আমাদের সমাজে যতই ঢাক গুড়গুড় রাখঢাক থাকুক না কেন, যৌনতা নিতান্তই
প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। জন্মগত ভাবেই প্রকৃতি মানুষকে এমনভাবে
তৈরি করেছে যে অত্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মেই মানব শরীর পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ
বোধ করে ও মিলিত হতে চায়। আর এভাবেই পৃথিবীর বুকে মানব জাতির বংশ বৃদ্ধির
ধারা অব্যাহত থাকে।
তবে যৌনতা কি কেবলই বংশ বৃদ্ধির মাধ্যম? একেবারেই না। যৌনতা সেই মাধ্যম
যা দুজন মানুষের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় করে। কেউ স্বীকার করুক আর নাই
করুক, ভালোবাসা বা প্রেমের সম্পর্কের মাঝে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান
দখল করে আছে শারীরিক ভালোবাসা। মানুষ কোনো জানোয়ার নয়, আর তাই মানুষের
ক্ষেত্রে দৈহিক মিলনের সময় মানবিক আবেগের উপস্থিতিও বাঞ্ছনীয়। এবং এই
জিনিসটাই তাকে পৃথক করে প্রাণী জগতের অন্যান্য প্রানীকূল হতে। জোর করে
শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন কিংবা কেবল শরীরের প্রতি আকর্ষিত হয়ে দৈহিক মিলন
অহরহ ঘটছে আমাদের চারপাশে, তবে সেটা আসলে একরকম প্রকৃতি বিরুদ্ধই।
বিজ্ঞানীরা বহু আগেই এই মতবাদ ব্যক্ত করে রেখেছেন যে মানবিক আবেগের
উপস্থিতি বা মানসিক প্রেম অনেকাংশেই বাড়িয়ে তোলে দৈহিক মিলনের আনন্দকে।
এবং সেই সাথে অর্গাজম বা চরম তৃপ্তিকেও। দৈহিক মিলনে আবেগের উপস্থিতি একজন
মানুষকে করে তোলে সম্পূর্ণ রূপে তৃপ্ত, কেননা সেই সময়ে তৈরি হয় মানসিক
আবেগের বিনিময়ও। ভালোবাসা বিহীন দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে ক্ষণিকের শারীরিক
তৃপ্তি হয়তো আসে, কিন্তু মানসিক শান্তি বা তৃপ্তি সেখানে স্পষ্টতই
অনুপস্থিত থাকে।
আবার অন্যদিকে একটি ভালোবাসার সম্পর্ককে মজবুত করতেও দৈহিক সম্পর্ক
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুজন মানুষ পরস্পরকে ভালোবাসলে
স্বভাবতই কাছে আসার জন্য একটি তীব্র আকর্ষণের সৃষ্টি হয়, এবং সেই আকর্ষণকে
পূর্ণতা দেয় যৌন সম্পর্ক তথা শারীরিক ভালোবাসা।
কারো সাথে দৈহিক ভাবে মিলিত হওয়া আর নিজের পছন্দের মানুষটির সাথে
শারীরিক ভালোবাসার বিনিময়- এই দুটি ব্যাপারের মাঝে যে মোটা দাগের একটি
পার্থক্য আছে, তা হয়তো অনেকেই মানেন না। অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক
স্থাপন যেখানে আদিম সমাজ হতেই স্বীকৃত এবং পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত
পতিতাবৃত্তি নামক পেশাটি, সেখানে স্বভাবতই এই ধারণা গড়ে উঠেছে যে দৈহিক
মিলন কেবলই একটি সাময়িক আনন্দ লাভ ও সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়া। তবে
বিজ্ঞানীরা বলছেন এই ধারণা সম্পূর্ণই ভুল। দৈহিক মিলন সন্তান জন্মদানের
মাধ্যম সত্যি, কিন্তু সেই সাথে সুন্দর যৌন সম্পর্কের চর্চা একজন মানুষকে
মানসিকভাবে সুস্থ রাখতেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন সময়ে গবেষণায় এটাই
বের হয়ে এসেছে যে যারা ভালোবাসাহীন যৌন সম্পর্কে লিপ্ত, তাঁদের চাইতে
অনেক বেশী সুখী সেই সব মানুষেরা যারা তাঁদের পছন্দের নারী/পুরুষের সাথে
রচনা করেছেন শারীরিক ভালোবাসার সেতুবন্ধন।
জীবনের পথে হতে চান একজন সুখী মানুষ, তাহলে অবশ্যই আপনাকে খুঁজে নিতে
হবে একজন মনের মতন সঙ্গী/সঙ্গিনী। চর্চা করতে হবে সুন্দর মানসিক ও শারীরিক
সম্পর্কের। ভালোবাসাহীন দৈহিক মিলনের চাইতে তা আপনাকে অনেক বেশী স্বস্তি ও
তৃপ্তি যোগাবে, রাখবে মানসিকভাবে সুস্থ। না,আমরা বলছি না। বলছে বিজ্ঞান।
0 comments:
Post a Comment