স্বাস্থ্য ডেস্ক: ২৪ মে (টাইমস অফ বাংলা) : ত্বক সুন্দর রাখার সবচেয়ে
সঠিক পথ হলো বেশি বেশি পানি পান করা । আমাদের দেহের ৫৬ শতাংশই হলো পানি। আর
এর মধ্যে ত্বক নিজেই ধারণ করে ১০ ভাগ। ফলে পানি বেরিয়ে গেলে ত্বক অসহায়
হয়ে পড়ে। ত্বকের যেসব গ্রন্হি থেকে তেল আর পানি বের হয়ে থাকে তা আর আগের
মতো ঘাম বা তেল কোনোটাই তৈরি করতে পারে না। এতে ত্বক আরো শুকিয়ে যেতে
থাকে। তাই ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। লোমকূপ পরিষ্কার থাকলে এমনিতেই ত্বক
দেখায় উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত। ত্বকের গভীরের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য অনেকেই
নিয়ে থাকেন স্টিম বা ভাপ। ত্বকের যত্নে স্টিম নেওয়ার ইতিহাসটা বেশ পুরোনো।
পানিকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফুটিয়ে বাষ্প তৈরি করা হয়। আর এই
ভাপ নেওয়ার মাধ্যমে ত্বক থাকে পরিষ্কার। এ পদ্ধতিতে ত্বকের উপরিভাগে ঘাম
সৃষ্টি হয়, আর্দ্রতা বাড়ে, যা ত্বক পরিষ্কার করতে জাদুর মতো কাজ করে।
স্টিমে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন গতিশীল হয় এবং ত্বকের উপরিভাগে উজ্জ্বলতা
ফিরিয়ে নিয়ে আসে। অনেকের ত্বকের ওপরে প্রচুর পরিমাণে মৃতকোষ জমে, যাকে বলে
হর্নড। স্টিমের আর্দ্রতা এই লেয়ারকে নরম করে দেয়। ফলে ত্বক পরিষ্কার করতে
সুবিধা হয়।
গরমে ঘাম হলে এবং ধূলাবালির কারণে অনেকের ত্বকে ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের
আক্রমণ ঘটে। অতিরিক্ত ঘাম ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে ফেলে। ফলে লোমকূপের গোড়ায়
বাসা বাঁধে রোগজীবাণু। এর থেকে ঘামাচি হয়। অতিরিক্ত ঘামাচির কারণে ত্বক
বাদামি বর্ণের হয়ে যায়। তাই ঘাম বেশি হলেও তাড়াতাড়ি মুছে ফেলার চেষ্টা
করুন। নিয়মিত গোসল করুন।
যাদের ত্বকে নিয়মিত ঘামাচি হয়, তারা নিমপাতার রস লাগালে উপকার পাবেন।
তেঁতো জাতীয় খাবার খান। ঘাম বেশি হলে ট্যালকম পাউডারের সঙ্গে এক চিমটি
খাওয়ার সোডা ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ডিওডোরান্ট ও বডি স্প্রে ব্যবহার
করুন। সমস্যা বেশি হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো ছত্রাকনাশক ক্রিম, লোশন ও
পাউডার ব্যবহার করুন।
সবার ত্বকের রঙ এক নয়। মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থের তারতম্যের কারণে এ
বৈচিত্র্য ঘটে। রোদে মেলানিন বেশি তৈরি হয়। রোদে পোড়ার কারণে ত্বকে এক
ধরনের বাদামি ও কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। এ দাগ দূর করা কঠিন নয়। ঘরে বসেই তা
করতে পারেন। টক দই, শসার রস, তিলের তেল এক সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি ত্বকে
ম্যাসাজ করুন। এছাড়া দিনে একবার রোদ থেকে ফিরে তরমুজের রস লাগাতে পারেন। এক
টুকরা নিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। ত্বক উজ্জ্বল লাগবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য চন্দনগুঁড়া, দুধের সর আর সামান্য হলুদ একসঙ্গে
মিশিয়ে মুখ ও ঘাড়ে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে
ত্বক হবে উজ্জ্বল আর সাথে আসবে মসৃণতা। এক চিমটে জাফরান,কাঁচা দুধে মিশিয়ে
মুখে লাগান প্রত্যেকদিন। পনেরো দিন পরে নিজেই পরখ করতে পারবেন নিজের
ত্বকের উজ্জ্বলতা।
এক চা-চামচ লাল মসুর ডাল রাতভর কাঁচা দুধে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পেস্ট করে মুখে ও গলায় মাখুন। বিশ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এক টুকরো পাকা কলা ভালোভাবে চটকে নিয়ে এতে কয়েক
ফোঁটা শসার রস মেশান। এরপর মুখে,গলায় ও ঘাড়ে লাগান। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা
পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এক চা-চামচ মুগ ডাল সামান্য কাঁচা দুধে সারারাত
ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পেস্ট করে মুখে-ঘাড়ে মাখুন। ১০ মিনিট পর স্ক্রাব করুন।
তারপর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এটি ত্বকের উপরের মরা কোষের আবরণ
সরিয়ে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
নরমাল ত্বকের জন্য কয়েকটি আমন্ড বাদাম গোলাপ জলে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত।
সকালে পেস্ট করে মুখে মাখুন ২০ মিনিটের জন্য। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর
সাথে সাথে বাড়িয়ে দেয় মসৃণতাও। মধু আর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে
মুখে-গলায় লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট । মধু প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে
কাজ দেবে আর লেবুর প্রাকৃতিক ব্লিচিং গুন ত্বককে আরও পরিষ্কার করবে ।
যথাসম্ভব রোদ এড়িয়ে চলুন। বাইরে বের হওয়ার অন্তত আধাঘন্টা আগে এসপিএফ
২০ যুক্ত সানস্ক্রিন লোশন মেখে নেবেন এবং সঙ্গে ছাতা, সানগ্লাস এবং পানির
বোতল নিতে ভুলবেন না। গরমে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন, প্রতিদিন কমপক্ষে
আট গ্লাস পানি খান, বার বার মুখ ধোয়ার অভ্যাস করুন।
শীতকালে ত্বকের যত্নে আপনাকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে।
শীতের শাকসবজি ও ফল সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।
শিম, বরবটি, নানারকম শাক, মটরশুঁটি, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি প্রতিদিনের
খাদ্য তালিকায় রাখুন।
পরিশেষে ত্বক রক্ষায় প্রসাধনীর দিকে নজর না দিয়ে নজর দিন ত্বকের জন্য
প্রয়োজনীয় পুষ্টির দিকে, যা ছড়ানো আছে প্রকৃতি-প্রদত্ত খাদ্য উপাদান আর
ফলমূলে। মনে রাখবেন ফর্সা ত্বক মানেই সুন্দর ত্বক নয়, সুস্থ ত্বক মানেই
সুন্দর ত্বক।
0 comments:
Post a Comment