কিডনীর চিকিৎসা কতখানি কষ্টসাধ্য আর ব্যায়বহুল তা যিনি নিজের ক্ষেত্রে
বা কোন কাছের মানুষের ক্ষেত্রে দেখেছেন তিনিই জানেন। প্রবীণতা ঘনিয়ে আসবার
সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্ত শারীরিক অঙ্গ-উপাঙ্গ ধীরে ধীরে ক্ষমতা হারাতে শুরু
করে এবং বিগততারুণ্যের কথা খুব বেশি মনে করিয়ে দেয় তাদের মাঝে কিডনী
অন্যতম। সঠিক সময়ে শরীরের যত্ন সময়ে কথা বলে। দৈনিক খাদ্য গ্রহনে কিংবা
কাজের ফাঁকে কিছু বিশেষ বিধি মেনে চললে বার্ধক্যের বিড়ম্বনা পিছিয়ে যাবে,
এড়ানোও যেতে পারে। চলুন কিডনী ভালো রাখার জন্যে মনে রাখা প্রয়োজন এমন
অন্তত বারোটি পয়েন্ট জেনে নিই ।
১. খাবারে লবণের পরিমিত উপস্থিতি কিডনীর জন্যে উপকারি। অতিরিক্ত
লবণ কিডনীর জন্যে ক্ষতিকর। লবণ রক্তের জলীয় অংশ ধরে রাখে। লবণের পরিমাণ
বেড়ে গেলে জলীয় অংশের পরিমাণও বেড়ে যায়, বাড়তি সে জলের বোঝা রক্তচাপকে
প্রভাবিত করে। রক্তচাপ বেড়ে যায়। বাড়তি রক্তচাপ কিডনী বিকল হবার অন্যতম
কারণ।
২. কফি, চকোলেট, চিনিপ্রধান যে কোন পানীয়, উত্তেজক তরল প্রভৃতির ঘনঘন
সেবন কিডনীর জন্যে হুমকি। পারতপক্ষে এ ধরণের খাবার গ্রহন এড়িয়ে চলতে হবে
অখবা সেবনের মাত্রা নিজ স্বার্থেই কমিয়ে আনতে হবে।
৩. তরল পদার্থ খুব দ্রুত রক্তে চলে যায়। আমরা উষ্ণ রক্তের প্রাণি
বিধায় হঠাৎ খুব বেশি ঠাণ্ডা তরল গ্রহন করলে রক্ত তা স্বাভাবিকভাবে নিতে
পারে না। এটি রক্তের তাপমাত্রা, ধমনীগাত্রে তার চাপকে প্রভাবিত করে। আর তাই
হঠাৎ অতিরিক্ত শীতল পানীয় গ্রহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. পাস্তুরায়িত ফলের রসে বাজার পূর্ণ হয়ে আছে। কিডনী ভালো রাখতে হলে
বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত না হয়ে এসব সেবনে রাশ টানতে হবে। পাস্তুরায়িত রস
কিডনী ও ব্লাডার দুটোর জন্যেই ক্ষতিকর। ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনতে এসবের
ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।
৫. তৃণভোজী প্রাণির হাড়ের স্যুপ আমাদের কিডনীর জন্যে বিশেষ উপকারি।
কারণ এতে প্রচুর খনিজ উপাদান থাকে এবং তরলিত হবার কারণে রক্তে খুব দ্রুত
শোষিত হয়ে যায়।
৬. প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস জল পান করার কথা মনে রাখতে হবে। জল যে শুধু
গ্লাসে ঢেলে পান করতে হবে ব্যাপারটা পুরোপুরি তা নয়। ৮-১০ গ্লাস একটা
বিশেষ পরিমাণ মাত্র। এ মাত্রাটুকু কোন না কোন ভাবে পুষিয়ে নিতে হবে। হতে
পারে তা জলের পাশাপাশি সবজির ঝোল, ডাল, জলীয় ফলমূল কিংবা চা পান করে।
৭. শীতকালে পরিবেশের প্রভাবে ত্বকের জলীয় অংশ শোষিত হয়ে যায়। গরমকালে
ঘাম নিসৃত হবার কারণে শরীরর থেকে জল ও লবণ বেরিয়ে যাবার ব্যাপারটি যেভাবে
আমাদের মনে থাকে এবং তা পুষিয়ে নেবার চেষ্টা থাকে শীতকালে তা থাকে না।
শীতকালে বাড়তি জলপান, রান্নায় বাড়তি লবণ ও তেল যোগ করার কথা মনে রাখতে
হবে।
৮. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক মাছ ও সবজি রাখতে হবে। আমাদের
আদিতম নিবাস সমুদ্র হবার কারণে আমাদের রক্ত, পুরো শারীরবৃত্তিক প্রকৃয়া
মিনারেলের জন্যে আজও বড় মুখিয়ে থাকে।
৯. অতিরিক্ত পরিশ্রমে রক্তে দূষণের পরিমাণ বেড়ে যায়। যে কারণে
পরিশ্রমের পর নিদ্রা আসতে থাকে। শরীরকে সে ঘুমটুকু দিতে পারলে রক্তের সে
দূষণটুকু কেটে যায়। পুরো ব্যাপারটির সাথে কিডনীর স্বাস্থ্য ভীষণ
ঘনিষ্টভাবে জড়িত। কিডনী ভালো রাখতে হলে শরীরকে তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম
উপহার দিতে হবে।
১০. অতিরিক্ত ভোজন রক্তের ঘনত্ব ও রক্তচাপকে ঋণাত্মকভাবে প্রভাবিত করে
যা কিডনীর জন্যে ভীষণ ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ভোজনটুকু এড়াতে হবে। আরেকটি
ক্ষতিকর ব্যাপার গভীর রাতে খাদ্যগ্রহন। খাদ্য গ্রহনের জন্যে কিছু নূন্যতম
শক্তিক্ষয়ের প্রয়োজন হয় গভীর রাতে যা ক্রমশ অপ্রতুল হয়ে ওঠে। ফলে
খাদ্যবস্তু পুরোপুরি জীর্ণ হতে পারে না। এই আধাজীর্ণ খাবার কিডনীর ওপর
ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
১১. সুষম খাদ্য গ্রহনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা
প্রস্তুত করা মোটেও অবহেলা করার মত কিছু নয় যেটিকে আমরা একপ্রকার
গুরুত্বহীনতার তালিকায় ফেলে রেখেছি। প্রতিদিনের সুষম খাবার গ্রহন
নিশ্চিতকরণ শরীরের সমস্ত অঙ্গ-উপাঙ্গের জন্যে জরুরী, কিডনী তো বটেই।
১২. ধ্যান ও যোগাসন মানসিক স্থৈর্যের সাথে সাথে শারীরবৃত্তিক স্থিতি ও
সুস্থতা আনে। প্রতিদিন ধ্যান ও যোগাসনের জন্যে একটি নির্দিষ্ট সময় আলাদা
করে রাখলে কদিনেই দারুণ সুফল মিলবে। আর ব্যাক্তিবিশেষে শরীরের জন্যে
প্রযোজ্য এমন পরিমিত ব্যায়ামের গুরুত্ব কহুল কথিত, এ ব্যাপারে নতুন করে
কিছু বলবার অবকাশ নেই।
0 comments:
Post a Comment