কটনবাড মানে ইনফেকশন কানে



স্বাস্থ্য ডেস্ক: ০৪ মে (টাইমস অফ বাংলা) : কটনবাডের কথা বললেই চোখে ভেসে ওঠে কান এবং পরম শান্তিতে কান চুলকানোর দৃশ্য। আগে কটনবাডের পরিবর্তে নানা ধরণের উপকরণ ব্যবহার হতো কানে। কান পরিষ্কারের তাগিদ থেকেই সেগুলো ব্যবহার করা হতো। কটনবাডের আবিস্কারের পেছনেও সেরকম একটা ঘটনা ছিল। ১৯২৩ সালে পোলিশ বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক লিও গ্রেসটেনজেন দেখলেন তার স্ত্রী টুথপিকের মাথায় অল্প করে তুলো পেঁচিয়ে তা দিয়ে কান পরিষ্কার করতে যেয়ে টুথপিক লম্বায় ছোট হওয়ারয় কান ঠিক ইচ্ছেমত পরিষ্কার করতে পারছিলেন না। এই দৃশ্য তাকে সঠিক মাপের কান পরিষ্কারের অবলম্বন হিসাবে কটনবাড তৈরিতে উৎসাহিত করে। ১৯২৬ সালে তিনি তার নিজস্ব প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কটনবাড তৈরি করে বাজারজাত করেন। সেই কটনবাডের ব্র্যান্ড নাম দেয়া হয়- বেবী গাইস। পরবর্তীতে তা ‘কিউ-টিপস’  নামে বাজারে ছাড়া হয়। নতুন ব্র্যান্ডের নামে ইংরেজি ‘কিউ’ অক্ষরটির মাধ্যমে ‘কোয়ালিটি’ বা মানসম্পন্ন এই বক্তব্যকে  বোঝানো হয়েছে। প্রথম দিকে এটি শিশুদের কান পরিষ্কার করা এবং পরবর্তীতে সকলের কান পরিষ্কারের কাজে সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। যদিও সারাবিশ্বে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞরা কটনবাড ব্যবহারকে বিশেষভাবে নিরুৎসাহিত করছেন তাতে এর ব্যবহার খুব একটা কমেনি। একমাত্র এটি ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট কানের সমস্যায় চূড়ান্তভাবে ভুক্তভোগীরা ছাড়া বাকিরা আগের মতোই কানে কটনবাড ব্যবহার করে চলেছেন। কটনবাডের ব্যবহার সমাজে এতটাই ব্যাপক যে অনেকে এটি ছাড়া দৈনন্দিন জীবন ভাবতে পারেন না।
 
যারা কটনবাড ব্যবহার করেন তাদের প্রায় সবাই পরম ভক্তিভরে কাজটি করে থাকেন। প্রথমত তারা মনে করেন কান পরিষ্কার করা স্বাস্থ্যকর্মেরই একটি অংশ। এটি করার মাধ্যমে তারা নিজেকে স্বাস্থ্য সচেতন হিসাবে উপস্থাপন করে থাকেন। এদের প্রায় সবাই মনে করেন কান পরিষ্কার করার জন্য কটনবাড খুবই যথার্থ নিরাপদ, জীবাণুমুক্ত ও আধুনিক একটি উপকরণ। একসময় যেখানে কান চুলকানোর জন্য মুরগীর পালক (ক্ষেত্র বিশেষে পবিত্রতার বিবেচনায় কবুতরের পালক), চুলের ক্লিপ, পেন্সিলের মাথা, টুথপিক, পানের বোঁটা, কচুর ডগা ইত্যাদি যা কিছু হাতের কাছে পাওয়া যেত তাই দিয়ে কান চুলকানো হতো, এখন সেখানে কটনবাডের ব্যবহার যেন বিজ্ঞানের আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। এই সব নানা কারণে কটনবাড খুবই সমাদৃত ও প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ হিসাবে পরিগণিত। অথচ এই কটনবাড কানে মলম দেয়ার কাছ ছাড়া আর কোন ভাল কাজে লাগে বলে মনে হয় না। বরং কটনবাড ব্যবহারে ক্ষতির পরিমানই বেশি। কানের বিভিন্ন ধরণের অস্বস্তি সৃষ্টি ও ইনফেকশন হওয়ার পেছনে কটনবাডের ভূমিকা রয়েছে। যারা নিয়মিত কটনবাড ব্যবহার করেন, তাদের কাছে কান সবসময়েই ভারী ভারী মনে হবে। এছাড়া কান চুলকাবে, কানে ব্যথা করবে বা কান কামড়াচ্ছে ইত্যাদি অভিযোগ সারাবছরই থাকবে যদি না কান চুলকানো বা কানে কটনবাড ব্যবহার বন্ধ করা হয়। যারা কটনবাড ব্যবহারে অভ্যস্ত তাদেরকে সহজে ট্ি ব্যবহার থেকে নিরস্ত করা যায় না। কারণ কটনবাড ব্যবহারে বর্হিকর্ণের ত্বক সামান্য পরিমানে হলেও ছুলে যায়। এতে কানে এক ধরণের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, কান সবসময় সুড়সুড় করে ও চুলকায়। এ অবস্থায় কানে চুলকানির উদ্রেক হয়। তখন অনেকের পক্ষেই কান না চুলকিয়ে থাকা যায় না। এ কারণে একবার কটনবাড ব্যবহারকারী সহজে কটনবাড ব্যবহার ছাড়তে পারে না। এছাড়া কটনবাড ব্যবহারে কানে ছত্রাক বা ফাংগাস সংক্রমণ হয়ে থাকে। কানে ফাংগাস হলে কান খুব চুলকায়, কান দিয়ে কষের মত ঝরে, কান ব্যথা করে, কান আংশিক বন্ধ হয়ে থাকে। ফাংগাস সংক্রমণের ব্যাপকতা অনুযায়ী উপসর্গের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। কানে ফাংগাস সংক্রমণ তীব্র হয়ে বর্হিকর্ণের পথকে প্রদাহযুক্ত করে ফেলে। এটি অত্যন্ত কষ্টকর একটি অবস্থা। এমনটি হলে কানে তীব্র ব্যথা হয়। কান স্পর্শ করলেই ব্যথা লাগে। একমাত্র ভুক্তভোগীরাই সেই কষ্ট অনুভব করেছেন। কটনবাড ব্যবহারে কানের পর্দা ছিদ্র হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বর্হিকর্ণের পথ আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। শিশুরা কটনবাডের ব্যবহার শেখে বড়দের ব্যবহার দেখে।

সারা দুনিয়া জুড়ে নাক নাক ও গলা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কান পরিষ্কার করার দরকার নেই। কাজেই কান পরিষ্কারের জন্য কটনবাড কেন, কোন উপকরণই অনুমোদন করেন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞরা। তাহলে কান কীভাবে পরিষ্কার থাকবে বা কান কীভাবে পরিষ্কার করব? এমন প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, কান নিজে থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়। খাবার গ্রহণ এবং কথা বলার সময় চোয়ালের নড়াচড়ায় বর্হিকর্ণের কানের মধ্যকার ওয়াক্স বা খোল বাইরের দিকে আসতে থাকে এবং বেরিয়ে যায়। কান পরিষ্কারের জন্য কটনবাড ব্যবহার করলে অধিকাংশ ময়লাই কানের ভিতরে চলে যায়। যেটুকু বেরিয়ে আসে তা খুবই সামান্য। যে ময়লাটুকু কটনবাডের ধাক্কায় ভিতরে চলে যায় তা আর নিজ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। এই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়ে সেই ময়লা বের করতে হয়।

কটনবাড কান পরিষ্কারের যেন বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসলেও এর প্রকৃত ব্যবহার লক্ষ করা যায় ল্যাবরেটরিতে ও কসমেটিক্স ব্যবহারের জন্য। কটনবাডের অন্য নাম কটন সোয়াব। কটন সোয়াবের কাঠিটি লম্বায় প্রায় ছয় ইঞ্চির মত। এর কাঠিটি তৈরি করা হয় প্রাকৃতিক উপাদানের কোন শলাকা থেকে। ল্যাবরেটরিতে কোন কিছু কালচার করার কাজে, ডিএনএ টেস্ট করার জন্য লালার নমুনা সংগ্রহের কাজসহ বিভিন্ন ড্রেসিংয়েও এর ব্যবহার রয়েছে। এইসব কাজে ব্যবহার করার জন্যই তাতে প্রাকৃতিক উপাদানের তৈরি শলাকা নেয়া হয়। যাতে করে জীবাণুমুক্ত করার জন্য অটোক্লেভ মেশিনে দিলে সেটি গলে কিংবা নষ্ট হয়ে না যায়। এ কারণে ল্যাবের কাজে ব্যবহৃত ‘কটনবাড’ প্রকৃতপক্ষে কটন সোয়াব হিসাবেই পরিচিত। আর এ দিকে অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত কটন বাডের ‘বাড’টি প্লাস্টিকের তৈরি। যা দিয়ে গোঁফে কলপ দেয়া কিংবা মেকআপে বিভিন্ন প্রসাধনী লাগানোর কাজে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সময়ের পরীক্ষায় কটনবাডের এইসব ব্যবহারগুলোই প্রকৃতপক্ষে গ্রহণযোগ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু যে উদ্দশ্যে এটি উদ্ভাবিত হয়েছিল তার বিপরীতে  যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক যুক্তি রয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, কানে কটন বাড ব্যবহার মানেই কানে রোগকে আমন্ত্রণ জানানর শামিল।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!