গ্রীষ্মের ফ্যাশনে ফতুয়া

গ্রীষ্মের ফ্যাশনে ফতুয়া


 

গরমের আরামদায়ক পোশাক হিসেবে ফতুয়া প্রচলিত সুদূর অতীত থেকেই। এক সময় ফতুয়াকে গণ্য করা হতো ঘরোয়া পোশাক হিসেবে। কিন্তু যখন থেকে ফ্যাশনে স্টাইলের পাশাপাশি আরামকেও প্রাধান্য দেয়া শুরু হলো, তখন থেকেই নানা নিরীক্ষার মাধ্যমে ফ্যাশনের জগতে ফতুয়ার আনাগোনা। অতীতে শুধুমাত্র পুরুষরাই ফতুয়া পরতেন। কিন্তু এখন পুরুষরা তো বটেই নারীরাও ফতুয়া পরছেন সমানতালে!


ফতুয়া একটি ক্যাজুয়াল পোশাক হলেও এর সুবিধা হলো কাজের জায়গা বা অফিসেও এটা মানিয়ে যায় বেশ। এ পোশাক পরার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমাও নেই। শিশু থেকে শুরু করে পৌঢ় - যে কেউ পরতে পারেন ফতুয়া। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত কিশোরী ও তরুণীরাই ফতুয়া পরে থাকেন। ছেলেদের ক্ষেত্রে ছোটরা তো বটেই অনেক বয়স্করাও পরেন ফতুয়া। ফতুয়া তৈরির কাপড়েও নেই কোনো বাঁধাধরা ব্যাপার। সাধারণ সুতি কাপড় দিয়ে যেমন ফতুয়া বানানো যায়, তেমনি বানানো যায় জমকালো সিল্কের কাপড় দিয়েও!


রোজকার কাজ যেমন কলেজ, ভার্সিটি বা অফিসে পরার জন্য সুতি কাপড়ে বাটিক বা টাইডাইয়ের ফতুয়ার জুড়ি নেই। ছেলে বা মেয়ে উভয়েই পরতে পারেন এসব কাপড়ের ফতুয়া। ব্লক বা স্ক্রিনপ্রিন্টের ফতুয়াও বেশ চমত্‍কার লাগে। 

আজকাল ছেলে ও মেয়ে সবার ফতুয়াতেই যোগ হয়েছে লেসের কাজ। হাতের কাজের ফতুয়াও পরতে পারেন অনায়াসে। গরমে লিনেন কাপড়ও বেশ আরামদায়ক। তাই প্রতিদিনের কাজে পরার জন্য বেছে নিতে পারেন। লিনেন কাপড়ের ফতুয়াও। খাদি কাপড় যদিও একটু মোটা তবুও দেশীয় ঐতিহ্যের খাতিরে পরতে পারেন খাদির ফতুয়া। আজকাল পাতলা খাদি কাপড় পাওয়া যায়। গরমে আরাম দেবে এ কাপড়টাও। ফতুয়ার রং হিসেবে বেছে নিন আপনার এবং গরমের সাথে মানানসই যেকোনো উজ্জ্বল রং।


শুধু কি রোজকার কাজে? ফতুয়া এখন উত্‍সবের পোশাকও! বিশেষ করে নিপুণ হাতের কাজের জমকালো ফতুয়া উত্‍সবের পোশাক হিসেবে এই গরমে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তবে উত্‍সবের ফতুয়া হওয়া চাই এমন, যাতে ফতুয়ার রং-নকশা-উপকরণে আসে উত্‍সবের আমেজ। এই গরমে উপকরণ হিসেবে সুতিটাই সেরা। তবে দেশীয় নানা ধরনের সিল্ক, অ্যান্ডি কটন গরম এড়িয়ে উত্‍সবকে ফুটিয়ে তোলে। দিনের উত্‍সবে ফতুয়ার জন্য হালকা রং বেছে নিন। হালকা রঙের কাপড়ে ভারী কাজ ফতুয়ায় জমকালো ভাব নিয়ে আসবে। রাতের জন্য বেছে নিন গাঢ় ধরনের রং। ম্যাজেন্টা, মেরুন, কমলা, গোলাপি, হলুদ, লেমন ইয়েলো, সাদা, ফিরোজা, আকাশী, নেভি ব্লু, প্যাস্টেল গ্রিন ইত্যাদি রংগুলোই এখন পোশাকে চলছে। ছেলেরা হাফহাতা বা ফুলহাতা দুটোই পরতে পারেন। কলার বা ব্যান্ড গলাই ভালো দেখাবে। মেয়েরা হাতার ক্ষেত্রে থ্রি-কোয়ার্টার বা বেল হাতা পরতে পারেন, এটাই এমন হাতারই ট্রেন্ড চলছে। তবে চাইলে ফুলহাতাও পরতে পারেন। বোতাম দেয়া হাইনেক বা গোলগলা বেশ ভালো দেখাবে। ছেলে-মেয়ে উভয়েরই ফতুয়ার ঝুল আগের চেয়ে বেড়েছে, তাই খেয়াল রাখুন এদিকে।


শুধু হাতের কাজের ফতুয়া নয় পরতে পারেন অন্যান্য ডিজাইনের ফতুয়াও। আজকাল হরেক রকম পাইপিং, বর্ডার, কাপড়ে বানানো ছোট-বড় বোতাম দিয়ে সাজানো হচ্ছে ফতুয়া। ফলে দিনকে দিন বাড়ছে বৈচিত্র্যময় ফতুয়ার সমাহার। কাটিংয়েও এসেছে নানা পরিবর্তন। বিশেষ করে মেয়েদের ফতুয়ার কাটিং নিয়ে হচ্ছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।


সাথে কী পরবেন :

ছেলে বা মেয়ে যে-ই ফতুয়া পরুন না কেন, ফতুয়ার সাথে জিন্স সবচেয়ে মানানসই। সে কলেজ-ভার্সিটি বলুন, আর অফিসেই বলুন! বন্ধুদের সাথে আড্ডা বা ঘরোয়া আয়োজনেও ফতুয়ার সাথে জিন্সই মানাবে। পরতে পারেন গ্যাবার্ডিনও। তবে আনুষ্ঠানিক আয়োজনে ফতুয়ার সাথে কালো, বাদামি বা কফি রঙের প্যান্ট বেশ আকর্ষণীয় দেখায়।

মেয়েরা ফতুয়ার সাথে পরতে পারেন স্কার্টও। ক্যাপ্রি বা জেংগিসও পরতে পারেন অনায়াসে। ফতুয়ার সাথে মানানসই একটি স্কার্ফ পোশাকে আনবে পূর্ণতা।


সাজগোজ :

ছেলেদের তো মেকআপ করার বালাই থাকে না! তাই বলে কি সাজগোজ বাদ থাকবে? ছেলেরা হাতের কব্জি অনুযায়ী পরতে পারেন ব্রেসলেট। আর ঘড়ি পরতে চাইলে মোটা ডায়ালের ঘড়ি পরুন, এখনকার ঘড়ির ফ্যাশনে ট্রেন্ড এটাই! নিজেকে আরেকটু স্টাইলিশ করে তুলতে চাইলে এক হাতে ঘড়ি ও অন্য হাতে পরে ফেলুন ব্রেসলেট। পায়ে পরতে পারেন কোলাপুরি বা জয়পুরি চপ্পল।


এবার আসি মেয়েদের প্রসঙ্গে। ফতুয়ার সাথে ভারী মেকআপ না করাই ভালো। মেকআপ করুন আপনার ত্বক বুঝে। ব্লাশন ও আইশ্যাডো বেছে নিন আপনার পোশাকের রঙের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেহেতু গরমের দিন, তাই চোখে লাগান ওয়াটারপ্রুফ কাজল বা আইলাইনার। কালো ছাড়াও কাজল লাগাতে পারেন পোশাকের রঙের সাথে মিলিয়ে। গরমের দিনে মাশকারা এড়িয়ে চলাই ভালো। দিনে ঠোঁটে লাগান লিপগ্লস অথবা ন্যাচারাল রঙের লিপস্টিক। রাতে ব্যবহার করতে পারেন একটু গাঢ় রঙের লিপস্টিক। ফতুয়ায় সাথে এক বা দুই লহরীর পুঁতির মালা বেশ মানিয়ে যায়। তবে ফতুয়ার গলায় ভারী কাজ থাকলে মালা না পরাই ভালো। এক হাতে পরতে পারেন মোটা বালা বা ব্রেসলেট। ফতুয়ার সাথে টিপ একেবারেই বেমানান লাগে। তবে কপাল অনেক বেশি চওড়া হলে টিপ নিয়ে নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এবার রইল চুল! ফতুয়ার সাথে খোঁপা, বেণী, পনিটেইল সবই ভালো লাগে। অথবা চুল রেখে দিতে পারেন খোলাও! ফতুয়ার সাথে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল এবং পেনসিল হিল দুটোই মানিয়ে যায়। জমকালো ফতুয়া হলে পরতে পারেন জয়পুরি নাগরাও।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!