রাজধানীর হোটেলে পুলিশের হয়রানি। ফ্ল্যাট বাড়িতে স্থানীয় হোমরা চোমরা
ও মাস্তানদের উৎপাত। তাদের বখরা না দিয়ে নিস্তার মেলে না। তাই বাধ্য
হয়েই হোম সার্ভিসে জড়িয়ে গেছি। খদ্দেরের কল পেলে বাসায় যাই। এমনটাই
বলছিলেন রাজধানীর এক যৌনকর্মীর।এক আবাসিক হোটেলে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার।
কিন্তু সেখানে কমিশন দিয়েও রেহাই ছিল না, তাদের অন্যান্য চাহিদায় সাড়া
দিতে হতো। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই তাকে বেছে নিতে হয়েছে হোম সার্ভিস।
এভাবে অসংখ্য যৌনকর্মী নানাভাবে তাদের পেশাকে বিস্তৃত করেছে এখন। হোটেল আর রাজপথ পেরিয়ে তারা যুক্ত হয়েছে হোম সার্ভিসে। তাদের এ পেশার নেপথ্যে রয়েছে শক্তিশালী দালাল চক্র। এরা প্রকাশ্যে চলার পথে হাত বাড়িয়ে পথিকদের হাতে ধরিয়ে দেয় তাদের
ভিজিটিং কার্ড। রাজধানীর বিভিণ্ন মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, বাজার, অলিগলি ও
অফিস-আদালতের সামনে দালালরা এসব কার্ড বিলি করে। যে কোন প্রয়োজনে ফোন
দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মুহূর্তেই জনতার ভিড়ে অদৃশ্য হয়ে যায় তারা।
যৌনকর্মীরা জানায়, আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার ও বয়-বেয়ারা নির্দিষ্ট
কমিশনের ভিত্তিতে খদ্দের যোগাড় করে দেয় তাদের। অনেক পেশাদার যৌনকর্মী
অবশ্য নিজেরাই কার্ড বিলি করে। এসব কার্ডে সাধারণত মধ্যস্থতাকারীর মোবাইল
নম্বর থাকে। পার্ক, ওভারব্রিজ এলাকায় তাদের তৎপরতা বেশি।
আরেক কৌশল-হারবাল চিকিৎসার নামে ভিজিটিং কার্ড বিতরণ। ফার্মগেট, শাহবাগ,
কাকরাইল, মালিবাগ, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, গাবতলী এলাকায় এ তৎপরতা বেশি।
ব্যস্ততম গাড়িতে ছুড়ে দেয়া হয় যৌন চিকিৎসার নামের হ্যান্ড বিল। ওই সব চিকিৎসার আড়ালে চলে যৌন ব্যবসা। রাজধানীর আবাসিক হোটেলের সামনে প্রতিদিন অবস্থান করে দালাল চক্র।
টার্গেট করা পথচারীকে তারা ডাকে মামা বলে। কাছে এলেই ধরিয়ে দেয় ভিজিটিং
কার্ড।
বলে, মামা যেমন বয়সের দরকার সব ব্যবস্থা আছে। জায়গার সমস্যা হলে বলবেন। তবে রেটটা বাড়িয়ে দিতে হবে।
যৌনকর্মীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের পরিচিত মানুষের মাধ্যমে বাসায়
খদ্দের পেয়ে থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফ্ল্যাট বাসায় ভিআইপি যৌন
ব্যবসা নতুন কিছু নয়।
বিশেষ করে মহাখালী ডিওএইচএস, গুলশান, বনানী লালমাটিয়া, দিলু রোড,
ইস্কাটন রোড, সেন্ট্রাল রোড, মোহম্মদপুর, রামপুরা, শান্তিনগর, উত্তরা,
কাকলী, কালাচাঁদপুর এলাকায় এ ব্যবসা চলছে বলে জানায় এক যৌনকর্মী। তবে ভিআইপি এলাকায় যৌন ব্যবসা পরিচালিত হয় বিশেষ গোপনীয়তায়। সেখানে যাতায়াত করে বিশেষ ধরনের খদ্দের।
মালিবাগের এক ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মী জানায়, ঢাকা শহরের দু’-একটা স্থান ছাড়া সব জায়গাতেই এ ব্যবসা চলছে। মোবাইল ফোন ও ভিজিটিং কার্ডের মাধ্যমে এ ব্যবসার গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পেটের দায়ে যে যৌনকর্মীরা রাস্তায় নেমেছে পুলিশের হাতে প্রতিনিয়ত
নির্যাতিত হতে হয় তাদের। কিন্তু ভিআইপি এলাকায় পুলিশকে সালাম দিয়েই ঢুকে
যায় তারা।
পথচারী আলাল মিয়া জানান, তার হাতে একটি কার্ড পড়েছিল। কল করলে একজন
পুরুষ রিসিভ করে। বিনয়ের সঙ্গে জানায়, আপনার ফোনের অপেক্ষায় আছেন ঢাকার
বিভিন্ন কলেজ, ইউনিভারসিটির ছাত্রী ও মধ্য বয়সের মহিলা যৌনকর্মী। বলুন কি
সেবা করতে পারি স্যার?
তার মতে, আজকাল সংসারে অশান্তি, স্বামী বিদেশে বা স্বামীর কর্মস্থল ঢাকার বাইরে-এ ধরনের অনেক মহিলা হোম সার্ভিসে যোগ দিয়েছেন। ভিজিটিং কার্ডের নম্বরধারীরা সাধারণত ৪টি ভাগে রাজধানীতে যৌনকর্মী সরবরাহ করে।
প্রথমত- যৌনকর্মীকে ভিজিটরের বাসার ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া,
দ্বিতীয়ত-যৌনকর্মী ও ফ্ল্যাট ভিজিটরকে নিরাপদে নিয়ে আসা, তৃতীয়ত-হোটেল
কক্ষে যৌন মিলনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং
চতুর্থ -প্রাইভেট পরিবহন ও
পার্ক।
বিশেষ শ্রেণীর যৌনকর্মীরা নিজের ফ্ল্যাট বাসা-বাড়িতে খদ্দেরকে আপ্যায়ন করে। একটি সূত্র জানায়, কেবল টাকার জন্য নয়-নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্যও অনেক মহিলা এ কাজে নেমেছে। তবে এ সংখ্যা খুব কম। এমনও যৌনকর্মী আছে যাদের সন্তান বড়-স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে।
সূত্র মতে, আবাসিক হোটেলের প্রায় ২ থেকে ৩শ’ ভিজিটিং কার্ডধারী যুবক
এখন যৌনকর্মীদের মধ্যস্থতাকারীর কাজে লিপ্ত। ভিজিটিং কার্ডের আয় থেকে চলছে
তাদের সংসার।
কাওরান বাজারের এক হোটেল বয় জানায়, আজকাল ভদ্র ঘরের মেয়েরাও যৌন
ব্যবসার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা
নেমেছে এ পেশায়। তারা বড় বড় হোটেলে যায়। তাদের কন্টাক্ট নম্বর কেবল
হোটেলে পাওয়া যায়।
ডিওএইচএস-এর এক যৌনকর্মী সম্পর্কে সে জানায়, দূরের জেলায় ব্যবসা করে।
নিঃসন্তান। প্রতি শুক্রবার স্বামী ঢাকায় ফেরে। ওই মহিলা সপ্তাহে ৩দিন
আমাদের মাধ্যমে বাসায় খদ্দের নেয়। ভিজিটের অর্ধেক টাকা দিয়ে দেয়।
বনানীর এক যৌনকর্মীর স্বামী সরকারি কর্মকর্তা। সে ১ সন্তানের মা। টাকার জন্য এ পেশায় এসেছে।
সূত্র খুব বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, সে একেবারে হাড়কিপ্টে। জিজ্ঞেস করা
হয়, মহিলার আয় কত? সপ্তাহে ২৫ হাজার টাকা। আর সে কমিশন পায় ৫ হাজার
টাকা। জানতে চাওয়া হয় কতদিন ধরে মহিলা এ কাজে লিপ্ত? উত্তরে জানায়-৪
মাস।
পরিচয় কিভাবে? হঠাৎ একদিন হোটেলের সামনে তার প্রাইভেট কার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
আরেক সূত্র জানায়, হোটেলে শুধু পতিতা মেয়েরা আসে না। কেউ আসে পতিতা
সেজে। খদ্দের দেখে পছন্দ হলে বাসায় নিয়ে যায়। বিনিময়ে আমাদের কিছু টাকা
ধরিয়ে দেয়। তার মতে এরা পতিতা নয়।
স্বামীর অসঙ্গতি, সংসারে ঝামেলা ও বিভিন্ন মানসিক কষ্টের কারণে এ কাজে
তারা ঝুঁকে পড়েছে। জানতে চাওয়া হয়, এই ধরনের মহিলাদের সংখ্যা? সে বলে
তার হাতে আছে ২৩ জন। প্রতিদিন পালাক্রমে তাদের খদ্দের পাঠাতে হয়। এরা ‘ভাবী’ নামে পরিচিত।
এই ‘ভাবী’দের ভিজিট কেমন? ঘণ্টা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তবে সুদর্শন
পুরুষ তাদের বেশি পছন্দের। তাদের জন্য ডিসকাউন্ট আছে। এ সূত্রটির মাসিক আয়
১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
এক যৌনকর্মী জানায়, সে ঢাকায় এসেছে স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ
ঘটিয়ে। প্রতিবেশী ভাবীর সঙ্গে পরিচয়ের পর তার উৎসাহে এ পেশায় এসেছে।
অল্প দিনেই তার শতাধিক খদ্দের জুটেছে। এক ডাকে সবাই তাকে চেনে। পুলিশ তার
জন্য কোন সমস্যা নয় বলে জানায়।
0 comments:
Post a Comment