ঢাকা, ২০ মে (টাইমস অফ বাংলা) : তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে মানুষের
শরীরে আটটি রোগের সৃষ্টি হয়। এসব রোগের কারণেই প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫৭ হাজার
মানুষ মারা যায় এবং প্রতি ছয়টি মৃত্যুর মধ্যে একটি মৃত্যু হয় তামাকের
কারণে। এ তথ্য উঠে এসেছে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার ও
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস এর গবেষণায়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, তামাকের কারণে সৃষ্ট রোগগুলো হলো-ফুসফুসের
ক্যানসার, মুখের, স্বরযন্ত্রের ও শ্বাসনালির ক্যানসার, হৃদরোগ, মস্তিষ্কে
রক্তক্ষরণ, পক্ষাঘাত, ফুসফুসের যক্ষ্ম ইত্যাদি।
সোমবার সকালে রাজধানীর রুপসী বাংলা হোটেলে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ
সেন্টার ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের গবেষণাভিত্তিক প্রস্তাবনা
সেমিনারে এ তথ্য দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান।
গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত, ক্যাম্পেইন ফর
টোব্যাকো ফ্রি কিডসের প্রধান তাইফুর রহমান, নারীনেত্রী ও উন্নয়ন কর্মী
ফরিদা আক্তার।
আবুল বারাকাত বলেন, “তামাক ব্যবহারের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে প্রতিবছর ৩০
বছরের বেশি বয়সের ৫৭ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে এবং কয়েক লাখ মানুষ পঙ্গুত্ব
বরণ করে। আবার নিজে ধূমপান না করেও অন্যের ধূমপানের কারণে কর্মক্ষেত্রে
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এক কোটি ১৫ লাখ মানুষ।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ
মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করে। তামাক সেবন শুরু করে অতি অল্প
বয়সে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়।”
বিশেষ করে নারীদের নানা ধরনের প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে, গর্ভবতী নারী সুস্থ শিশু জন্ম দিতে পারছে না বলেও জানান তিনি।
গবেষণায় আরো বলা হয়, “তামাক ব্যবহারে জিডিপির ৩ শতাংশের বেশি আর্থিক
ক্ষতি হয়। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় পাঁচ হাজার ১০০ টাকা ব্যয় হয়। জাতীয়
উৎপাদনশীলতায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।”
তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য গবেষণায় আটটি সুপারিশ তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ ড.
আবুল বারাকাত। তিনি বলেন, “পৃথিবীর সর্বোচ্চ তামাক সেবনকারী দেশগুলোর মধ্যে
বাংলাদেশ অন্যতম। অন্যান্য দেশে বিড়ি ও সিগারেটের দাম বেশি থাকলেও
বাংলাদেশে এর মূল্য ও সরকারের আরোপিত করের হার খুবই কম।”
সুপারিশে তিনি বলেন, “সরকার যদি বিড়ি-সিগারেটের ওপর উৎপাদন ‘কর’ গড়পড়তা
খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ বাড়ায় তাহলে সরকারের অতিরিক্ত প্রায় আড়াই হাজার
কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে।”
“কর বাড়ানো হলে এক কোটি চার লাখ প্রাপ্তবয়স্ক লোক বিড়ি-সিগারেট ছেড়ে
দেবেন। এক কোটি পাঁচ লাখ তরুণ বিড়ি-সিগারেট সেবন করবেন না। ৮৪ লাখ মানুষের
অকাল মৃত্যু রোধ করা যাবে” গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, “তামাক সেবন দেশ
থেকে একেবারে নিষিদ্ধ করা যাবে না। কারণ নিষিদ্ধ বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। সুতরাং গণতান্ত্রিকভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে
হবে।”
তিনি বলেন, “দাম বাড়লে চাহিদা কমে। এখানে দামের সঙ্গে সম্পর্কটা একটু ভিন্ন। তবে দাম বাড়লে কিছুটা হলেও কমবে।”
ধুমপান নিয়ন্ত্রণ করতে হলে উৎপাদন কর বাড়াতে হবে এবং শিক্ষার হার বাড়াতে হবে বলে যোগ করে ড. খলিকুজ্জামান।
উন্মুক্ত আলোচনায় ধূমপান রোধে যে আইনটি রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা এবং
সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানো ও সরকারকে চাপ প্রয়োগের কথা বলেন
বক্তারা।
0 comments:
Post a Comment