসে৷ তখন লজ্জা, অনুশোচনা ও
হতাশা দেখা দেয়৷ নেতিবাচক চিন্তা ঘিরে থাকে মাথায়৷ আবার সেই চিন্তাটা ঢাকতে
খাবারের দিকেই হাত বাড়ান তারা৷ এ যেন ভয়ংকর এক চক্র, যা থেকে সহজে
বেড়িয়ে আসতে পারেন না ভুক্তভোগীরা৷
বাড হনেফ শহরের পুনর্বাসন ক্লিনিকের ইটিংডিসওর্ডার বিভাগের প্রধান
আন্ড্রেয়া হেলেসিক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অন্যান্য নেশার মতোই একটা কিছু
পুষিয়ে নেবার প্রবণতা থাকে বিঞ্জ ইটারদের৷ ভুক্তভোগীরা নিজেরাই জানে না,
এটা আসলে কী? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আত্মমর্যদাবোধের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে
সমস্যাটির৷ অথবা এর পেছনে থাকে অতীতের কোনো মানসিক আঘাত, যার ঠিকমত
চিকিত্সা হয়নি৷”
সান্ড্রা বছর দুয়েক ধরে ড. হেলেসিকের কাছে চিকিত্সা নিচ্ছেন৷ ইতিমধ্যে
সমস্যা কিছুটা আয়ত্তে এসেছে৷ তাঁর ভাষায়, আমি আসলে ঠিকমতো খাওয়াই শিখিনি৷
এখন আমি বুঝতে পেরেছি, খাওয়া দাওয়ার এই সমস্যার পেছনে রয়েছে শৈশবে ঘটা কোনো
মানসিক আঘাত৷ এটি আমি এখন চিকিত্সা করে দূর করার চেষ্টা করছি৷”
অনেকেই স্থূলাকায়
ভুক্তভোগীদের ৪০ শতাংশই স্থূলাকায়৷ তবে সব মোটা মানুষই যে বিঞ্জ ইটার তা
নয়৷ রোগটির মূল লক্ষণ হলো, হঠাৎ করে প্রচণ্ড খাওয়ার ইচ্ছা৷ এর সাথে যুক্ত
হয় নিজের শরীর সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা, সমাজে চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা ও
নানা মানসিক সমস্যা৷ ওজন বাড়ার সাথে সাথে ডায়বেটিস ও উচ্চরক্তচাপের মত
অসুখ বিসুখও দেখা দেয়৷
ইওহানিটা হাসপাতালের ডা. মিন-সিওপ সোন
সান্ড্রার ওজন ১৩৪ কিলোগ্রাম৷ তাই ঘরকন্নার কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে ওঠেন
তিনি৷ ধোয়ামোছা করার পর দেহ আর এগুতে চায় না৷ সারা শরীর ব্যথা করে৷
চলাফেরাও কষ্টকর হয়৷
সাইকো সোমাটিক চিকিত্সার দুই বছর পর এখন ওজনের বিরুদ্ধ লড়তে চান
সান্ড্রা৷ নানা রকম ডায়েটের চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় পাকস্থলী অপারেশনের
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ এতে পাকস্থলীর অনেকটা কেটে ফেলা হয়৷ এর ফলে অল্প
খেয়েই দ্রুত পেটে ভরে যায়৷
বনের ইওহানিটা হাসপাতালের ডা. মিন-সিওপ সোন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অপারেশন
শুধু ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে৷ কিন্তু ইটিং ডিসওর্ডারের মূল সমস্যাটির
সমাধান করতে পারে না৷ এজন্য প্রয়োজন সাইকো থেরাপি৷ অপারেশন করার পরও
থেরাপি চালিয়ে যাওয়া দরকার৷”
অপারেশনের পর সান্ডার কাছে এক নতুন জীবনের পথ খুলে যায়৷ কিন্তু তাঁকে
সাইকো থেরাপি চালিয়ে যেতে হবে, সেই সাথে পুষ্টি পরামর্শকেন্দ্রে শেখানো
নিয়ম কানুনগুলি মেনে চলতে হবে৷ সমস্যাগুলি মনের ভেতরে পুষে না রেখে মুখ
খুলতে হবে৷ তবেই হাতের মুঠোয় আসবে সাফল্য৷
সুত্র: ডি ডব্লিউ
0 comments:
Post a Comment