আর ঘটছে না চোখাচোখি!


প্রযুক্তির নৈমিত্তিক ব্যবহারে বদলে যাচ্ছে আচরণ। মানুষের ভাব ও আবেগ প্রকাশের উপায় আর আগের মতো থাকছে না। যেমন চোখে চোখে কথা বলা কমে আসছে। চোখের জলের অনুভূতিও ফিকে হয়ে আসছে দিনে দিনে। চোখে চোখে যোগাযোগের ভাষা আর আগের মতো নেই। এজন্য দায়ী করা হচ্ছে প্রযুক্তিকে।

একজন মানুষ গড়ে দিনের প্রায় ৫ ঘণ্টা ব্যয় করে কম্পিউটার বা সেলফোনে। চার ঘণ্টার বেশি ব্যয় করে টিভি দেখে অথবা আইপড, এমপিথ্রিতে গান শুনে। এমন প্রযুক্তি নির্ভরতা মানবিক ভাব, অনুভূতি ও ইশারার আদান-প্রদানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেলফোনে কথা বলা অথবা ইন্টারনেটে চ্যাট করার সময় অনুভূতির সর্বোচ্চ প্রকাশ সম্ভব হয় না। ভার্চুয়াল আলাপ ও ভাববিনিময় মানবিক অনুভূতির আসল রূপকেই আড়াল করে রাখে। কথা বলার সময় অথবা কোনো আবেগ প্রকাশের ক্ষণে চোখ অনেক রকম অভিব্যক্তি ঘটায়, যা বক্তার না বলা কথাকে বুঝতে সহায়তা করে। কিন্তু অনলাইন কথোপকথনে চোখের এ ভাষা বোঝার উপায় থাকে না।

মানুষের সাধারণ কথোপকথনের প্রায় ৩০ থেকে ৬০ ভাগ অংশে চোখের সরাসরি ভূমিকা থাকে। কিন্তু যখন আমরা খুবই আবেগঘন কোনো মুহূর্ত অতিক্রম করি, তখন চোখ ৬০ থেকে ৭০ ভাগ অনুভূতি প্রকাশ করে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব অনুভূতি বন্ধুকে দেখানো যায় না। হয়তো বন্ধুটি ঘটনার কাছাকাছি না থেকেও প্রযুক্তির নানা উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে কী ঘটছে, তা জেনে নিচ্ছে। অনুভূতি ভাগাভাগি করতে চাইছে। কিন্তু সে চোখের সঞ্চালন অনুভব করতে পারছে না। বন্ধুর কষ্টের গভীরতা নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছে না।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেসবুকে চ্যাট করার সময় আসলে কে কী রয়েছে, সে বিষয়েও সম্যক ধারণা পাওয়া যায় না। অন্য প্রান্তের বন্ধুটি হয়তো একই সঙ্গে চ্যাট করছে আবার ইউটিউবে গান শুনছে। এসব আলাপেরও সামঞ্জস্যতা থাকে না সবসময়। কোনো একটা সমস্যা নিয়ে কথা বলার সময় হয়তো বন্ধুটি বাজারে আলোচিত সিনেমা নিয়ে প্রশ্ন করে বসল। বিপত্তিটা সেখানেই। কম্পিউটারের দুই প্রান্তে দুজন বসে কেউই আসলে কারো অনুভূতি সঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।

মানুষের কথার অন্তত ৪০ ভাগ নির্ভর করে চক্ষু সঞ্চালনের ওপর। চোখের মধ্য দিয়ে শ্রোতার চেহারা ও ভাবের পরিবর্তন খেয়াল করা, সেই অনুযায়ী কথা বলা ইত্যাদি ঘটে থাকে। অনলাইন চ্যাটের কারণে সেসব কমে আসছে। গড়ে একজন মার্কিন অন্তত ১৫০ বার নিজের সেলফোন পরীক্ষা করে দেখে নতুন কী এল অথবা ঘটল।

ইংল্যান্ডের কিশোররা তাদের মা-বাবার সঙ্গে যদি ৯৭ মিনিট সময় ব্যয় করেন, তাহলে অনলাইন অথবা প্রযুক্তির সঙ্গে ব্যয় করেন ১১৯ মিনিট। বাংলাদেশের চিত্রও কম-বেশি এমনই বলতে হয়। মনোবিজ্ঞানী ফারি আমিনি, রিচার্ড লেনন ও থমাস লুইস জানিয়েছেন, যখন এক জোড়া চোখ অন্য এক জোড়ার সংস্পর্শে আসে, তখন দুজনের একপ্রকার স্নায়ুবিক সম্পর্ক তৈরি হয়। বলা বাহুল্য, অনলাইন যোগাযোগে সেই সম্পর্ক থাকে না।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!