স্বাস্থ্য ডেস্ক: ১০ মে (টাইমস অফ বাংলা) : কথা বলতে গেলে প্রথম
শব্দেই আটকে যান৷ অনেক টেনেটুনে বাক্যটা শেষ করতে পারেন৷ টেলিফোন করতে ভয়
পান৷ রাস্তা খুঁজে না পেলে, কাউকে জিজ্ঞেস করতেও সংকোচ বোধ করেন তাঁরা৷ আর
এই তোতলাদের ৮০ শতাংশই পুরুষ৷
জার্মানিতে আট লক্ষ মানুষ তোতলা৷ সাধারণত সমস্যাটা তিন থেকে ছয় বছরের
মধ্যে শুরু হয়৷ ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বাচ্চার ক্ষেত্রে তোতলামি ভালো হয়ে যায়
বড় হতে হতে৷ অন্যরা এই সমস্যা নিয়েই জীবন কাটান৷ পুরোপুরি ভালো হয় না
তাঁদের এই প্রতিবন্ধকতা৷
কথা বের হয় না কিছুতেই
তোতলারা যা বলতে চান, তা তাঁরা ঠিকই জানেন৷ কিন্তু বলতে গেলে শব্দটা
কিছুতেই বের হতে চায় না৷ একটা শব্দ বা কথা বারবার বেরোতে থাকে৷ তাই তাঁরা
মানুষজনের মধ্যে যেতে চান না৷ গুটিয়ে থাকেন৷ অনেক ভূক্তভোগী আবার কিছু কিছু
শব্দ বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেন৷ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চান না৷
কেন মানুষ তোতলায়, শরীরের কোন মেকানিজম এজন্য দায়ী, তা নিয়ে বহু গবেষণা
হয়েছে৷ কারণ বের করার জন্য ১৫ বছর ধরে একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ আর তা
হলো ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা এমআরআই৷ এই পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের
ক্রিয়াকর্মের ছবি উঠে আসে৷
তোতলারা টেলিফোন করতে ভয় পান
এতে দেখা যায়, তোতলাদের মস্তিষ্কের ডান অংশের সামনের দিকে অসংগতি থাকে৷ যে দিকটির দায়িত্বে রয়েছে কথা৷
নিওরোলজিস্ট ডা. মার্টিন সমারও একজন ভুক্তভোগী৷ তিনি জানান, ‘‘এটি
সম্ভবত নিয়ন্ত্রণের সমস্যা৷ কথা বলতে গেলে যে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রয়োজন,
যেমন জিব, তালু, গলার পেশি ইত্যাদি ঠিকমতো বশে থাকে না তোতলাদের৷”
মানসিক চাপে বাড়ে
গবেষকরা মনে করেন, তোতলানোর পেছনে নিওরোলজিক্যাল ও মানসিক কারণ – এই
দুটোই থাকতে পারে৷ দেখা গেছে, মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে তোতলামির মাত্রা
বেড়ে যায়৷ জিনেরও একটি বেশ বড় ভূমিকা রয়েছে তোতলামিতে৷ চার ভাগের তিন ভাগ
তোতলার ক্ষেত্রে এই কথা প্রোযোজ্য৷ কোনো কোনো পরিবারে অনেকেই তোতলা৷
যেমনটি রাইনার ননেনব্যার্গ-এর পরিবারে দেখা যায়৷ রাইনার বলেন, ‘‘আমার বাবা ও
দাদা তোতলাতেন৷ আমার একটি ছেলে আছে, সেও তোতলায়৷”
রাইনার ননেনব্যার্গ নিজের তোতলামিটা গুরুতর বলে মনে করেন৷ কখনও কখনও
একটা শব্দই বের হতে অসংখ্য সেকেন্ড পার হয়ে যায়৷ স্পিচ থেরাপি নেওয়া হয়নি
তাঁর৷ সেসময় এই ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না৷
৭০ বছর পূর্ণ হচ্ছে তাঁর৷ সারাটা জীবন তোতলামির কারণে ভুগতে হয়েছে
তাঁকে৷ অবশ্য মাঝে মাঝে কোথাও না ঠেকে কথা বলতে পারেন রাইনার৷ কিন্তু সময়টা
খারাপ থাকলে কোনো শব্দই মুখ দিয়ে বের হতে চায় না৷ তবে কিছুটা সান্ত্বনা
খুঁজে পান এই ভেবে যে, বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও এই সমস্যায় ভুগেছেন৷
যেমন প্রাচীন গ্রিসের বিজ্ঞানী ও দার্শনিক এরিস্টটল, ব্রিটিশ লেখক জর্জ
বার্নার্ড শ’, বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন৷ এই সব বরেণ্য মনীষীরাও ছিলেন
বাকপ্রতিবন্ধী৷
কোলনে তোতলাদের জন্য একটি সেল্ফহেল্প গ্রুপ গড়ে তোলা হয়েছে৷ সপ্তাহে
একদিন মিলিত হন ভুক্তভোগীরা৷ এই গ্রুপের লক্ষ্য: নিজের তোতলামিকে ভয় না
পেয়ে সমস্যাটিকে কীভাবে সামলানো যায় তা শেখা৷ এই ভাবে বাধা ছাড়া কথা বলতে
শেখেন অংশগ্রহণকারীরা৷ এখানে টেলিফোন করার ট্রেনিং দেওয়া হয়৷ দেওয়া হয়
ভিডিও ট্রেনিং৷ সবার সামনে বক্তব্য রাখার অভ্যাস করানো হয়৷ দৈনন্দিন কাজ
কর্মে অসুবিধাগুলি কীভাবে কাটানো যায়, সে দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়৷ ব্যবস্থা
করা হয় স্পিচ থেরাপির৷ এই গ্রুপের এক সক্রিয় সদস্যা পেটার সলবে৷ তিনি
জানান, ‘‘কোনো বাক্য অন্যভাবে বললেও সুবিধা হতে পারে৷ যেমন যে সব শব্দ বলতে
গেলে আটকে যায়, সেগুলিকে পাশ কাটিয়ে অন্য শব্দ নেওয়া যেতে পারে৷”
আরেক ধরনের ট্রেনিং হলো কণ্ঠস্বর নরম করে কথা বলা৷ এইভাবে কথা বললে
তোতলামিটা থাকে না৷ মার্টিন সোমার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এ জন্যে আমাকে
অদ্ভুতভাবে কথা বলতে হয়৷ আরেকটা পদ্ধতি হলো, ধীরে ধীরে চেপে কথা বলা৷ আমরা
যে তোতলা, তাতে আমাদের কোনো হাত নেই, কিন্তু কী ভাবে আমরা তোতলাবো সেটা
আমরা ঠিক করতে পারি৷”
গানে গানে কথা
তোতলানোর সময় মস্তিষ্কের এক অংশ অন্য অংশের সমস্যাটা কাটাতে চেষ্টা করে৷
আর তাই গানের মাধ্যমেও তোতলামিকে আয়ত্তে আনা যায়৷ কেননা সংগীত ও গানের জগৎ
থাকে মস্তিষ্কের ডান দিকে৷ আর বা দিকে থাকে কথার এলাকা৷ এ জন্য তোতলাদের
গান গাইতে কোনো অসুবিধা হয় না৷ সে জন্য কোলনের ভূক্তভোগীদর সমাবেশে নিয়মিত
গানের চর্চাও করা হয়৷ কোথাও হোঁচট না খেয়েই৷
0 comments:
Post a Comment