অভিভাবক যখন আপনি একা

বিয়ের পর সন্তান নিয়েছিলেন শখ করে। কিন্তু প্রায় ৫ বছর সংসার করে হঠাৎ করেই ভেঙ্গে গেলো সাজানো গুছানো সংসারটা। আপনার আদরের সন্তানটি আপনার কাছেই আছে। কিন্তু আগে দুজন মিলে তার দেখা শোনা করতেন বলে এখন একা একা কিভাবে ওদের দেখাশোনা করবেন ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছেন না। বেড়ে ওঠার বয়সে ঠিক মত দেখা শোনা করতে না পারলে তো বাচ্চার ভবিষ্যৎও নষ্ট হবে। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
আজকাল সমাজে ডিভোর্সের হার বেড়ে গেছে। সঙ্গে বাড়ছে বাচ্চাদের দূর্ভোগ। ডিভোর্সের পর বাবা কিংবা মা, যার কাছেই বাচ্চারা থাকে তার উপর দিয়ে একটি বড় ধরণের ঝড় যায়। অনেক সময় অকালে স্বামী বা স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলেও পড়তে হয় এমন সমস্যায়। আপনি যদি একা অভিভাবক হন তাহলে আপনার সন্তানদেরকে পরিকল্পিত উপায়ে বড় করতে হবে। আসুন জেনে নেয়া যাক একা অভিভাবকদের সন্তান পালনের কিছু টিপস।

দেখাশোনার জন্য দল গঠন করুন

একটা সন্তান বড় করে তুলতে খুব বেশি মানুষ লাগে না। আপনি একাই যথেষ্ট। কিন্তু তারপরেও আপনার আশে পাশে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আছে আপনার। তাঁরা যেহেতু আপনাকে সাহায্য করতে চাইছেন, আপনি ফিরিয়ে না দিয়ে সাহায্য নিন। আশে পাশের মানুষজনকে কিছু দ্বায়িত্ব ভাগ করে দিন। তাহলে কর্মক্ষেত্রে গেলেও বাচ্চা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে না।

সাহায্য চান

কারো কাছে সাহায্য চাওয়াটা বেশ কঠিন। কিন্তু বিপদে পরলে এই কঠিন কাজও করতে হয়। কারো কাছে সাহায্য চাইলে আপনি ছোট হয়ে গেছেন এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং সাহায্য চাইলে অনেক মানুষ খুশিও হয়। তাছাড়া সব দিক তো আপনার একার পক্ষে দেখা সম্ভব না। তাই বন্ধু ও পরিবারের কাছে সাহায্য চান নির্দ্বিধায়।

রুটিন বানিয়ে নিন

প্রতিদিনের কাজগুলোর একটি রুটিন বানিয়ে নিন। রুটিন বানিয়ে নিলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভুলে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে হবে না। বাচ্চাকে সকালে ডে কেয়ার বা স্কুলে দিয়ে আসা থেকে শুরু করে অফিসের কাজ, বাচ্চার টিচার আসার সময়, ফিরে এসে ব্যায়াম, খাওয়া সব কিছুকেই সময়ে বেঁধে ফেলুন। শুনতে যান্ত্রিক শোনালেও রুটিন করে কাজ করা বেশ সুবিধাজনক।

নিয়ম চালু করুন

সন্তানদের সাথে একদিন বসে কথা বলে কিছু নিয়ম কানুন চালু করুন। তাদের সুবিধা অসুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে তারা কি করবে এবং কি করবে না সেটা তাদেরকে বলে দিন। তবে যাই বলুন রাগ দেখিয়ে কিছু বলবেন না। সন্তানদের সাথে রাগারাগি করলে তাদের জিদ বেড়ে যায় এবং তখন তাঁরা কথা শুনতে চায় না।

সন্তানের সাথে সম্পর্ক মজবুত করুন

আপনার আচরণ প্রতিফলিত হয় আপনার সন্তানের আচরণে। তাই সন্তানের সাথে ভালো আচরণ করুন। বাচ্চারা সব সময় চেষ্টা করে অভিভাবককে খুশি করতে, তাই তাদের সাধারণ কাজেরও প্রশংসা করুন। বন্ধুর মতো আচরণ করুন আপনার সন্তানের সাথে। এতে তাঁরা একাকীত্বে ভুগবে না এবং অভিভাবক-সন্তানের সম্পর্কের ভীত আরো মজবুত হবে। একা অভিভাবক হলে এটা আরও বেশি জরুরি।

বিশ্বস্ত শিক্ষক রাখুন

আপনার সন্তান স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে এমন কাউকে তার শিক্ষক হিসেবে রাখুন। পরিবার, পাড়া প্রতিবেশী অথবা পরিচিতের মধ্যে কেউ হলে ভালো হয়। এমন একজনকে শিক্ষকের দ্বায়িত্ব দিন যাকে আপনার সন্তান পছন্দ করবে এবং যার কথা মন দিয়ে শুনবে। সন্তানের উপর জোর করে কিছু না চাপিয়ে তার পছন্দের গুরুত্ব দিলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং পড়াশোনায় আগ্রহ পাবে।

সন্তানকে নিয়ে আনন্দে মাতুন

শুধু স্কুল, পড়াশোনা আর ঘুম এমন জীবনে আপনার সন্তান সহজেই হাঁপিয়ে উঠবে। তাই সন্তানকে নিয়ে মাঝে মাঝে কোথাও বেড়াতে যান। অথবা সন্ধ্যায় খাইয়ে আনতে পারেন তার প্রিয় কোনো খাবার। অবসরে খেলাধুলায় মেতে উঠতে পারেন সন্তানের সাথে। এতে আপনার সন্তান আপনাকে বন্ধু ভাববে এবং দুজনেরই আনন্দে সময় কেটে যাবে।

নিজেকে সময় দিন

সব দিক সামলে নিয়েও নিজেকে সময় দিতে ভুলে গেলে চলবে না। নিজের যত্ন নিন সবসময়। হাজার ব্যস্ততার ফাঁকেও নিজের জন্য অল্প করে হলেও সময় বের করে নিন।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!